আজ আ. লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হচ্ছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আজ শনিবার প্রার্থী চূড়ান্ত করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর পদেও প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আজ। তবে জাতীয় পার্টি এ বিষয়ে আরো সময় নেবে।

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ তেমন কোনো নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম তোলেননি। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই করতে চাপে পড়তে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের। দলটির গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন নেতা এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।

মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ও সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যাঁরা বিতর্কিত এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিতর্কের ঊর্ধ্বে যাঁরা আছেন, যাঁদের কোনো অপকর্মের রেকর্ড নেই, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। আমাদের নেত্রীরও (শেখ হাসিনা) ইচ্ছা ক্লিন ইমেজের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার।’ গতকাল শুক্রবার সকালে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হবে। সেখানে দুই সিটির মেয়র এবং ১৭২ জন কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত হবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ৯ জন এবং কাউন্সিলর পদে ৪৭৩ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে সাতজন এবং কাউন্সিলর পদে ৩৩৬ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আর আজ (গতকাল শুক্রবার) উত্তরের কাউন্সিলর পদে ৭০ জন এবং দক্ষিণে ৭২ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।’

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রগুলো জানায়, ডিএনসিসির বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম ছাড়া আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তবে ডিএসসিসির বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে এবং ধানমণ্ডি-হাজারীবাগ এলাকার সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু, লালবাগ এলাকার সংসদ সদস্য হাজি সেলিম ডিএসসিসিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ফলে দক্ষিণে মেয়র পদে প্রার্থী বাছাই করা নিয়ে চাপে রয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে গত বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে মেয়র পদে ২৫ হাজার টাকা করে মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়।

বিএনপির তিন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা : মেয়র পদে দলের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির তিন নেতা। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডিএনসিসি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী তাবিথ আওয়াল এবং ডিএসসিসি মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ইশরাক হোসেন একসঙ্গে আসেন। প্রথমে তাবিথ আওয়াল এবং পরে ইশরাক হোসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর ডিএনসিসিতে মেয়র পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন।

তাবিথ ও ইশরাক মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, এস এম জাহাঙ্গীরসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী উপস্থিত থাকলেও রিপনের সঙ্গে ছিলেন হাতে গোনা কয়েকজন।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুসারীদের নিয়ে ইশরাক হোসেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল করেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভা শেষে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কথা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিএসসিসিতে ইশরাক হোসেন বিএনপির একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ধানের শীষের টিকিট পাওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। আর ডিএনসিসিতে বিএনপির দুইজন মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় কে দলের সমর্থন পাচ্ছেন তা নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়ন বোর্ডের সভা পর্যন্ত। তবে তাবিথ আউয়ালের সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কাউন্সিলর পদে বিএনপির মনোনয়ন চান ৪৭৬ জন : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির হয়ে কাউন্সিলর পদে অংশ নিতে গত দুই দিনে ৪৭৬টি ফরম জমা দিয়েছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। আজ শনিবার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাত্কার নেওয়া হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সাইদুর রহমান মিন্টু জানান, ডিএসসিসি নির্বাচনে ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর দুই দিনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ২২০টি এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৬০টি। সব মিলিয়ে ডিএসসিসিতে কাউন্সিলর পদে ফরম বিক্রি হয়েছে ২৮০টি, জমাও হয়েছে ২৮০টি।

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের দপ্তর সম্পাদক এ বি এম এ রাজ্জাক জানান, ডিএনসিসি নির্বাচনে দুই দিনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ফরম বিক্রি হয় ১৬২টি, নারীদের জন্য সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে বিক্রি হয় ৩৪টি। মোট ১৯৬টি বিক্রি ফরমের সবগুলো জমা পড়ে।

বিএনপি প্রার্থী গ্রেপ্তার, মহাসচিবের উদ্বেগ : ডিএসসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বপন আসন্ন ডিএসসিসি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের মনোনয়ন ফরম ক্রয়ের পর তাঁর বাসার সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব স্বপনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

মেয়র পদে জাপার প্রার্থী ঘোষণা ৩০ ডিসেম্বর : জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। আজ ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির নবম জাতীয় সম্মেলনের কারণে সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যস্ত থাকায় প্রার্থীর নাম ঘোষণা পিছিয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর ডিএনসিসি এবং ২৬ ডিসেম্বর ডিএসসিসির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছে। ডিএনসিসিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) কামরুল ইসলাম একাই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ডিএসসিসিতে মেয়র পদে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন ও হাজি সাইফুদ্দিন মিলন দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জাতীয় সম্মেলনের কারণে ব্যস্ত আছি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর আমরা মেয়র প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করব। কাউন্সিলর পদে আমরা প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী দেব।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচন জোটগতভাবে হবে কি না সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো আলোচনা হয়নি।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর