হাওর অঞ্চলে এক সময় কেবল বর্ষা মৌসুমে মাছ চাষ করা হতো। তবে এখন ওই অঞ্চলের মানুষের মনে নতুন আলো হয়ে যুক্ত হয়েছে— ভাসমান সব্জি চাষ। সেখানে এখন শুকনো মৌসুমের সাথে সাথে বর্ষা মৌসুমেও চাষ হচ্ছে নানাপ্রকার সব্জি। কয়েক বছর আগেও যা সেখানে দেখা যেত না।
এ পদ্ধতির সব্জি চাষে কৃষকরা সফলতাও পাচ্ছেন আশানুরূপ। ফলে হাওরে ভাসমান সব্জি চাষ করে সচ্ছলতার মুখ দেখছেন হবিগঞ্জের হাজারো কৃষক।
হবিগঞ্জে কয়েক বছর আগেও বর্ষা মৌসুমে কৃষকের মাছ ধরা ছাড়া তেমন কাজ ছিল না। তবে কয়েক বছর হল শুরু হয় এই নব পদ্ধতির সব্জি চাষ। তা ছাড়া এই সব্জিতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। ফলে এটা স্বাস্থ্যসম্মতও। এ কারণে এর চাহিদাও বেশী।
ভাসমান সব্জি চাষ সম্পর্কে স্থানীয় কৃষকরা জানালেন, ভাসমান সব্জি চাষে বেশ সুবিধা। এতে অতিরিক্ত খরচ কিংবা পরিশ্রম করতে হয় না। কচুরীপানা পচিয়ে জৈব সার তৈরী করা হয়। এ সার প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে চারা রোপণ করা হয়। পরে এ ড্রাম নামিয়ে দেওয়া হয় পানিতে। ভাসমান ড্রাম পানি বাড়া ও কমার ওপর ভিত্তি করে— উপরে ওঠে বা নীচে নামে। এর উপর তৈরী করা হয় মাচা। এ মাচায় গাছ বাড়তে থাকে। আবার কখনো চাটাইয়ের উপর জৈব সার দিয়ে সব্জি চারা রোপণ করা হয়। এ ছাড়া অনেক কচুরীপানা একত্র করে বিশেষ কায়দায় বেঁধে ফেলা হয়। পরে এর উপর জৈব সার দিয়েও সব্জি চাষ করা হয়।হয়।
কৃষক রাজেন্দ্র দাস এ সম্পর্কে বললেন, ‘তারা ভাসমান পদ্ধতিতে সব্জি চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমরা নিজেরাই সার তৈরী করি। এ কারণে খরচ অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া আমরা বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদন করায় এর চাহিদাও বেশী।”
ভাসমান সব্জি চাষ বিষয়ে কৃষাণী মণি রাণী সরকারের মত, “ভাসমান সব্জি চাষ খুব কঠিন কাজ নয়। নারীরাও বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি নিকটবর্তী স্থানে এ চাষ করতে পারে।”
স্কুলছাত্রী সুমনা আক্তার এ বিষয়ে বলল, ‘আমরা যারা লেখাপড়া করি তারা লেখাপড়ার ফাঁকে ভাসমান সব্জি চাষে মা-বাবাকে সাহায্য করি। তা ছাড়া নিজেরাও আলাদাভাবে চাষ করেও নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহ্ আলম ভাসমান সব্জি চাষ বিষয়ে বললেন, ‘চাষাবাদে হবিগঞ্জের কৃষক আগের চেয়ে অনেক অগ্রসর হচ্ছেন। আমরা নিয়মিত হবিগঞ্জের হাওর এলাকা— বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, নবীগঞ্জ ও লাখাইয়ে ভাসমান সব্জি চাষের ওপর কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ভাসমান সব্জি চাষ কৃষকদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।”