বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক এবং এসব মাদরাসা যে শিক্ষক ও পেশাজীবী সংগঠনের সাথে সন্নিবেশিত, তাতে দেশের বড় সব দরবার, পীর-মাশায়েখ, উলামায়ে কেরাম অন্তর্ভূক্ত থাকায় তাদের সাথে প্রতি বছর কমপক্ষে সরাসরি ৮ কোটি মানুষের যোগাযোগ হয়। পরোক্ষভাবে যার প্রভাব দেশের কমপক্ষে ৭০% জনগণের ওপর পড়ে। প্রত্যক্ষভাবে দলীয় রাজনীতিমুক্ত, অথচ গঠনমূলক রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তায় নিমগ্ন এ শ্রেণীটি সমাজের মূল নীরব চালিকাশক্তি।

উন্নয়নের রাজনীতিতে তারা ইতিবাচক ভূমিকা রে খে স্থিতি ও স্বাভাবিক অবস্থার সমর্থনে যখন সবাই সংঘবদ্ধ, তখন প্রধানমন্ত্রীর এ অর্জনে পানি ঢেলে দেয়ার পাঁয়তারা করছে একটি ঘাপটি মেরে থাকা চক্র। মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে অমুসলিমদের নিয়োগ মুসলমানদের ধর্মীয় সাংবিধানিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন ছাড়া আর কিছু নয়। আইনের সুযোগে সংবিধান ও মানবাধিকারের মূল দাবি অস্বীকার করার প্রবণতা জাতির জন্য হতাশাজনক। মাদরাসা শিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দেশব্যাপী যে স্বস্তিময় পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছিল, সে পরিবেশ বিঘ্নিত করতে কিছু খারাপ লোকের অঙ্গুলি হেলনে মনে হয় মৌচাকে ঢিল পড়তে শুরু করেছে। ক্যাসিনো কা- থেকে বাজার অস্থিতিশীল করার মাধ্যমে সরকারের নিস্তরঙ্গ অবদানকে আন্দোলিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার মতোই মাদরাসা শিক্ষা নিয়েও কেউ গুটি চালছে কি না তা প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে হবে।

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে এদেশ যখন ঘনকালো অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন ধর্মীয় সংস্কারকরা মুসলমানের ঈমান, আমল, শিক্ষা, সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য যে যেভাবে পারেন উদ্যোগ নিয়েছেন। এরমধ্যে বাংলার বিশিষ্ট আলেম মোল্লা মাজদুদ্দিন ওরফে মোল্লা মদন ব্রিটিশদের সাথে দেন-দরবার করে ১৭৮১ সালে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর বহু ঘাত-প্রতিঘাত পাড়ি দিয়ে, বাধ্য হয়ে অনেক অনিষ্টকর হস্তক্ষেপ ও ব্যতিক্রম বরদাস্ত করেও এ শিক্ষাধারাটি আলেমসমাজ চালু রাখেন।

তখনকার সময়ে সমাজ সচেতন আলেম ও শিক্ষাবিদগণ আলিয়া এবং বিভিন্ন ইসলামিয়া কলেজের আশ্রয়ে দীনি শিক্ষাকে বাঁচিয়ে রাখেন। এর অনেক বছর পর ১৮৬৬ সালে দেওবন্দ মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিস্থিতির বাস্তবতায় এর প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকের শিক্ষা দীক্ষাও দিল্লি ইসলামিয়া কলেজসহ ব্রিটিশ অনুমোদিত শিক্ষাঙ্গনে হয়। ব্রিটিশযুগে আলিয়া মাদরাসার যেসব অসুবিধা আলেমরা ভোগ করতেন, ব্রিটিশ বিদায় নেয়ার পর কলকাতা থেকে আলিয়া মাদরাসা ঢাকায় স্থানান্তরিত হলে সেসব অনেকটাই দূর হয়। ১৯৭১ এর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।

