প্রকৃতির বাদ্য শুনুন

সন্ধ্যায় তারা এখানে জড়ো হয়। কিচিরমিচির আর কলকাকলিতে মুখরিত করে চারদিক। জানা-অজানা এসব পাখির কলতান শুনতে আশপাশের লোকজন আগ্রহ নিয়ে আসেন। দর্শনার্থীরা বাহারি রঙের এসব পাখি দেখে মুগ্ধ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে অনিল চন্দ্রের বাগান। এ বাগান বাড়িটি এখন পাখির বাগান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। বটপাকুড়ে, ছাতিমসহ শত শত গাছে জমা হয় এসব পাখি। শুধু অনিল চন্দ্রের বাগান নয়। আশপাশের আরো অনেকের বাড়ির পাশে শত শত গাছে হাজার হাজার পাখি। একেক গাছে শতাধিক বাসা। ভোরে তারা ঝাপটা মেরে উড়ে যায় মুক্ত আকাশে। আবার সূর্যের আলো যখন পশ্চিম আকাশে রক্ত লাল আভা হয়ে দেখা দেয়, তখন তারা ফিরতে শুরু করে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে। অনেক প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এ ‘পাখি কুঞ্জে’।
রূপগঞ্জ উপজেলা সাহাপুর গ্রামের অনিল চন্দ্র সেনের বাগানবাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোর শত শত গাছে হাজার হাজার পাখির কলতান। পানকৌড়ি, বক, বাদুড়, শালিক, মুনিয়া, কোকিল, বক, বাবুইসহ নাম না জানা নানা প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন পাখির দেখা মেলে সেখানে। অনিল চন্দ্র সেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টা। চারদিকে পাখির ঝাপটাঝাপটি আর কলকাকলি। সারা দিনের তেজি সূর্যটা যখন পশ্চিম আকাশে লাল আভার রঙে ক্লান্ত হয়ে হেলে পড়ে। ঠিক তখনই পাখি তার নীড়ে ফিরতে শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে থাকে পাখি। কিছুক্ষণের মধ্যে পাখির কলকাকলিতে গোটা এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। কোনটি গাছের ডালে। কোনটি পাশের বাড়ির চালে বসে আছে। নয়নাভিরাম দৃশ্য। আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাখিরা নিজের তৈরি বোনা বাসাতে যেতে ছোটাছুটি শুরু করে।
প্রকৃতির বাদ্য শুনুনসরেজমিন গিয়ে জানা যায়, সাহাপুর প্রধান সড়কের পাশেই অনিল চন্দ্র সেনের বাগান। বটপাকুরে, ছাতিম, সুপারি, বাশবাগানসহ শত শত গাছ। তার বাগান ছাড়াও রয়েছে আরো শতাধিক গাছ। এসব গাছে হাজার হাজার পাখির বাসা। হাজার হাজার বাসায় হাজার হাজার পাখি। যা ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। চারদিকে ইটপাথরের ভবন। শুধুই কিচিরমিচির।
অনিল চন্দ্র দাস বলেন, ভাই ভালাই লাগে। আমার বাগানো হাজার হাজার পাখি দেইখ্যা মনডা ভইরা যায়গা। একটা পাখিও কেউরে ধরতে দেইনা। ওরা যেন নিরাপদে থাকতে পারে হের লেইগ্যা সবসময় খেয়াল রাহি।
রূপগঞ্জ সদর ইউপি সদস্য আপেল মাহমুদ বলেন, এখানকার পাখির কিচিরমিচির যে কারো মন ভরে যাবে। বিকাল হলেই যখন পাখিরা আসতে থাকে, তখন মনে হয় এখানে পাখির রাজধানী। স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান মহিউদ্দিন বলেন, এমন হাজার হাজার পাখির একসাথে ডাক শুনতে কার না ভালো লাগে। এখানে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমানে স্থাণীয় কিছু লোক পাখি শিকার করে খেতে শুরু করেছে। এ অবস্থা চললে শিগগিরই এখান থেকে পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা বলেন, অনেকেই বিকেল বেলা এখানে পাখির ডাক শুনতে চলে আসে। এতে করে আশপাশের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর