ঢাকা ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধ বিচারের দ্বার খুলল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৪০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে যুগযুগ ধরে বন্ধ রয়েছে প্রায় ২ হাজার মামলার বিচারকাজ। হত্যা, ধর্ষণ,  ডাকাতি, জালিয়াতি, প্রতারণাসহ গুরুতর নানা ফৌজদারি অপরাধে দায়েরকৃত এসব মামলার বিচারের দ্বার এবার খুলল। সর্বনিম্ন ১৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৪ বছর ধরে নিম্ন আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি নজরে আসে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের। এরপরই মামলার বিচার কার্যক্রম চালু করতে বিশেষ উদ্যোগ নেন তিনি। ঐ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাইকোর্টের ফৌজদারি শাখায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা প্রায় দুই হাজার মামলার তালিকা করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঐ তালিকা ধরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের তিনটি ডিভিশন বেঞ্চে নথি পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে অর্ধশত মামলা নিষ্পত্তি করেছেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা। নিষ্পত্তিকৃত কয়েকটি মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুই যুগ আগে হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করেছিল, তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলার বিচারকাজ চলতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকল না।

অভিযোগ গঠন থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নানা আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫৬১(ক) ধারায় এসব মামলা বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। ঐ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। যখন কোনো ফৌজদারি মামলার বিচারকাজ যুগযুগ ধরে বন্ধ থাকে, তখন বিচারপ্রার্থী জনগণ হতাশায় ভোগার পাশাপাশি বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে নিম্ন আদালতে মামলার থেমে থাকা বিচারকাজ পুনরায় চালু হবে। বিচারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। নিশ্চিত হবে ন্যায়বিচার। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে ন্যায়বিচার পাবেন বিচারপ্রার্থী জনগণ।

১৯৮৯ সালের ৩১ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে খুন হয়েছিলেন বিআইডিএসের তত্কালীন গবেষক সগিরা মোর্শেদ। সিআরপিসির ৫৬১(ক) ধারায় করা আবেদনে ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টের এক আদেশে ঐ হত্যা মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল ২৮ বছর। বিষয়টি নিয়ে ইত্তেফাকে শীর্ষ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপরই মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর থাকা স্থগিতাদেশ গত ২৯ জুন প্রত্যাহার করে নেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে ২০১০ সাল এবং এর পূর্বের বছরগুলোতে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হওয়া ফৌজদারি মামলার একটি তালিকা প্রস্তুতের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। সগিরা মোর্শেদ মামলার বিষয়ে হাইকোর্ট বলে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না। বিলম্বিত বিচার মানে বিচারকে অস্বীকারের নামান্তর।

যুগ যুগ ধরে স্থগিতের তালিকা

শুধু সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলাই নয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এ ধরনের গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের প্রায় ২ হাজার মামলার তালিকা করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ঐ তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে ২৭টি, ১৯৯৮ সালে ৭১টি, ১৯৯৯ সালে ২৫৩টি, ২০০০ সালে ৩৪০টি, ২০০১ সালে ২৮৩টি, ২০০২ সালে ১১২টি, ২০০৩ সালে ২৯৫টি, ২০০৪ সালে ৩৭০টি, ২০০৫ সালে ১১৯টি, ২০০৬ সালে ১টি এবং ২০০৭ সালের ২০টি মামলার বিচারকাজের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এখন তালিকা ধরে এসব মামলা বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম; বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫৬১(ক) ধারায় কতগুলো ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে, সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ অফিসার মো. মোছাদ্দেক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা করে আদালত যথাযথ আদেশ প্রদান করছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকায় হয়তো এখন অনেক মামলার সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি অনেক আসামিও হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। যদি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্তরা কতটা ন্যায়বিচার পাবেন, সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বন্ধ বিচারের দ্বার খুলল

আপডেট টাইম : ০৯:৪৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশে যুগযুগ ধরে বন্ধ রয়েছে প্রায় ২ হাজার মামলার বিচারকাজ। হত্যা, ধর্ষণ,  ডাকাতি, জালিয়াতি, প্রতারণাসহ গুরুতর নানা ফৌজদারি অপরাধে দায়েরকৃত এসব মামলার বিচারের দ্বার এবার খুলল। সর্বনিম্ন ১৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২৪ বছর ধরে নিম্ন আদালতে এসব মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি নজরে আসে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের। এরপরই মামলার বিচার কার্যক্রম চালু করতে বিশেষ উদ্যোগ নেন তিনি। ঐ উদ্যোগের অংশ হিসেবে হাইকোর্টের ফৌজদারি শাখায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা প্রায় দুই হাজার মামলার তালিকা করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঐ তালিকা ধরে মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের তিনটি ডিভিশন বেঞ্চে নথি পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে অর্ধশত মামলা নিষ্পত্তি করেছেন সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারপতিরা। নিষ্পত্তিকৃত কয়েকটি মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুই যুগ আগে হাইকোর্ট যে স্থগিতাদেশ ও রুল জারি করেছিল, তা খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে নিম্ন আদালতে মামলার বিচারকাজ চলতে আর কোনো আইনগত বাধা থাকল না।

অভিযোগ গঠন থেকে শুরু করে নিম্ন আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন নানা আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫৬১(ক) ধারায় এসব মামলা বাতিলের আবেদন করেন আসামিরা। ঐ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল জারি করে। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে রুল শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিনউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। যখন কোনো ফৌজদারি মামলার বিচারকাজ যুগযুগ ধরে বন্ধ থাকে, তখন বিচারপ্রার্থী জনগণ হতাশায় ভোগার পাশাপাশি বিচার বিভাগের ওপর আস্থা হারান। তিনি বলেন, এই উদ্যোগের ফলে নিম্ন আদালতে মামলার থেমে থাকা বিচারকাজ পুনরায় চালু হবে। বিচারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। নিশ্চিত হবে ন্যায়বিচার। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এতে ন্যায়বিচার পাবেন বিচারপ্রার্থী জনগণ।

১৯৮৯ সালের ৩১ জুলাই সিদ্ধেশ্বরীতে খুন হয়েছিলেন বিআইডিএসের তত্কালীন গবেষক সগিরা মোর্শেদ। সিআরপিসির ৫৬১(ক) ধারায় করা আবেদনে ১৯৯৩ সালে হাইকোর্টের এক আদেশে ঐ হত্যা মামলার বিচারকাজ স্থগিত ছিল ২৮ বছর। বিষয়টি নিয়ে ইত্তেফাকে শীর্ষ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপরই মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর থাকা স্থগিতাদেশ গত ২৯ জুন প্রত্যাহার করে নেয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে ২০১০ সাল এবং এর পূর্বের বছরগুলোতে হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত হওয়া ফৌজদারি মামলার একটি তালিকা প্রস্তুতের জন্য সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়। সগিরা মোর্শেদ মামলার বিষয়ে হাইকোর্ট বলে, রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না। বিলম্বিত বিচার মানে বিচারকে অস্বীকারের নামান্তর।

যুগ যুগ ধরে স্থগিতের তালিকা

শুধু সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলাই নয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এ ধরনের গুরুতর ফৌজদারি অপরাধের প্রায় ২ হাজার মামলার তালিকা করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ঐ তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯৭ সালে ২৭টি, ১৯৯৮ সালে ৭১টি, ১৯৯৯ সালে ২৫৩টি, ২০০০ সালে ৩৪০টি, ২০০১ সালে ২৮৩টি, ২০০২ সালে ১১২টি, ২০০৩ সালে ২৯৫টি, ২০০৪ সালে ৩৭০টি, ২০০৫ সালে ১১৯টি, ২০০৬ সালে ১টি এবং ২০০৭ সালের ২০টি মামলার বিচারকাজের ওপর হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এখন তালিকা ধরে এসব মামলা বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম; বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৫৬১(ক) ধারায় কতগুলো ফৌজদারি মামলার বিচার কার্যক্রম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে, সেই তালিকা প্রস্তুতের কাজ করছে প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ অফিসার মো. মোছাদ্দেক হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, মামলাগুলোর নথি পর্যালোচনা করে আদালত যথাযথ আদেশ প্রদান করছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকায় হয়তো এখন অনেক মামলার সাক্ষী খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি অনেক আসামিও হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। যদি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্তরা কতটা ন্যায়বিচার পাবেন, সেটা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।