দীর্ঘদিন ধরে ‘বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন’ মাদরাসা শিক্ষাকে উন্নত ও আধুনিক রূপ দেয়ার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। বহু যুগের পুরনো দাবি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার সরকারের আমলে দায়িত্বশীলগণ বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সাথে পূর্ণ সহযোগিতা করে যাওয়ার কারণে মাদরাসা শিক্ষার প্রভূত উন্নতি হয়েছে।
বিশেষ করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এ বিষয়ে আলেমসমাজের এত কাছাকাছি ছিলেন যার নজির খুব কমই পাওয়া যায়। অল্পদিন আগেও কাজী কেরামত আলী এমপি মাদরাসা বিষয়ে যথেষ্ট আন্তরিক হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মনোযোগ ও সদিচ্ছা মাদরাসা শিক্ষাকে আলোকিত করেছে। ভৌত অবকাঠামোসহ বস্তু ও নীতিগত উন্নতি ছিল মাদরাসা সেক্টরে দৃশ্যমান। মাদরাসা শিক্ষকগণ আর্থ সামাজিক ভালো অবস্থানে পৌঁছে শিক্ষা ও সংস্কৃতিগত উৎকর্ষের বিষয়ে সততা অগ্রসরমান।

মাদরাসা শিক্ষকদের একক পেশাজীবী সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নানা কর্মসূচিতে সরকারের উচ্চ পদস্থ নেতৃবর্গ ও কর্মকর্তাবৃন্দের আন্তরিকতা আলেমসমাজকে মুগ্ধ করে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সংগঠনকে পছন্দ করেন। অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহসহ অনেক মন্ত্রী, এমপি এ সংগঠনের প্রতি আন্তরিক টান এবং মাদরাসা শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলছে। রাজধানীর উপকণ্ঠে স্থায়ী ক্যাম্পাস ডেভেলপ করা হচ্ছে। যদিও সীমিত সম্পদ ও স্বল্প সুযোগ-সুবিধার কারণে কল্পনাতীত কষ্ট করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকম-লী এ শিক্ষাধারার ঐতিহ্য এবং প্রজন্মের শিক্ষার মহান দায়িত্ব সম্পাদন করে যাচ্ছেন। দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না। শুনলে শোনা যায় মাদরাসা শিক্ষকরাও বর্তমানে সাধারণ শিক্ষার সমান বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা ও মানমর্যাদা পাচ্ছেন।
বহু মাদরাসা এখন অনার্স মাস্টার্স কোর্স করাচ্ছে। বিজ্ঞান গবেষণাগার, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরী ইত্যাদিতে মাদরাসাও এখন সমৃদ্ধ। কিন্তু শুনলে সবাই বিস্মিত হবে যে, ১৯৯৫ সালে তৈরি জনবল কাঠামো দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়াশোনা মাদরাসায় করানো হচ্ছে। যে জনবল কাঠামোটি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য তৈরি। কলেজ বিশ্ববিদ্যলয়ে এমন কথা চিন্তাও করা যায় না। দায়িত্ব যখন এসে গেছে, তখন সীমাবদ্ধতা নিয়েও মাদরাসা শিক্ষকরা কষ্ট করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

ফলাফল প্রশংসনীয় হচ্ছে। পাসের হার ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা বিভাগে মাদরাসা ছাত্ররা খুবই ভালো করছে। এসবই ধৈর্যশীল ত্যাগী ও পরীক্ষিত একদল শিক্ষাবিদ এবং অভাবনীয় কর্মবীরের অবদান। বহু পদ এমন আছে, বছরের পর বছর যেখানে কোনো লোক নিয়োগ দেয়া হয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, নিজেদের পকেটের পয়সা ব্যয় করে বাইরের যোগ্য শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রদের শিক্ষাদান করা ও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। কারণ, এসব উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগই দেয়া হয়নি।

