ঢাকা ০২:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতির স্বপ্ন এখন বাস্তব হাওরেও গাড়ি চলে সারি সারি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৩:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৬৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দু’পাশে বিস্তীর্ণ হাওর। তার মাঝে পিচঢালা সড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে সারি সারি গাড়ি। নিকট অতীতেও যা কেউ ভাবেনি, তা-ই আজ হয়ে উঠেছে বাস্তব। কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদে চার চাকার আধুনিক গাড়ি চলবে- এ ছিল কল্পনা। সময়ের বাস্তবতায় তা আজ হয়েছে সত্যি। ইটনা-বড়িবাড়ি-চামড়াঘাট সড়কের ধনু নদীতে চামড়াঘাট, বড়িবাড়ি ও বাউলাই নদীতে বলদা ফেরি সার্ভিস; কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়কের ধনু নদী এবং বালিখলা ও বাউলাই নদীতে শান্তিপুর ফেরি সার্ভিসের পাঁচটি ফেরি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো হাওর জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন দিগন্ত। উজান এলাকার যে কোনো জনপদ থেকে ভারী যানবাহন নিয়ে জেলার গভীর হাওরের চারটি উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলো থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাশের জেলা-উপজেলায় সড়কপথে চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একক প্রচেষ্টায়।

হাওরে চার চাকার গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, হাওরের মানুষ আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমার

স্বপ্ন ছিল, হাওর এলাকায় সড়ক গড়ে তোলা; কিন্তু হাওরের মানুষ আমার এ স্বপ্নের কথা শুনে হাসাহাসি করত। তাদের ধারণা ছিল, হাওরে কখনও সড়ক নির্মাণ সম্ভব নয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবও ঠাট্টা-মশকরা করত। তাদের সব ধারণাকে পাশে ঠেলে প্রথমে আমি হাওর এলাকায় ডুবো সড়ক নির্মাণ করি। একপর্যায়ে ভাবতাম, পুরো হাওর জনপদে উড়াল সেতুর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কিনা। পরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে অল-ওয়েদার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করি। আজ মানুষ অবাক বিস্ময়ে সে প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন ও আনন্দ আর নেই।

গত ২৬ জানুয়ারি করিমগঞ্জের বালিখলায় নাগচিনি নদীতে ফেরি চালুর মাধ্যমে হাওরবাসীর সড়ক যোগাযোগের প্রতীক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে। জেলা সদর হয়ে সারাদেশের সঙ্গে হাওর উপজেলা ইটনা ও মিঠামইনের সড়কপথে উদ্বোধন করা হয়েছে পাঁচটি ফেরি সার্ভিস। এ উপলক্ষে বালিখলায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু এবং কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এসব ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। এ সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. নাজমুল ইসলাম সোপান, কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বালিখলা ফেরি সার্ভিস ব্যবহার করে দুই এমপি মুজিবুল হক চুন্নু ও রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা গাড়িবহর নিয়ে ধনু নদী পার হন।

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, এক সময় জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা ছিল হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম; কিন্তু রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় পাল্টেছে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তিন উপজেলাকে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সারাবছর চলাচলের উপযোগী পাকা সড়ক।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, হাওর একসময় ছিল চরম অবহেলিত। গাড়ি চালিয়ে ইটনা-মিঠামইন কিংবা অষ্টগ্রামে যাওয়ার কথা কোনোদিন কল্পনাও করা যায়নি। হাওরে ব্যাপক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘হাওরে বর্ষায় নাও আর শুকনায় পাও’ এখন অতীত। বাস্তবতা হলো, আজকে গাড়ি চালিয়ে আমি আমার তিনটি নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারি। হাওরবাসী এখন আর অবহেলিত নয়। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, হাওরের আরও বেশি উন্নয়ন হবে।

গত বুধবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান গাড়ি করে ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা পরিদর্শন করে সমকালকে বলেন, আগে নৌকায় করে দুই উপজেলায় যেতে দু’দিন সময় লাগত। এখন সড়কপথে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঘুরে এসেছি।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে সারাবছর চলাচল উপযোগী ৪৭ কিলোমিটার উঁচু পাকা সড়ক ও ৩৫ কিলোমিটার সাব-মার্সিবল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ২২টি পাকা সেতু, ১০৪টি কালভার্টসহ বিভিন্ন নদীতে পাঁচটি ফেরি চালুর মাধ্যমে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রাষ্ট্রপতির স্বপ্ন এখন বাস্তব হাওরেও গাড়ি চলে সারি সারি

