ঢাকা ০৫:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দিয়াবাড়ির দৃষ্টিনন্দন লাল মুনিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৮৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মিরপুর মাজার রোডের বাঁ পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধ ধরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি। বিশাল এলাকাজুড়ে দিয়াবাড়ি রাজউক প্লট। শরৎকালে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। সাদা কাশবনে ঢেকে যায় এলাকা। দৃষ্টিনন্দন লাল মুনিয়ার খোঁজে কয়েকদিন কেটেছে এই এলাকায়। অবশেষে একদিন দেখা মিলল।

শরতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিয়াবাড়ি অনেকেই বেড়াতে যান। ঢাকার নিকটে হওয়ায় বার্ড ফটোগ্রাফারের পছন্দের জায়গা এই দিয়াবাড়ি। এক সময় দিয়াবাড়িতে হুদহুদ, নানা প্রজাতির ফ্লাইক্যাচার, ভরত, মুনিয়া, প্রিনিয়া, ব্লুথ্রট, নীলকণ্ঠ, হটটিটিসহ নানা  প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল। নানা কারণে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এজন্য আমরাই দায়ী।

নীল আকাশের নীচে, খোলা মাঠে কাশফুলের শুভ্রতা যে কোন ভ্রমণপ্রেমীকে আকৃষ্ট করবে। সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কাশবনের অস্তিত্ব থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা নভেম্বরের শুরুতে কাশবন কেঁটে ফেলার জন্য মুনিয়া প্রজাতির পাখিগুলোর বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ে। মুনিয়া পাখি কাশবনের পাশে পানি আছে এমন জায়গায় বিচরণ করে। কারণ এদের জীবন-বৈচিত্রে পানি অপরিহার্য। বর্তমানে শহরে এমন জায়গার খুবই অভাব। তাই পাখিগুলি দিন দিন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মুনিয়া প্রজাতির মধ্যে লাল মুনিয়ার উপর আমি শুরু থেকেই দুর্বল। পছন্দের পাখি হওয়ায় প্রতিবছরই ছবি তোলার জন্য ছুটে যাই ‍দিয়াবাড়ি।

লাল মুনিয়া Amandava গোত্রের Estrildidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ১০ সেমি দৈর্ঘ্যের ছোট আকারের তৃণচর পাখি। এদের ঠোঁট ও কোমর লাল। মেয়ে ও পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষপাখির গায়ে লাল রঙের মাঝে সাদা ফোটা থাকে। মাথার চাঁদি জলপাই-বাদামি। ঘাড়ের পিছনের অংশসহ কাঁধ ও ডানার ঢাকনি কালচে বাদামী। লেজ কালো। পা ও পায়ের পাতা পীত বর্ণের। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ ও মেয়েপাখির লাল কোমরসহ পিঠ অনুজ্জ্বল বাদামি। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েপাখির পিঠ বাদামী ও ঠোঁট লাল। বুক ও বুকের নিচে হালকা হলুদ।

লাল মুনিয়া পানির ধারে তৃণভূমি, ফসলাদি জমির কাছে ছোট ঝোপ, আখক্ষেত ও গ্রামের মাঠে কাশবন বা ছনবনে বিচরণ করে। সচরাচর এরা ছোট ঝাঁকে থাকে। তৃণ, নল ও আখ ক্ষেতে এরা খাবার খোঁজে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস-বীজ। অনেক সময় মাটিতে ঘাসের বীজ খুঁজে খুঁজে খায়। মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। এরা তীব্র শব্দে উড়ে বেড়ায়। প্রজননকালে পুরুষ পাখি ঘাস ও নলের ডাঁটার উপরে বসে মেয়েপাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য গান গায়। পানির ধারে কাঁটা-ঝোপের নিচুতে ঘাস দিয়ে গোল বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৮-১০টি ডিম দেয় এবং ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। দুজনে মিলে বাচ্চাদের লালন করে।

লাল মুনিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। বহু আগে ঢাকা বিভাগে দেখা যেত। মাঝে এদেরে ঢাকায় দেখা যেত না। বর্তমানে ঢাকায় দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এদের বিচরণ রয়েছে।

বাংলা নাম: লাল মুনিয়া

ইংরেজি নাম: Red Avadavat

বৈজ্ঞানিক নাম: Amandava amandava

লেখক ছবিগুলো ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে তুলেছেন

 রাইজিংবিডি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দিয়াবাড়ির দৃষ্টিনন্দন লাল মুনিয়া