মাদরাসার শিক্ষকরা শুধু শিক্ষক নন। তাদের প্রায় সবাই নানা সামাজিক দায়িত্বে আছেন। কেউ ইমাম খতীব। কেউ কাজী। কেউ ওয়ায়েজ ও লোক শিক্ষক। অনেকে পীর মাশায়েখ। যাদের গণসংযোগ ও সামাজিক অবদান ধারণাতীত। সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা, অনাচার, মাদক, দুর্নীতি ও সমাজবিরোধী কর্মকা- প্রতিরোধে তাদের গোটা জীবনই নিবেদিত। যে প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সরকারকে বহু টাকা ব্যয় করতে হয়, নানা সংস্থা অর্থ ব্যয় করে, সে সেবাগুলো বিনা ব্যয়ে এই শিক্ষক আলেমগণ সারা বছরই দেশ ও জাতিকে দিয়ে যাচ্ছেন। আইন-শৃঙ্খলা বাবদ যে বিশাল বাজেট এর নীতিগত বহু বিষয় আলেমরা মোটিভেশনের মাধ্যমে আগেই সেরে ফেলছেন। যা অর্থের বিনিময়ে অর্জন ছিল শত শত কোটি টাকার বিষয়।

এখানে যে কথাটি বিশেষভাবে বলা উদ্দেশ্য সেটি হচ্ছে, মাদরাসা শিক্ষা থাকবে কি না সেই আশঙ্কার কথা তুলে ধরা। এ অঞ্চলের শিক্ষা মাদরাসা দিয়েই শুরু। মাদরাসাকেই নানা সময় সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়েছে। ওল্ড স্কিম, নিউ স্কিমের নামে বহু মাদরাসা স্কুল কলেজে রূপ নেয়। স্বাধীনতার পর থেকে একমুখী শিক্ষার নামে ইসলামী শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করার চেষ্টা যখনই হয়েছে, এ দেশবাসী ইসলামী শিক্ষার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য মাদরাসাকে সমর্থন যুগিয়েছে।

বঙ্গবন্ধুও যে কারণে মাদরাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার কন্যা সে ধারা বজায় রেখে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। যিনি মাদরাসার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝেন। মাদরাসার ইতিহাস তার মুখ থেকে শুনে অনেক রাজনীতিক ও কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। তিনি দেড়শ’ বছরের পুরোনো কওমী শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়ে এর রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অবস্থান দৃঢ় করে দিয়েছেন। ইসলামী শিক্ষার সুরক্ষা ও উন্নয়নই তার অভিপ্রায়।
সমস্যা দেখা দিয়েছে সে গুটিকয় উল্লু নিয়ে, যারা প্রধানমন্ত্রীর সাজানো বাগানকে উজাড় করতে চায়। কিছু আলগা খেলোয়াড়কে নিয়ে, যারা তার পাকাধানে মই দিতে চায়। ঘাপটি মেরে থাকা দুষ্টচক্র যেমন প্রধানমন্ত্রীর যত্ন অর্জনগুলোকে ধুলায় মিশিয়ে দিতে সচেষ্ট, যাদের শায়েস্তা করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদল মাথামোটা লোক মাদরাসাকে সাধারণ প্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস মনে করে। শিক্ষিত হলেই যেন মানুষ সবকাজের কাজী হয়ে যায়। তারা মনে হয় ডাক্তার ছাড়া মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে ফেলবে।

