ঢাকা ০৮:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নাগ-নাগিনীর পাহারায় শতবর্ষী নাগ লিঙ্গম, ছড়াচ্ছে ফুলের সুবাস

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:১১:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৬২ বার

হাওর  বার্তা ডেস্কঃ  উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল। সৌরভ ছড়াচ্ছে। পাপড়িগুলো দেখতে গোলাকার কুণ্ডলী পাকানো। ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর দেখতে ঠিক সাপের ফণার মতো।

আর তাইতো গাছটির নাম নাগ লিঙ্গম। এটি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ। তবে ফল গোলাকার বলের ন্যায়। রং সফেদার মত। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রায় দেড়শ বছরের পুরো এ বৃক্ষ।

এটি আমাজান অঞ্চলের। শরৎ মৌসুমে সাধারণ ফুল আসে। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ফুল যেন আগেই ফুটছে। অসময়ে হলেও গ্রীষ্মের তাপদাহে এ ফুলের সুগন্ধে চারপাশ মৌ-মৌ করছে। গৌরীপুর থানার নতুন ভবনের পাশেই এই বৃক্ষে অবস্থান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এ ফুলের স্পর্শ থেকে ছুটে আসছেন পর্যটক। পথচারীদেরও যেন আটকে এর ঘ্রাণ।

উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল

উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে-এ বৃক্ষের বয়স প্রায় ২০০ হতে চলেছে। কালীপুরের তৎকালীন জমিদার উপেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় দেড়শ বছর আগে অনেকগুলো রয়েল পামগাছের সঙ্গে ভারত থেকে এই নাগ লিঙ্গম গাছের চারা আনেন। গাছটি জমিদারের বাসভবনে রোপন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, হাতির পেটের অসুখের প্রতিষেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত।

দেশের প্রতিকূল আবহাওয়া বাঁচিয়ে রাখার জন্য জমিদার আমাজান অঞ্চল থেকে এ গাছটি এনে রোপন করেন। এলাকাবাসী জানান, এ গাছের ফুল স্বয়ং নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। এ কুসংস্কারের কারণেই প্রতিবছর নাগ পঞ্চমিতে এ গাছের গোড়ায় পূজা অর্চনা করা হতো। নাগকে সন্তুষ্ট করতে জমিদার আমলে এ প্রথা চালু ছিলো। বর্তমান সাপের ভয়ে গাছের সন্নিকটে সহসায় কেউ যেতে চায় না।

নাগ লিঙ্গম ফুলের কলি

নাগ লিঙ্গম ফুলের কলি

দেশ ভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে গেলে পরিত্যক্ত এ বাড়িতে বর্তমানে গৌরীপুর থানার কার্যক্রম চলছে। গাছটি প্রতি বছর শরৎকালে ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছড়ায়। তবে এবছরও এখনও ফুটচ্ছে, ঝরচ্ছে, ছাড়চ্ছে ঘ্রাণ। কাণ্ড ফুল ফুটলেও শাখা-প্রশাখায় কোনো ফুল ফোটে না। কয়েকবারই বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের চেষ্টাও করে এখন সফল হয়নি। এর ফলের ওজন প্রায় দুই কেজি। দেখতে সুন্দর হলেও ফলের স্বাদ খুবই তিক্ত। পশু-পাখিও এই ফল খায় না। বৃক্ষের পাতার রং গাঢ় সবুজ। বহু দূর থেকে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। তবে এই ফুলের সুবাস তীব্র নয়।

গৌরীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহারুল হক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, দুর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে। এর ফুলের কলি দিয়ে রস তৈরি করে খাওয়ালে প্রসূতির সন্তান প্রসব সহজ হয়। এর মাঝবয়সী পাতা দিয়ে তৈরি পেস্ট দাঁতের পাইরিয়া ও ক্ষয় রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর। এ গাছের বাকল দিয়ে বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মজবুত। লালচে বাদামি রঙের এ কাঠ রেলের স্লিপারসহ ভারি কাজে লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দেড়শ বছরের পুরনো বৃক্ষ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দেড়শ বছরের পুরনো বৃক্ষ

তিনি আরো জানান, এত সব গুণ থাকা স্বত্বেও শুধু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড উঞ্চ অঞ্চলের গাছ বলে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম এ দেশে হয় না। তবে গুটি কলাম করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি জানান। প্রায় ২৫ বছর আগে এক বৃক্ষ জরিপে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ হিসেব করেছেন বাংলাদেশে ৫২টি নাগেশ্বর বৃক্ষ আছে। তবে বর্তমানে এর সংখ্যা কমে ১৬’তে দাঁড়িয়েছে।

অপর দিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি নাগ লিঙ্গম গাছ রয়েছে।এ গাছটিতে ও আগাম ফুল ধরতে শুরু করেছে।কবে কে এ গাছটি রোপন করেছে তা কারো জানা নেই।তবে এলাকার কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি জানান,জৈনক উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সনাতন ধর্মের এক ব্যক্তি এ গাছটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে রোপন করে ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নাগ-নাগিনীর পাহারায় শতবর্ষী নাগ লিঙ্গম, ছড়াচ্ছে ফুলের সুবাস

আপডেট টাইম : ০২:১১:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯

হাওর  বার্তা ডেস্কঃ  উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল। সৌরভ ছড়াচ্ছে। পাপড়িগুলো দেখতে গোলাকার কুণ্ডলী পাকানো। ফুটন্ত ফুলের পরাগ কেশর দেখতে ঠিক সাপের ফণার মতো।