আপডেট টাইম : ১১:৪৩:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দু’পাশে বিস্তীর্ণ হাওর। তার মাঝে পিচঢালা সড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে সারি সারি গাড়ি। নিকট অতীতেও যা কেউ ভাবেনি, তা-ই আজ হয়ে উঠেছে বাস্তব। কিশোরগঞ্জের হাওর জনপদে চার চাকার আধুনিক গাড়ি চলবে- এ ছিল কল্পনা। সময়ের বাস্তবতায় তা আজ হয়েছে সত্যি। ইটনা-বড়িবাড়ি-চামড়াঘাট সড়কের ধনু নদীতে চামড়াঘাট, বড়িবাড়ি ও বাউলাই নদীতে বলদা ফেরি সার্ভিস; কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ-চামড়াঘাট-মিঠামইন সড়কের ধনু নদী এবং বালিখলা ও বাউলাই নদীতে শান্তিপুর ফেরি সার্ভিসের পাঁচটি ফেরি চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো হাওর জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে নতুন দিগন্ত। উজান এলাকার যে কোনো জনপদ থেকে ভারী যানবাহন নিয়ে জেলার গভীর হাওরের চারটি উপজেলাসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলো থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও পাশের জেলা-উপজেলায় সড়কপথে চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের একক প্রচেষ্টায়।

হাওরে চার চাকার গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে সমকালকে বলেন, হাওরের মানুষ আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। আমার

স্বপ্ন ছিল, হাওর এলাকায় সড়ক গড়ে তোলা; কিন্তু হাওরের মানুষ আমার এ স্বপ্নের কথা শুনে হাসাহাসি করত। তাদের ধারণা ছিল, হাওরে কখনও সড়ক নির্মাণ সম্ভব নয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবও ঠাট্টা-মশকরা করত। তাদের সব ধারণাকে পাশে ঠেলে প্রথমে আমি হাওর এলাকায় ডুবো সড়ক নির্মাণ করি। একপর্যায়ে ভাবতাম, পুরো হাওর জনপদে উড়াল সেতুর মাধ্যমে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় কিনা। পরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে অল-ওয়েদার রোড নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করি। আজ মানুষ অবাক বিস্ময়ে সে প্রকল্পের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। আমার রাজনৈতিক জীবনে এর চেয়ে বড় অর্জন ও আনন্দ আর নেই।

গত ২৬ জানুয়ারি করিমগঞ্জের বালিখলায় নাগচিনি নদীতে ফেরি চালুর মাধ্যমে হাওরবাসীর সড়ক যোগাযোগের প্রতীক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে। জেলা সদর হয়ে সারাদেশের সঙ্গে হাওর উপজেলা ইটনা ও মিঠামইনের সড়কপথে উদ্বোধন করা হয়েছে পাঁচটি ফেরি সার্ভিস। এ উপলক্ষে বালিখলায় এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু এবং কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এসব ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করেন। এ সময় কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. নাজমুল ইসলাম সোপান, কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল আলম, মিঠামইন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আছিয়া আলম, ইটনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বালিখলা ফেরি সার্ভিস ব্যবহার করে দুই এমপি মুজিবুল হক চুন্নু ও রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা গাড়িবহর নিয়ে ধনু নদী পার হন।

কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, এক সময় জেলার সবচেয়ে দুর্গম এলাকা ছিল হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম; কিন্তু রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছা ও প্রচেষ্টায় পাল্টেছে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তিন উপজেলাকে সংযুক্ত করে তৈরি করা হয়েছে সারাবছর চলাচলের উপযোগী পাকা সড়ক।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, হাওর একসময় ছিল চরম অবহেলিত। গাড়ি চালিয়ে ইটনা-মিঠামইন কিংবা অষ্টগ্রামে যাওয়ার কথা কোনোদিন কল্পনাও করা যায়নি। হাওরে ব্যাপক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ‘হাওরে বর্ষায় নাও আর শুকনায় পাও’ এখন অতীত। বাস্তবতা হলো, আজকে গাড়ি চালিয়ে আমি আমার তিনটি নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারি। হাওরবাসী এখন আর অবহেলিত নয়। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, হাওরের আরও বেশি উন্নয়ন হবে।

গত বুধবার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান গাড়ি করে ইটনা ও মিঠামইন উপজেলা পরিদর্শন করে সমকালকে বলেন, আগে নৌকায় করে দুই উপজেলায় যেতে দু’দিন সময় লাগত। এখন সড়কপথে মাত্র তিন ঘণ্টায় ঘুরে এসেছি।

জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীন এক হাজার ২৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামে সারাবছর চলাচল উপযোগী ৪৭ কিলোমিটার উঁচু পাকা সড়ক ও ৩৫ কিলোমিটার সাব-মার্সিবল সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ২২টি পাকা সেতু, ১০৪টি কালভার্টসহ বিভিন্ন নদীতে পাঁচটি ফেরি চালুর মাধ্যমে জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হয়েছে।