দেশের ৩টি সরকারী আলিয়া মাদরাসা। এরমধ্যে ঢাকা ও সিলেটে প্রিন্সিপাল সাধারণ শিক্ষিত। অপরটি বগুড়া, এর প্রিন্সিপাল পদ শূন্য থাকায় ভারপ্রাপ্ত হিসাবে আছেন, পদার্থ বিজ্ঞানের এক অধ্যাপক। এই হলো মাদরাসার চিত্র। অথচ বিগত ৭০ বছর এসব আলিয়ার প্রিন্সিপাল পদে ছিলেন, দেশবরেণ্য আলেম শিক্ষাবিদ। সরকারী স্বীকৃতি ও মঞ্জুরীর অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নয়ন ও নিরাপত্তা। তাই বলে এসবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিনাশ কাম্য হতে পারে না।
মাদরাসা শিক্ষিতদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার সুযোগ করে দেয়া কিংবা তাদের সরকারী উচ্চপদে কাজের সুযোগ তো দূরের কথা, মাদরাসা সংশ্লিষ্ট কাজেও তাদের অবদান রাখার সুযোগ নেই। যেমন, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন অধ্যাপক রয়েছেন কামিল এবং ইসলামী শিক্ষা বিষয়ক/আরবী বিষয়ে মাস্টার্স পাশ, তাদেরকে কোনো সরকারী মাদরাসা কিংবা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উচ্চপদে পদস্থ করা হচ্ছে না।
বাংলাদেশের সকল সরকারী ও সরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত মাদরাসা সুষ্ঠু পরিচালনা, বেতন-ভাতা প্রদান, নিয়মনীতি নির্ধারণ ও পরিদর্শনসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এই অধিদপ্তরে শুধুমাত্র একজন সহকারী পরিচালক মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত। এর নেতৃত্বে রয়েছেন একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী কর্মকর্তা। মহাপরিচালক, পরিচালক, উপ-পরিচালক, পরিদর্শকসহ অন্যান্য পদে মাদরাসা শিক্ষিত কোনো কর্মকর্তা নেই। তদ্রুপ বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছাড়া রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরিদর্শক, কারিকুলাম নিয়ন্ত্রকসহ সকল পদে সাধারণ শিক্ষা ধারার কর্মকর্তাগণ নিয়োজিত আছেন।

ডোমন পুকুর আমিনিয়া কামিল মাদরাসা বগুড়ায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে একজন মহিলা শিক্ষক দায়িত্বরত রয়েছেন। তদ্রুপ রাজবাড়ি শ্রীপুর লজ্জাতুন্নেছা মহিলা কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে একজন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মহিলা দায়িত্বরত আছেন। রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নরুয়া ইউনিয়নের পাটকিয়া দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদ্রুপ যশোরের কেশবপুর আড়ুয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ আলোচনাটিকে কেউ যেন নারী বা অন্য ধর্মের প্রতিবিদ্বেষ হিসাবে না দেখেন। কারণ, এখানে শুধু বলা হচ্ছে, চিকিৎসার জন্য ডাক্তার। স্থাপত্যের জন্য স্থপতি। প্রযুক্তির জন্য প্রযুক্তিবিদ। সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীকে প্রাধান্য দেয়ার কথা। অন্য সাবজেক্টের কিংবা পেশার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ নয়।

ইসলাম সকল ধর্মের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে। তবে ধর্মীয় বিষয়াদি নিজ ধর্মের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা সম্পাদিত করা সর্বজনমান্য নীতি। ঠিক তেমনই ইসলামী ঐতিহ্য ও পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সবক্ষেত্রে নারীরা অবদান রাখতে পারেন না। ইসলামে পর্দার বিধান নারী পুরুষকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার নির্দেশ দেয়। একটি ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হওয়া কোনো অমুসলিম ব্যক্তির পক্ষে যেমন স্বস্তিকর নয়, তেমনই আলেম উলামা, মুফতি মুহাদ্দিসদের তত্ত্বাবধান এবং নেতৃত্ব দেয়া একজন নারীর পক্ষেও শোভনীয় নয়। ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান দায়িত্ব সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তির জন্যও মানানসই নয়। কেননা তারা এর পূর্ণ চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে কখনোই নিবেদিত করতে পারবেন না। সংশ্লিষ্ট সব বিষয় এড্রেস করার শক্তি তাদের নেই। তাই, কাক্সিক্ষত সেবাও পাওয়া যাবে না।