আপডেট টাইম : ১১:৫১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  মিরপুর মাজার রোডের বাঁ পাশ দিয়ে বেড়িবাঁধ ধরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি। বিশাল এলাকাজুড়ে দিয়াবাড়ি রাজউক প্লট। শরৎকালে এক নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। সাদা কাশবনে ঢেকে যায় এলাকা। দৃষ্টিনন্দন লাল মুনিয়ার খোঁজে কয়েকদিন কেটেছে এই এলাকায়। অবশেষে একদিন দেখা মিলল।

শরতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিয়াবাড়ি অনেকেই বেড়াতে যান। ঢাকার নিকটে হওয়ায় বার্ড ফটোগ্রাফারের পছন্দের জায়গা এই দিয়াবাড়ি। এক সময় দিয়াবাড়িতে হুদহুদ, নানা প্রজাতির ফ্লাইক্যাচার, ভরত, মুনিয়া, প্রিনিয়া, ব্লুথ্রট, নীলকণ্ঠ, হটটিটিসহ নানা  প্রজাতির পাখির বিচরণ ছিল। নানা কারণে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। এজন্য আমরাই দায়ী।

নীল আকাশের নীচে, খোলা মাঠে কাশফুলের শুভ্রতা যে কোন ভ্রমণপ্রেমীকে আকৃষ্ট করবে। সেপ্টম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত কাশবনের অস্তিত্ব থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা নভেম্বরের শুরুতে কাশবন কেঁটে ফেলার জন্য মুনিয়া প্রজাতির পাখিগুলোর বংশবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়ে। মুনিয়া পাখি কাশবনের পাশে পানি আছে এমন জায়গায় বিচরণ করে। কারণ এদের জীবন-বৈচিত্রে পানি অপরিহার্য। বর্তমানে শহরে এমন জায়গার খুবই অভাব। তাই পাখিগুলি দিন দিন আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মুনিয়া প্রজাতির মধ্যে লাল মুনিয়ার উপর আমি শুরু থেকেই দুর্বল। পছন্দের পাখি হওয়ায় প্রতিবছরই ছবি তোলার জন্য ছুটে যাই ‍দিয়াবাড়ি।

লাল মুনিয়া Amandava গোত্রের Estrildidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ১০ সেমি দৈর্ঘ্যের ছোট আকারের তৃণচর পাখি। এদের ঠোঁট ও কোমর লাল। মেয়ে ও পুরুষ পাখির চেহারায় পার্থক্য আছে। প্রজননকালে পুরুষপাখির গায়ে লাল রঙের মাঝে সাদা ফোটা থাকে। মাথার চাঁদি জলপাই-বাদামি। ঘাড়ের পিছনের অংশসহ কাঁধ ও ডানার ঢাকনি কালচে বাদামী। লেজ কালো। পা ও পায়ের পাতা পীত বর্ণের। প্রজননকাল ছাড়া পুরুষ ও মেয়েপাখির লাল কোমরসহ পিঠ অনুজ্জ্বল বাদামি। প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েপাখির পিঠ বাদামী ও ঠোঁট লাল। বুক ও বুকের নিচে হালকা হলুদ।

লাল মুনিয়া পানির ধারে তৃণভূমি, ফসলাদি জমির কাছে ছোট ঝোপ, আখক্ষেত ও গ্রামের মাঠে কাশবন বা ছনবনে বিচরণ করে। সচরাচর এরা ছোট ঝাঁকে থাকে। তৃণ, নল ও আখ ক্ষেতে এরা খাবার খোঁজে। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ঘাস-বীজ। অনেক সময় মাটিতে ঘাসের বীজ খুঁজে খুঁজে খায়। মে থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এদের প্রজনন সময়। এরা তীব্র শব্দে উড়ে বেড়ায়। প্রজননকালে পুরুষ পাখি ঘাস ও নলের ডাঁটার উপরে বসে মেয়েপাখিকে আকৃষ্ট করার জন্য গান গায়। পানির ধারে কাঁটা-ঝোপের নিচুতে ঘাস দিয়ে গোল বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় মেয়েপাখি ৮-১০টি ডিম দেয় এবং ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। দুজনে মিলে বাচ্চাদের লালন করে।

লাল মুনিয়া বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি। বিশ্বে ও বাংলাদেশে বিপদমুক্ত বলে বিবেচিত। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের তৃণভূমিতে পাওয়া যায়। বহু আগে ঢাকা বিভাগে দেখা যেত। মাঝে এদেরে ঢাকায় দেখা যেত না। বর্তমানে ঢাকায় দেখা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এদের বিচরণ রয়েছে।

বাংলা নাম: লাল মুনিয়া

ইংরেজি নাম: Red Avadavat

বৈজ্ঞানিক নাম: Amandava amandava

লেখক ছবিগুলো ঢাকার দিয়াবাড়ি থেকে তুলেছেন

 রাইজিংবিডি