আর তাইতো গাছটির নাম নাগ লিঙ্গম। এটি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ। তবে ফল গোলাকার বলের ন্যায়। রং সফেদার মত। ময়মনসিংহের গৌরীপুরে প্রায় দেড়শ বছরের পুরো এ বৃক্ষ।

এটি আমাজান অঞ্চলের। শরৎ মৌসুমে সাধারণ ফুল আসে। তবে এবার জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই ফুল যেন আগেই ফুটছে। অসময়ে হলেও গ্রীষ্মের তাপদাহে এ ফুলের সুগন্ধে চারপাশ মৌ-মৌ করছে। গৌরীপুর থানার নতুন ভবনের পাশেই এই বৃক্ষে অবস্থান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এ ফুলের স্পর্শ থেকে ছুটে আসছেন পর্যটক। পথচারীদেরও যেন আটকে এর ঘ্রাণ।

উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল

উজ্জ্বল গোলাপী রঙের ফুল

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে-এ বৃক্ষের বয়স প্রায় ২০০ হতে চলেছে। কালীপুরের তৎকালীন জমিদার উপেন্দ্র কিশোর রায় প্রায় দেড়শ বছর আগে অনেকগুলো রয়েল পামগাছের সঙ্গে ভারত থেকে এই নাগ লিঙ্গম গাছের চারা আনেন। গাছটি জমিদারের বাসভবনে রোপন করেছিলেন। জনশ্রুতি আছে, হাতির পেটের অসুখের প্রতিষেধক হিসেবে ওই গাছের কচি পাতা কার্যকর ভূমিকা রাখত।

দেশের প্রতিকূল আবহাওয়া বাঁচিয়ে রাখার জন্য জমিদার আমাজান অঞ্চল থেকে এ গাছটি এনে রোপন করেন। এলাকাবাসী জানান, এ গাছের ফুল স্বয়ং নাগ-নাগিনী পাহারা দেয়। এ কুসংস্কারের কারণেই প্রতিবছর নাগ পঞ্চমিতে এ গাছের গোড়ায় পূজা অর্চনা করা হতো। নাগকে সন্তুষ্ট করতে জমিদার আমলে এ প্রথা চালু ছিলো। বর্তমান সাপের ভয়ে গাছের সন্নিকটে সহসায় কেউ যেতে চায় না।

নাগ লিঙ্গম ফুলের কলি

নাগ লিঙ্গম ফুলের কলি

দেশ ভাগের পর জমিদাররা ভারতে চলে গেলে পরিত্যক্ত এ বাড়িতে বর্তমানে গৌরীপুর থানার কার্যক্রম চলছে। গাছটি প্রতি বছর শরৎকালে ফুল ফুটিয়ে সৌরভ ছড়ায়। তবে এবছরও এখনও ফুটচ্ছে, ঝরচ্ছে, ছাড়চ্ছে ঘ্রাণ। কাণ্ড ফুল ফুটলেও শাখা-প্রশাখায় কোনো ফুল ফোটে না। কয়েকবারই বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদনের চেষ্টাও করে এখন সফল হয়নি। এর ফলের ওজন প্রায় দুই কেজি। দেখতে সুন্দর হলেও ফলের স্বাদ খুবই তিক্ত। পশু-পাখিও এই ফল খায় না। বৃক্ষের পাতার রং গাঢ় সবুজ। বহু দূর থেকে ফুলের সুবাস পাওয়া যায়। তবে এই ফুলের সুবাস তীব্র নয়।

গৌরীপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক আজহারুল হক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, দুর্লভ নাগ লিঙ্গম গাছের ব্যাপক ওষুধি গুণ রয়েছে। এর ফুলের কলি দিয়ে রস তৈরি করে খাওয়ালে প্রসূতির সন্তান প্রসব সহজ হয়। এর মাঝবয়সী পাতা দিয়ে তৈরি পেস্ট দাঁতের পাইরিয়া ও ক্ষয় রোগ নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকর। এ গাছের বাকল দিয়ে বহুমূত্র রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়। পাশাপাশি এ গাছের কাঠ অত্যন্ত মজবুত। লালচে বাদামি রঙের এ কাঠ রেলের স্লিপারসহ ভারি কাজে লোহার পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়।

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দেড়শ বছরের পুরনো বৃক্ষ

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের দেড়শ বছরের পুরনো বৃক্ষ

তিনি আরো জানান, এত সব গুণ থাকা স্বত্বেও শুধু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ দেশে নাগ লিঙ্গম গাছের বিস্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাভাবিক নিয়মে বীজ থেকে চারা উৎপন্ন হওয়ার কথা থাকলেও প্রচণ্ড উঞ্চ অঞ্চলের গাছ বলে এ গাছের বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম এ দেশে হয় না। তবে গুটি কলাম করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে তিনি জানান। প্রায় ২৫ বছর আগে এক বৃক্ষ জরিপে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীগণ হিসেব করেছেন বাংলাদেশে ৫২টি নাগেশ্বর বৃক্ষ আছে। তবে বর্তমানে এর সংখ্যা কমে ১৬’তে দাঁড়িয়েছে।

অপর দিকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি নাগ লিঙ্গম গাছ রয়েছে।এ গাছটিতে ও আগাম ফুল ধরতে শুরু করেছে।কবে কে এ গাছটি রোপন করেছে তা কারো জানা নেই।তবে এলাকার কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি জানান,জৈনক উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সনাতন ধর্মের এক ব্যক্তি এ গাছটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে রোপন করে ছিলেন।