এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয়নি পৌরসভা নির্বাচনের। তবে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই সেই পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় আসছে ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সারাদেশের যে কয়টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌরসভা একটি। আর তাই আখাউড়া পৌরসভাধীন এলাকাগুলোতে এখন বইছে নির্বাচনী হাওয়া। এবারের নির্বাচনে সরকারের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রার্থীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করেছে।
জেলার পাঁচটি পৌরসভার মধ্যে শুধুমাত্র আখাউড়া পৌরসভার মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ডিসেম্বর মাসেই এই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি চার পৌরসভার মেয়দ শেষ হতে এখনো কয়েক মাস বাকি। তাই প্রথম ধাপে এই চার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সর্বশেষ গত ২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারি আখাউড়া পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক এন.এম হাসান খান মেয়র নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে এক বছর পর এন.এম হাসান খানের মৃত্যুতে আখাউড়া পৌরসভার উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই উপ-নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা তাকজিল খলিফা কাজল মেয়র পদে নির্বাচিত হন। তবে এবারের পৌরসভা নির্বাচনেও বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাকজিল খলিফা কাজল মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. নূরুল হক ভূইয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ বোরহান উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুল মতিন ও মোবারক হোসেন রতনের নামও শোনা যাচ্ছে।
তবে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় এবারের নির্বাচনেও মেয়র পদে তাকজিল খলিফা কাজলকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তবে নির্বাচনে কাকে দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে তা নিয়ে এখনি মুখ খুলতে নারাজ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রীয় কিংবা জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। হয়তো বা তফসিল ঘোষণার পরপরই দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয় বা দলের ভেতরে থেকে দলীয় প্রার্থীর বিরোধীতা করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা না আসায় আখাউড়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখার জন্য বলা হয়েছে বলে বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এজন্য মেয়র পদে বিএনপি থেকে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী মন্তাজ মিয়া ও সহ সভাপতি জয়নাল আবেদীন আব্দু নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষে ইতোমধ্যে দলের হাইকমান্ডের কাছে ধর্না দিতেও শুরু করেছেন তারা। তবে দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ও বর্তমান কাউন্সিলর মশিউর রহমান বাবুল।
এছাড়া দলীয় পরিচয় বাদ দিয়ে আখাউড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির বিল্লাল হোসেনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানান, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করলে সমর্থন না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তবে বিএনপি নেতা হাজী মন্তাজ মিয়া আখাউড়া উপজেলার দেবগ্রাম গ্রামের একক সমর্থনকে পুঁজি করে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছেন। পাশাপাশি দল থেকে মনোনয়ন পেলে তিনি সরকার দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী হয়ে ওঠবেন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল মনসুর মিশন জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি, তবে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে প্রস্তুতি নিয়ে রাখার জন্য উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে কাজ করবেন। তবে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যদি প্রার্থী হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন আল মামুন জাগো নিউজকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাঁচ পৌরসভার মধ্যে একমাত্র আখাউড়া নির্বাচনের উপযুক্ত হয়েছে। নবীনগর এবং বাঞ্ছারামপুর পৌরসভায় সম্প্রতি সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কসবা পৌরসভার মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। তাই ডিসেম্বর মাসে শুধুমাত্র আখাউড়া পৌরসভারই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, আখাউড়া পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ২৪ হাজার ৭৪৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৩৭১ জন ও নারী ভোটার ১২ হাজার ৩৭৫ জন।