Exif_JPEG_420

ঐশীর ফাঁসির দণ্ড

অধ্যক্ষ আসাদুল হক নিজ সন্তান তার মা-বাবাকে হত্যা করবে এটা ভাবাও যায় না। যে মা গর্ভে ধারণ করেছেন, যে পিতা লালন-পালনের সমস্ত দায়ভার বহন করছেন সেই জন্মদাতাকে হত্যা করা মানবসভ্যতা অনুমোদন করে না। যখন এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় তখন বুঝতে হবে কোথাও কোনো সমস্যা আছে। ভাবতে হবে কেন এমন ঘটনা ঘটলো।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যা করার দায়ে তাদের মেয়ে ঐশী রহমানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা দেওয়ার জন্য ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। খালাস পেয়েছেন মামলার অন্য আসামি ঐশীর আরেক বন্ধু আসাদুজ্জামান জনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।

২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজেদের বাসা থেকে মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ১৭ আগস্ট নিহত মাহফুজুর রহমানের ভাই মশিউর রহমান এ ঘটনায় পল্টন থানায় হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই নিহত দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমান পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে তাঁর বাবা-মাকে নিজেই খুন করার কথা জানান। পরে ২৪ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন তিনি। তবে পরে অবশ্য ওই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন ঐশী। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত ও নৃশংস। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দেখা গেছে, ঘটনার সময় আসামি ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। নৃশংস হত্যাকাণ্ড বিবেচনায় ঐশীকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ঐশী প্রাপ্তবয়স্ক হলেও তার বয়স কম। এই বয়সী একটি মেয়েকে কেন মা-বাবাকে হত্যার দায়ে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত হতে হল সেটি গভীর ভাবনার বিষয়। অপরাধ করলে তার সাজা হবে এ নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কথায় আছে- ‘দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।’ ঐশীর বিচারের ক্ষেত্রেও এই বোধ আমাদের তাড়িত না করে পারে না। বিচারতো কোনো প্রতিশোধ নয়। অপরাধের বিচারের সাথে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নেওয়াটাও অত্যন্ত জরুরি। ঐশীর কেন এই অবস্থা হল। গলদ টা কোথায়? সে কেন পিতা-মাতার হন্তারক হল। এই হত্যার পূর্বাপর যতটা গণমাধ্যমে এসেছে তা থেকে জানা যায়, ঐশীকে শাসন করার কারণেই পিতা-মাতার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল সে। এ কারণেই সে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। ঐশী মাদকাসক্ত ছিল এমন খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। ‘শাসন’টা কি একটু দেরিতে হয়ে গিয়েছিল? এই বয়সী একটি মেয়ে কী করে মাদকাসক্ত হল? সে তো স্কুলের গণ্ডিই পেরোয়নি। এই ঘটনা পরিবার প্রথার একটি ভঙ্গুর অবস্থাকেই তুলে ধরছে। শিক্ষা নেয়ার আছে অনেক কিছু। এ সমাজে যেন আর কোনো ঐশী সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য অভিভাবকদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। কোনো পিতা-মাতাকেও যেন এমন করুণ পরিণতি বরণ করতে না হয় ভাবতে হবে সেটিও। লেখক: হাওরবার্তা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর