ঢাকা ০৬:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্লাইওভারের মাধ্যমে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে : রাষ্ট্রপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৩২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারো ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারো কাম্য নয়।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নিকলী থেকে গুণধর পর্যন্ত রাস্তা আছে। ওই রাস্তার নাম দিয়েছে আমার নামে। রাস্তাটার সেনশন আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু হাওরে এ রকম রাস্তা বানানোর সুযোগ নেই। যে কারণে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রপতি মিঠামইনে সেনানিবাসের দক্ষিণ থেকে চার কিলোমিটার ফ্লাইওভার করে মরিচখালী-কিশোরগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।

হাওরের বিপুল উন্নয়ন ও সুন্দর পরিবেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি । অন্য দিকে একটি চক্র হাওরের জমিজমা কিনে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। কাজেই কোনো কোম্পানি যেন হাওরে জমি কিনে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে পারে। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি বেঁচে থাকতে কাউকে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেবেন না। সেটা যতবড় শক্তিই হোক না কেন।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে নিজ জন্মভূমি হাওর উপজেলা মিঠামইনে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এক  সমাবেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

হাওরের অতীত ও বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনারা আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমিও এ সময়ের মধ্যে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীতকরণসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি। এখনো এ অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নে অনেক কাজ চলছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কখনো হাওরের শিকড়ের কথা আমি ভুলিনি। বরং জীবনভর এই হাওর ও এলাকার মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেছি। প্রতিটি হাওরেই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারো ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারো কাম্য নয়।

মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হক প্রমুখ।

এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে হাওরের কোনো কৃষি জমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অনেকে আইন না মেনে হাওরের কৃষি জমির যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না। আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় মিঠামইনে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শিক্ষা জীবন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একসময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াশুনা করতো না। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাযা শেষে তাঁর লাশ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর গ্রামের বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফ্লাইওভারের মাধ্যমে হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেওয়া হবে : রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ১১:৪১:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারো ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারো কাম্য নয়।রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নিকলী থেকে গুণধর পর্যন্ত রাস্তা আছে। ওই রাস্তার নাম দিয়েছে আমার নামে। রাস্তাটার সেনশন আমি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু হাওরে এ রকম রাস্তা বানানোর সুযোগ নেই। যে কারণে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সাথে যোগাযোগ ফ্লাইওভারের মাধ্যমে করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ সময় রাষ্ট্রপতি মিঠামইনে সেনানিবাসের দক্ষিণ থেকে চার কিলোমিটার ফ্লাইওভার করে মরিচখালী-কিশোরগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।

হাওরের বিপুল উন্নয়ন ও সুন্দর পরিবেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি । অন্য দিকে একটি চক্র হাওরের জমিজমা কিনে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। কাজেই কোনো কোম্পানি যেন হাওরে জমি কিনে পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে সবার নজর রাখতে পারে। এ সময় তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি বেঁচে থাকতে কাউকে হাওরের পরিবেশ নষ্ট করতে দেবেন না। সেটা যতবড় শক্তিই হোক না কেন।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে নিজ জন্মভূমি হাওর উপজেলা মিঠামইনে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত এক  সমাবেশে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

হাওরের অতীত ও বর্তমান অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনারা আমাকে বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমিও এ সময়ের মধ্যে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নীতকরণসহ সার্বিক উন্নয়নে কাজ করেছি। এখনো এ অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়ন বাস্তবায়নে অনেক কাজ চলছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, কখনো হাওরের শিকড়ের কথা আমি ভুলিনি। বরং জীবনভর এই হাওর ও এলাকার মানুষদের নিয়ে চিন্তা করেছি। প্রতিটি হাওরেই কৃষকের সুবিধার জন্য সাবমার্সেবল রাস্তা করা হচ্ছে।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ রাজনৈতিক নেতাদের দলমত নির্বিশেষে সৎ থেকে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের কারো ক্ষমতা দেখানো উচিত নয়। নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক নেতাদের অনেকের আচরণ ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। নির্বাচিত হয়ে অনেকে নিজেকে ‘মুই কি হনুরে’ ভাবসাব ধরেন। যেটি কারো কাম্য নয়।

মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আছিয়া আলমের সভাপতিত্বে সুধি সমাবেশে বক্তৃতা করেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পিপি শাহ আজিজুল হক প্রমুখ।

এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) সহ বিভিন্ন সামরিক, বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে হাওরের কোনো কৃষি জমিতে বসতি নির্মাণে পরিবেশ অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, অনেকে আইন না মেনে হাওরের কৃষি জমির যেখানে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। এটি করবেন না। আইনটি মানতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে সচেতন থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় মিঠামইনে তাঁর শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় শিক্ষা জীবন ও রাজনীতিসহ নানা বিষয়ের স্মৃতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একসময় এ অঞ্চলের মেয়েরা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্তও পড়াশুনা করতো না। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থার কারণে এখানের কেউ মারা গেলে জানাযা শেষে তাঁর লাশ হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দেয়া হতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই।

এর আগে দুপুরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জ থেকে হেলিকপ্টারযোগে মিঠামইন উপজেলায় পৌঁছলে সেখানে তাঁকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরে তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ শেষে কামালপুর গ্রামের বাড়ির পাশের জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে বাবা হাজী মো. তায়েব উদ্দিন এবং মা তমিজা খাতুনের কবর জিয়ারত করেন।