বিশ্ব সংস্কৃতি, নীতিমালা, রাষ্ট্রের আইন যে কথাই বলুক ধর্মের বাস্তব দাবি অস্বীকার করার মত নয়। শত সমতার নীতি প্রণয়ন করলেও গীর্জার ধর্মগুরু একজন মাওলানা সাহেব হবেন না। মন্দিরের পুরোহিত হওয়া একজন মুফতি সাহেবের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ জাতীয় মসজিদের খতিব কিংবা যে কোনো মসজিদের ইমামের স্থানে একজন অমুসলিমকে আশা করে না। শরীয়তেও এর বৈধতা নেই। মনগড়া আইন তৈরি করলেও তা অকার্যকর। এমনকি এ ধরনের আইন করাও নৈতিকতার দৃষ্টিতে বেআইনি। আইনে যতই সমতার কথা থাকুক। এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও। কারণ, এখানে ঈমান ও আমলের প্রশ্ন আছে। আধ্যাত্মিকতা ও আদব কায়দার প্রশ্ন আছে। ইতিহাস ঐতিহ্য সুন্নাহ ও সোহবতের ধারাবাহিকতার বিষয় আছে। যেগুলো লঙ্ঘনের ভয়ে মাদরাসা শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবি তুলতেও এক পা এগোলে দুই পা পেছান। সবদিক নিরাপদ বোধ করলে তারা হয়তো চাকরি জাতীয়করণের বিষয়ে একমত হতেন।

এমনই ইবতেদায়িয়া পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, ১০০ ভাগ মঞ্জুরি, শিক্ষার্থীদের খাবার, নানা পর্যায়ে বৃত্তি-উপবৃত্তি ইত্যাদি মাদরাসার ক্ষেত্রেও সমভাবে চালু হওয়া অপরিহার্য। নতুবা মাটি তৈরি করে, সার বীজ চারা সবদিয়ে যদি সেচের পানি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে ফসলের যে অবস্থা হবে, এমনিভাবে মাদরাসার বর্তমান উন্নয়নও উল্লেখিত সুযোগ-সুবিধা না দেয়া হলে, হবে অর্থহীন। এত যত্ন কোনোই ফল দেবে না। অথচ, স্বকীয়তা বিনাশের ভয়ে মাদরাসার কর্তৃপক্ষ শিক্ষক শিক্ষার্থী তাদের ন্যায্য দাবিগুলো পর্যন্ত করতে অন্তত ১০ বার ভাবেন।

শতশত বছরের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এদেশের আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে ধর্মপ্রাণ কোটি মানুষের কষ্টের টাকা ও সম্পদ দিয়ে গড়ে তুলেছেন। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে নির্মিত এসব মাদরাসা সরকারের তত্ত্বাবধানে যাওয়া মানে আরও উন্নত ও নিরাপদ হওয়া। বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা গণমানুষের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী এ ধারাকে এগিয়ে নিয়েছেন। মাঝে যেসব বত্যয় দেখা যায়, সেসব দায়িত্বশীলদেরই খতিয়ে দেখতে হবে।
ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ ইসলামী শিক্ষাকে কলুষিত ও মাদরাসাকে তার স্বকীয় পরিচয় থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কি না, সেটাও প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদেরই দেখতে হবে। মাদরাসা শিক্ষা আল্লাহ হেফাজত করবেন। আলেম সমাজ ও জনগণ এ বিষয়ে অতীতের মতই সর্বোচ্চ কোরবানি দিতে পারবেন। তবে, যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। ইসলামী শিক্ষার ক্ষতি তারা করতে পারবে না।

কোরআনের শিক্ষা সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ নিজেই নিজের হাতে রেখেছেন। সংশ্লিষ্টদের শুধু চোখ কান খোলা রাখতে হবে। শরীয়তবিরোধী যে কোনো কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদে সোচ্চার থাকতে হবে। সরকারের প্রতি আস্থা ও প্রত্যাশা রাখতে হবে। কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার এবং জরুরি বিশেষ বিধিমালা তৈরি করার মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী এখনও সকলের আশারস্থল। মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে তার অব্যাহত আন্তরিকতা ও উদ্যোগই এ প্রত্যাশার সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর