রাজধানীর জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে মিরপুর থানা অন্যতম। নানা পেশা আর হরেক রকম মানুষের বসবাস এখানে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশের কর্মপরিকল্পনায় মিরপুরকে ঘিরে সব সময়ই থাকে বিশেষ পরিকল্পনা।
মাস তিনেক আগে থানাটির নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব নিয়েছেন ভূঁইয়া মাহবুব হাসান। এর আগে তিনি ছিলেন বনানী থানার দায়িত্বে। ঢাকার ডেমরা, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নীলফামারীর একটি থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এরপর জাতিসংঘ মিশন ঘুরে বনানী থানায় ওসির দায়িত্বে ছিলেন। এরপর বদলি হয়ে চলতি বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরে আসেন তিনি।
পুরো মিরপুরকে ঘিরে অপরাধপ্রবণতা কমাতে নিয়েছেন বিশেষ পরিকল্পনা। মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অবৈধ সব দোকানপাট উচ্ছেদ, নামে-বেনামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি ও চাঁদাবাজি বন্ধসহ থানা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা হয়েছে ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসানের। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি আমি ভালো আছি। আপনার সঙ্গে ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। তাই সময়ই দেয়া যাচ্ছিল না।
জাগো নিউজ : সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি হামলা, খুন, বিদেশি ও পুলিশ হত্যাসহ নানা কারণে অস্থিরতা চলছিল। এসব কারণে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আপনার এলাকায় শান্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জন-আতঙ্ক কমাতে কী ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন আপনি?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : নানা কারণে ডিএমপির অন্যান্য থানার মধ্যে মিরপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ থানা। আমরা সাধ্যমতো জনবল মোতায়েন করে থাকি। পুলিশের পাশাপাশি আনসার ব্যাটালিয়ন ও বিশেষ আনসার সদস্যদেরও মোতায়েন করা হয়। আমি আসার পর এখন পর্যন্ত বড় কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। তাই আশা করছি এখানে জন-আতঙ্ক কিংবা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার অবনতি হবে না।
জাগো নিউজ : হামলার কারণে কোনো চাপবোধ করছেন কিনা?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : নাহ, চাপবোধ করবো কেন? আমি চাপে থাকলে তো সাধারণ মানুষ ভয় পাবে। সাধ্য মতো সব সময়ই আমরা নিরাপত্তা জোরদারে নজর রাখছি। পুরো মিরপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকায় তল্লাশি চৌকি কিংবা চেকপোস্ট রয়েছে কিনা?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : হ্যা, আছে। স্থায়ী চেকপোস্ট বলতে জার্মান-পলিটেকনিক্যালের সামনে। এছাড়াও কিন্তু আমাদের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহল দেয়। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি রাখি। প্রয়োজন পড়লে অস্থায়ী চেকপোস্টও বসানো হয়।
OC
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী আপনার থানা কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : অপরাধ মানচিত্র অনুযায়ী পুরো মিরপুরকেই আপনি ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধপ্রবণ একটি এলাকা বলতে পারেন। কারণ এখানে হরেক রকম মানুষের বসবাস। ভাসমান অপরাধীদের বিচরণ এখানে খুব বেশি। প্রতিদিন থানায় মামলা হয় গড়ে ১০টি। জিডি গড়ে ১০০টি। সে অনুযায়ী আমাদের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। তবে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের অঘটন ঘটেনি।
জাগো নিউজ : যে পরিমাণ জনবল আছে তা দিয়ে কি পুরো থানা এলাকার নিরাপত্তা, মামলা ও জিডির তদন্ত সময় মতো কাজ সম্পাদন সম্ভব?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : না সম্ভব না। কারণ মামলা ও জিডির পরিমাণের তুলনায় জনবল কমই বলতে পারেন। আমরা পরিকল্পনা করে কাজ করার চেষ্টা করছি। তাতে সফলতাও আসছে। তবে জনবল বাড়ানো দরকার। অনেক সময়ই সব কিছু খুব ভালোভাবে করা সম্ভব হয় না।
জাগো নিউজ : পুলিশের নাম করে কিছু সোর্স কিংবা কিছু অসাধু ব্যক্তি সোর্স পরিচয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে। এ ব্যাপারে আপনি কিছু জানেন কিনা? এ ব্যাপারে আপনি কি ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : সোর্স পুলিশের প্রয়োজনে। তদন্ত কাজ ও আসামি ধরার জন্যই মূলত: সোর্সের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে। আপনি যেটা বললেন, এ ধরণের অভিযোগ আমি পেয়েছি, তদন্তও হয়েছে। তাদের মধ্যে ভুয়া সোর্স পরিচয়ে প্রতারণাই বেশি। ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। বিষয়টি অবশ্যই আমার নলেজে আছে।
OC
জাগো নিউজ : বাউল শিল্পীদের গাবতলী মাজার ও এর আশপাশ এলাকায় গানের স্টুডিও বসতে দিচ্ছে না পুলিশ। অথচ পুলিশেরই সহযোগিতায় আলাদাভাবে টাকার বিনিময়ে স্টুডিও বসছে। সেখানে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। মিরপুর থানার কর্মকর্তাদের নামেও এমন অভিযোগ মিলেছে।
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : ভাই, মাজার আমার এলাকার মধ্যে না। আর আমার পুলিশ থানার বাইরের কোনো ঘটনায় জড়ায় না। কেউ গেলে সে দায়-দায়িত্ব তার ব্যক্তিগত। মাজার চাঁদাবাজিতে আমার থানা পুলিশের সম্পর্কও নেই।
জাগো নিউজ : ছোট বেলায় সবাই কিছু না কিছু স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে উঠে। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে স্বপ্নেও আসে পরিবর্তন। আপনার জীবনের লক্ষ্য কি ঠিক করেছিলেন?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : অন্য অনেকের মতো আমিও হতে চেয়েছিলাম ডাক্তার। তবে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দেশ ও দেশের মানুষকে সেবা দেয়ার মতো কোনো চাকরি করবো। আমার মনে হয় তা আমি পেয়েছি। এই চাকরিটা পেয়ে আমি ভীষণ উপভোগ করি।
জাগো নিউজ : ওসি’র দায়িত্ব অনেক। ব্যস্ততাও কম নয়। সব মিলিয়ে কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে কিভাবে সময় দেন?
ভূঁইয়া মাহবুব হাসান : গত ৫দিন আমি বাসায় যাই না। থানা ভবনের উপরেই থাকছি কাজের কারণে। আমার পরিবার থাকে ফার্মগেটে। পরিবার আমার সেবামূলক কাজের মানসিকতাকে উৎসাহিতই করে আসছে। নইলে হয়তো পুলিশের চাকরি করা সম্ভব হতো না।