হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহপাকের নির্দেশক্রমে এই পৃথিবীতে যত নবী ও রাসূল আগমন করেছেন, সকলের ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরজ। সকল নবীর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের পর একজনমাত্র নবীর ওপর মিথ্যা আরোপ করলেও ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে অস্বীকার করে আর আল্লাহ ও রাসূলগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির প্রয়াস পায় এবং বলে আমরা কতিপয়কে অস্বীকার করব এবং এর দ্বারা একটা মধ্যবর্তী পন্থা গড়ে নেয়ার ইচ্ছা করে, ওরাই খাঁটি কাফের। (সূরা আন নিসা : আয়াত ১৫০-১৫১)।
সকল নবী ও রাসূলকে তাদের প্রদত্ত সকল খবরের সত্যায়নসহ তাদের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ফরজ। মহান আল্লাহপাক ও তাদের আনীত সকল বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন অপরিহার্য করেছেন। (শরহে আকাঈদে সিফারানিয়্যা : খন্ড ২, পৃ. ২৬৪)। এই পৃথিবীর মধ্যে প্রথম নবী হলেন মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম আ. আর প্রথম রাসূল ছিলেন নূহ আ.
বিশ্ব মানব গোষ্ঠীর মধ্যে উত্তম হলেন নবীগণ। নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন রাসূলগণ । রাসূলগণের মধ্যে অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন হলেন উলুল আজম রাসূলগণ। উলুল আজম রাসূলগণ হলেন, ১. হযরত নূহ আ., ২. হযরত ইবরাহীম আ., ৩. হযরত মূসা আ., ৪. হযরত ঈসা আ. ও ৫. বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মাদ সা.। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) আমি কতিপয় নবীকে আ. অন্য কতিপয় নবীর আ. ওপর মর্যাদা দান করেছি। (সূরা বনী ইসারাঈল : আয়াত ৫৫)। (খ) সর্বপ্রথম নবী হযরত আদম আ.। সর্বশেষ হযরত মোহাম্মাদ সা.। হযরত আদম আ.-এর নাবুওয়্যাতের সপক্ষে আল কোরআনে ওই সকল আয়াত উপস্থাপনযোগ্য যে তার প্রতি আদেশ ও নিষেধ রয়েছে। মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, হে আদম তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে অবস্থান করো। বিনা সঙ্কোচে যা ইচ্ছা তা-ই ভক্ষণ করো। তবে এ বৃক্ষটির নিকটবর্তী হবে না। তাছাড়া উম্মতে মোহাম্মাদীর ঐকমত্যে একথা নিশ্চিত প্রমাণিত যে, তার সময়ে আর কোনো নবী ছিলেন না। (নিবরাস : পৃ. ২৭৪)।
(গ) উলুল আজম রাসূল কে বা কাকে বলে এ ব্যাপারে একাধিক উক্তি পাওয়া যায়। সর্বোত্তম উক্তি হলো আল্লামা বাগাভী প্রমুখ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস ও হযরত কাতাদা রা. হতে বর্ণনা করেন উলুল আযম হলেন, হযরত নূহ আ., হযরত ইবরাহীম আ., হযরত মূসা আ., হযরত ঈসা আ. ও হযরত মোহাম্মাদ সা.। সূরা আহযাবের ৭ নং আয়াতে তাদের নাম উল্লেখ আছে। (আকীদায়ে তাহাবিয়্যাহ : মায়াশ শরহে, পৃ ৩১১, ৩১২)।
কেউ যদি নবী ও রাসূলগণের ওপর ঈমান আনয়ন ছাড়া শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর ঈমান আনয়ন করে, তাহলে তার ঈমান আনয়ন গ্রহণযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য হবে না। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার ওপর ওই ব্যক্তির ঈমান নির্ভরযোগ্য হবে, যে নবীগণের ওপর ঈমান এনেছে। মহান আল্লাহপাক এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, (ক) যারা আপনার ওপর নাজিলকৃত এবং আপনার পূর্বে নাজিলকৃত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান রাখে এবং যারা আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, তারাই তাদের প্রতিপালকের হেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং তারাই একমাত্র সফলকাম। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ৪-৫)।
মহান আল্লাহপাক প্রত্যেক জাতি ও অঞ্চলে কোনো না কোনো নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন। কোনো জাতি বা দেশ এমন নেই যেখানে কোনো নবী বা রাসূলের আগমন হয়নি। মহান রাব্বুল আলামীন এই বিশেষত্বটিকে আল কোরআনে এভাবে বিবৃত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি। (তারা আমার নির্দেশমতো উম্মতদের বলেছেন) তোমরা আল্লাহ তায়ালার উপাসনা করো, আর তাগুত (শয়তান) থেকে দূরে থাক। তাদের মধ্য হতে কিছু লোকের ওপর পথভ্রষ্টতা স্থায়ী হয়েছে। (অর্থাৎ তারা পথভ্রষ্টতায় ডুবে রয়েছে)। অনন্তর তোমরা লক্ষ্য করো মিথ্যা আরোপকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল? (সূরা আন নাহল : আয়াত ৩৬)।
মোটকথা, নাবুওয়্যাত উপার্জনযোগ্য বস্তু নয় যে, উপাসনা-আরাধনার ফল হিসেবে কেউ তা লাভ করতে পারবে। বরং এটি একমাত্র আল্লাহর দান ও তার নির্বাচন। যাকে ইচ্ছা তিনি নাবুওয়্যাত-রিসালাতের ভ‚ষণে বিভ‚ষিত করেন। ব্যক্তিগত চেষ্টা সাধনা ও এবাদত-বন্দেগীর এখানে কোনো প্রভাব নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বিশেষ রহমত (নাবুওয়্যাত) যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন। আল্লাহ মহান অনুগ্রহদাতা। (সূরা আল বাকারাহ : আয়াত ১০৫)।
বস্তুত নাবুওয়্যাত আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, করুণা ও দান। তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন ও নাবুওয়্যাতের সম্মানে ভ‚ষিত করেন। সুতরাং কেউ স্বীয় এলেম, যোগ্যতা ও উপার্জনের দ্বারা এ পদমর্যাদা লাভ করতে পারে না। যে ব্যক্তি নাবুওয়্যাত ও রিসালাতকে উপার্জনযোগ্য ও সাধনার দ্বারা লাভ করা যায় বলে বিশ্বাস করে সে ইসলামবহির্ভূত যিন্দিক। (শরহে আকীদায়ে সিফারানিয়্যাহ : খন্ড ২, পৃ. ২৬৮)।