ঢাকা ০১:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হতাশা নিয়ে চলছে ধান কাটা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৮:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫
  • ৪২৭ বার

ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে পুরোদমে ধান কাটার মহোৎসব। ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের দাম আশানারূপ না পাওয়ায় হতাশায় রয়েছেন কৃষক। এ বছর ধান প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি ) ১২৫০-১৩০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচটি উপজেলায় আমন মৌসুমে এক লক্ষ ২৯ হাজার ৭শ ১৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে এক লক্ষ ৩৪ হাজার ৫ শ ২৮ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। দেশীয় উদ্ভাবিত স্বল্প জীবন কালের ধান বিনা-৭, সুমন, স্বর্ন, ব্রি ধান ৩৩ ও বিভিন্ন প্রকার উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে।

অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ধানের দাম অনেক কম বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এখনো কোনো অটো রাইস মিল বা সরকার ধান সংগ্রহ করছে না তাই বাজারের এই অবস্থা মনে করছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি জাগো নিউজকে বলেন, এ মৌসুমে চার বিঘা জমিতে বিনা-৭ জাতের ধানের চাষ করেছি। কাটামারি শেষ। বিঘা প্রতি ২২-২৪ মণ হারে ফলন হয়েছে। ১২০০-১২৪০ টাকা দরে বস্তা বিক্রি করছি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

সালন্দর এলাকার মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচ বিঘায় গুটিস্বর্ণা ধানের আবাদ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ধানের ফলন পেয়েছি ২১ মণ। আর খরচ হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। ধান বেচে দেখা যাচ্ছে উৎপাদন খরচ আর ধান বিক্রির টাকা সমানে সমান। ধান বেচে কোনো লাভের মুখ দেখলাম না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকঁচা ইউনিয়ন এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ৩ একর জমিতে স্বর্ণ ধানের চাষ করেছি। শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে (খড়সহ ধান) শুকাতে দিয়েছি জমিতে। দিন কয়েক পরে ধান বাড়িতে নিয়ে যাব আর জমিতে আলুর চাষ করবো।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাজারে স্বর্ণ ধান প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি ) ১৩০০-১৩৬০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ধানের যে দাম আছে সে দামে ধান বিক্রি করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।

এবার চুক্তিবদ্ধ ও বর্গাচাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত। চুক্তিবদ্ধ ও বর্গাচাষিদের ধান কাটা ও মাড়াই শেষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান অথবা সমপরিমাণ টাকা দিতে হয় গৃহস্থকে। এবার গৃহস্থের পাওনা মেটানোর পর নিজের পুঁজিই থাকছে না।

রায়পুর এলাকার চুক্তিবদ্ধ চাষি আইনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমি দুই বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে গুটিস্বর্ণা ধানের আবাদ করেছি। ধান বিক্রি করে কোনো লাভ হয়নি এবার। আমার পকেট থেকে দিতে হচ্ছে গৃহস্থকে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান চাষিরা ভালো ফলন পেয়েছেন। বর্তমানে ধানের দাম কিছুটা কম হলেও কয়েকদিন পরে আশানারূপ দাম পাবো বলে আশা করছি।

আমন ধানের বাজারটা ব্যবসায়ী, পাইকার ও ফড়িয়া নির্ভর। কাটা-মাড়াইয়ের শুরু থেকেই ধানের বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে উৎপাদকেরা তাদের কাছে জিম্মি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হতাশা নিয়ে চলছে ধান কাটা

আপডেট টাইম : ১১:৪৮:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৫

ঠাকুরগাঁওয়ে শুরু হয়েছে পুরোদমে ধান কাটার মহোৎসব। ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের দাম আশানারূপ না পাওয়ায় হতাশায় রয়েছেন কৃষক। এ বছর ধান প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি ) ১২৫০-১৩০০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচটি উপজেলায় আমন মৌসুমে এক লক্ষ ২৯ হাজার ৭শ ১৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। আবাদ হয়েছে এক লক্ষ ৩৪ হাজার ৫ শ ২৮ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে। দেশীয় উদ্ভাবিত স্বল্প জীবন কালের ধান বিনা-৭, সুমন, স্বর্ন, ব্রি ধান ৩৩ ও বিভিন্ন প্রকার উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে।

অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ধানের দাম অনেক কম বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এখনো কোনো অটো রাইস মিল বা সরকার ধান সংগ্রহ করছে না তাই বাজারের এই অবস্থা মনে করছেন কৃষকরা।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গনি জাগো নিউজকে বলেন, এ মৌসুমে চার বিঘা জমিতে বিনা-৭ জাতের ধানের চাষ করেছি। কাটামারি শেষ। বিঘা প্রতি ২২-২৪ মণ হারে ফলন হয়েছে। ১২০০-১২৪০ টাকা দরে বস্তা বিক্রি করছি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

সালন্দর এলাকার মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচ বিঘায় গুটিস্বর্ণা ধানের আবাদ করেছিলাম। বিঘা প্রতি ধানের ফলন পেয়েছি ২১ মণ। আর খরচ হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। ধান বেচে দেখা যাচ্ছে উৎপাদন খরচ আর ধান বিক্রির টাকা সমানে সমান। ধান বেচে কোনো লাভের মুখ দেখলাম না।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকঁচা ইউনিয়ন এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ৩ একর জমিতে স্বর্ণ ধানের চাষ করেছি। শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে (খড়সহ ধান) শুকাতে দিয়েছি জমিতে। দিন কয়েক পরে ধান বাড়িতে নিয়ে যাব আর জমিতে আলুর চাষ করবো।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বাজারে স্বর্ণ ধান প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি ) ১৩০০-১৩৬০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ধানের যে দাম আছে সে দামে ধান বিক্রি করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব।

এবার চুক্তিবদ্ধ ও বর্গাচাষিরাও ক্ষতিগ্রস্ত। চুক্তিবদ্ধ ও বর্গাচাষিদের ধান কাটা ও মাড়াই শেষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান অথবা সমপরিমাণ টাকা দিতে হয় গৃহস্থকে। এবার গৃহস্থের পাওনা মেটানোর পর নিজের পুঁজিই থাকছে না।

রায়পুর এলাকার চুক্তিবদ্ধ চাষি আইনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, আমি দুই বিঘা জমি চুক্তিতে নিয়ে গুটিস্বর্ণা ধানের আবাদ করেছি। ধান বিক্রি করে কোনো লাভ হয়নি এবার। আমার পকেট থেকে দিতে হচ্ছে গৃহস্থকে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী খান জাগো নিউজকে বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান চাষিরা ভালো ফলন পেয়েছেন। বর্তমানে ধানের দাম কিছুটা কম হলেও কয়েকদিন পরে আশানারূপ দাম পাবো বলে আশা করছি।

আমন ধানের বাজারটা ব্যবসায়ী, পাইকার ও ফড়িয়া নির্ভর। কাটা-মাড়াইয়ের শুরু থেকেই ধানের বাজার তারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। ফলে উৎপাদকেরা তাদের কাছে জিম্মি।