ঢাকা ০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতে সরিষার তেল নাকি লোশন আসলে কোনটির জরুরি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৩৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত এলেই সারা শরীরে খসখসে ও টান টান অনুভব হয়। আর এর থেকে রক্ষ পেতেই সরিষার তেল বা লোশন ব্যবহার করেন সবাই। কিন্তু কোনটির ব্যবহার আসলে সঠিক তা জানা জরুরি।

গ্রাম-বাংলার চিরপরিচিত একটি দৃশ্য হচ্ছে গোসল করা ও বাচ্চাদের রোদে রেখে শরীরে সরিষার তেল মাখানো। তবে এই সরিষার তেল মাখার ব্যাপারটি আসলেই কি শরীরের জন্য উপকারী?

এই বিষয় নিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভালো মন্দ দুই রকমই ব্যাখ্যা রয়েছে। অনেক চিকিৎসক মনে করেন গোসল করা হয় শরীরকে পরিষ্কার করার জন্য। আর তেল দেয়া হয় ত্বককে নরম রাখার জন্য। গোসলের আগে তেল মেখে গোসল করলে দুটোর কোনোটাই হয় না। গোসলের পর সরিষার তেল নয় লোশন লাগাতে হবে। সরিষার তেল ঝাঁজালো যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
তবে সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেল শিশু ও বয়স্ক সবার ত্বকের জন্যই উপকারী। বিশেষ করে শীতকালে এই তেল ব্যবহারের ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের জিজান জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসক ও কমিউনিটি হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী সভাপতি ডাক্তার খন্দকার মো. আনোয়ারুল হক বলেন, শিশুদের শরীরে সরিষার তেলের ব্যবহার শত বছরের পুরনো। এ নিয়ে নানা সময় গবেষণা হয়েছে। অনেকে মনে করেন সরিষার তেল ত্বকের জন্য উপকারী নয়। এর একটি কারণ হতে পারে যে, অধিকাংশ গবেষণাই হয়েছে ইউরোপ আমেরিকাভিত্তিক। যেখানে সরিষার তেলের কোনো ব্যবহারই নেই। সেসব দেশে এখনো সরিষার তেল ত্বকে ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়া হয় না। আবার আমাদের দেশে যেহেতু অনেক আগে থেকেই এই তেল সহজলভ্য তাই মনে করা হয়, হাতের কাছে ছিল বলেই তা ত্বকের জন্য ব্যবহারের প্রচলন হয়।

ডা. আনোয়ার বলেন, সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সরিষার তেল ত্বকের জন্য বা খাওয়ার জন্য উপকারী। কারণ সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে মনো-স্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এই তেলে ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই রান্নায় এই তেল ব্যবহার হলে হার্ট ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। শিশুদের রোদে বসিয়ে সরিষার তেল মাখালে তা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, যদি পর্যাপ্ত রোদ না থাকে তাহলে সরিষার তেল নয়, বাজারে প্রচলিত লোশন দিতে হবে। তবে শিশু বা বয়স্ক সবার জন্য সরিষার তেল মুখে দেয়া যাবে না।

সম্প্রতি বিভিন্ন ভোজ্য তেলের ওপর আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, সরিষার তেলের ওষুধি গুণাগুণ প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও। সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকে। এই তেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি ত্বকের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে।

শীতকালে অনেকেরই পা ও ঠোঁট ফেটে যায়। সেক্ষেত্রেও সরিষার তেল খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে বলে জানান এই চিকিৎসক। এছাড়া সরিষার তেলের সাথে রসুন গরম পায়ের নিচে লাগালে অনেক ঠান্ডাজনিত রোগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শীতে সরিষার তেল নাকি লোশন আসলে কোনটির জরুরি

আপডেট টাইম : ০২:০৮:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীত এলেই সারা শরীরে খসখসে ও টান টান অনুভব হয়। আর এর থেকে রক্ষ পেতেই সরিষার তেল বা লোশন ব্যবহার করেন সবাই। কিন্তু কোনটির ব্যবহার আসলে সঠিক তা জানা জরুরি।

গ্রাম-বাংলার চিরপরিচিত একটি দৃশ্য হচ্ছে গোসল করা ও বাচ্চাদের রোদে রেখে শরীরে সরিষার তেল মাখানো। তবে এই সরিষার তেল মাখার ব্যাপারটি আসলেই কি শরীরের জন্য উপকারী?

এই বিষয় নিয়ে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভালো মন্দ দুই রকমই ব্যাখ্যা রয়েছে। অনেক চিকিৎসক মনে করেন গোসল করা হয় শরীরকে পরিষ্কার করার জন্য। আর তেল দেয়া হয় ত্বককে নরম রাখার জন্য। গোসলের আগে তেল মেখে গোসল করলে দুটোর কোনোটাই হয় না। গোসলের পর সরিষার তেল নয় লোশন লাগাতে হবে। সরিষার তেল ঝাঁজালো যা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
তবে সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে সরিষার তেল শিশু ও বয়স্ক সবার ত্বকের জন্যই উপকারী। বিশেষ করে শীতকালে এই তেল ব্যবহারের ফলে ঠাণ্ডাজনিত রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের জিজান জেনারেল হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসক ও কমিউনিটি হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাবেক নির্বাহী সভাপতি ডাক্তার খন্দকার মো. আনোয়ারুল হক বলেন, শিশুদের শরীরে সরিষার তেলের ব্যবহার শত বছরের পুরনো। এ নিয়ে নানা সময় গবেষণা হয়েছে। অনেকে মনে করেন সরিষার তেল ত্বকের জন্য উপকারী নয়। এর একটি কারণ হতে পারে যে, অধিকাংশ গবেষণাই হয়েছে ইউরোপ আমেরিকাভিত্তিক। যেখানে সরিষার তেলের কোনো ব্যবহারই নেই। সেসব দেশে এখনো সরিষার তেল ত্বকে ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়া হয় না। আবার আমাদের দেশে যেহেতু অনেক আগে থেকেই এই তেল সহজলভ্য তাই মনে করা হয়, হাতের কাছে ছিল বলেই তা ত্বকের জন্য ব্যবহারের প্রচলন হয়।

ডা. আনোয়ার বলেন, সম্প্রতি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সরিষার তেল ত্বকের জন্য বা খাওয়ার জন্য উপকারী। কারণ সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে মনো-স্যাচুরেটেড ও পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া এই তেলে ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই রান্নায় এই তেল ব্যবহার হলে হার্ট ডিজিজ হওয়ার প্রবণতা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়। শিশুদের রোদে বসিয়ে সরিষার তেল মাখালে তা ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, যদি পর্যাপ্ত রোদ না থাকে তাহলে সরিষার তেল নয়, বাজারে প্রচলিত লোশন দিতে হবে। তবে শিশু বা বয়স্ক সবার জন্য সরিষার তেল মুখে দেয়া যাবে না।

সম্প্রতি বিভিন্ন ভোজ্য তেলের ওপর আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরিষার তেল ৭০ শতাংশ হৃৎপিণ্ড–সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়, যা হৃদরোগের আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।

ডা. আনোয়ারুল হক বলেন, সরিষার তেলের ওষুধি গুণাগুণ প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সরিষার তেল যেমন প্রয়োজনীয় তেমন উপকারীও। সরিষার তেল খুব ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন-ই থাকে। এই তেল ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে এবং অন্যান্য দূষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। তাই এটি ত্বকের ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে।

শীতকালে অনেকেরই পা ও ঠোঁট ফেটে যায়। সেক্ষেত্রেও সরিষার তেল খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে বলে জানান এই চিকিৎসক। এছাড়া সরিষার তেলের সাথে রসুন গরম পায়ের নিচে লাগালে অনেক ঠান্ডাজনিত রোগ থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।