বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পদায়ন করা যাবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার জারি করা নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে নিয়োগ পেতে হলেও মাঠ প্রশাসনে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
মন্ত্রণালয় বা বিভাগে পদায়নের শর্ত ২০০৬ সালের ১ জুলাই এবং এরপরে চাকরিতে যোগ দেওয়াদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
চাকরিকাল ছয় বছর হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও মাঠ প্রশাসনের অভিজ্ঞতাসহ চাকরি মেয়াদ আট বছর হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাবেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, চাকরির শুরুতে সহকারী কমিশনারদের নিজ বিভাগ বাদে অন্য বিভাগে পদায়ন করা হবে। শিক্ষানবিশকালে কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করা হবে না। তবে প্রশাসনিক কারণে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে একই বিভাগের আওতাধীন অন্য কোনো জেলায় বদলি করা যাবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, সিনিয়র স্কেল প্রাপ্তি এবং চাকরির মেয়াদ কমপক্ষে ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে পদায়নের জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকায় (ফিটলিস্ট) অন্তর্ভুক্তির জন্য বিবেচনা করা যাবে।
এই তালিকায় থাকা কোনো কর্মকর্তাকে নিজ বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগে কমপক্ষে দুই বছরের জন্য ইউএনও হিসেবে পদায়ন করা হবে। কোনো কর্মকর্তাকে তার স্বামী বা স্ত্রীর জেলায় পদায়ন করা যাবে না বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও ইউএনও হিসেবে চাকরির অভিজ্ঞতা এবং মোট চাকরিকাল কমপক্ষে আট বছর পূর্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করা হবে।”
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কাজে গতিশীলতা আনতে এই নীতিমালা করা হয়েছে।
চাকরির মেয়াদ দুই বছর পূর্তি এবং চাকরি স্থায়ীকরণের পর জ্যেষ্ঠতার ক্রম অনুসরণ করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কমপক্ষে দুই বছরের জন্য পদায়ন করা হবে।
সহকারী কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহারের পর সহকারী কমিশনার বা জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার পদে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিভাগে ন্যস্ত করা হবে।
মাঠ প্রশাসনে পদায়নের ক্ষেত্রে দেশের জেলাগুলোকে অবকাঠামোগত অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, চিকিৎসা সুবিধার সঙ্গে রাজধানী, বিভাগ ও জেলা শহর থেকে দূরত্ব বিবেচনায় ‘ক’, ‘খ’, ও ‘গ’ শ্রেণীতে এবং উপজেলাগুলোকে ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও ‘ঘ’ শ্রেণীতে বিন্যাস্ত করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা ও কর্মদক্ষতা বিবেচনায় বিভিন্ন শ্রেণীর জেলা/উপজেলায় পদায়ন করা হবে। পার্বত্য ও অন্য দুর্গম কর্মস্থলে কোনো কর্মকর্তার কর্মকাল হবে দুই বছর। কোনো কর্মকর্তাকে এই জেলায় একাধিকবার পদায়ন করা যাবে না। তবে শিক্ষানবিশকালে পদায়নকে নিয়মিত পদায়ন হিসেবে গণ্য করা হবে না।
কোনো কর্মকর্তার উচ্চশিক্ষার স্বার্থে কর্মরত পদে নূন্যতম চাকরিকালের শর্ত শিথিল করা যাবে উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো কর্মকর্তার নিজের অথবা স্ত্রী/স্বামী/সন্তানের দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসার স্বার্থে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত মেয়াদকালের পূর্বে সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন করা যাবে।
কোনো কর্মকর্তার স্বামী/স্ত্রী উভয়েই চাকরিজীবী হলে একই কর্মস্থলে বা যথাসম্ভব নিকটবর্তী কর্মস্থলে পদায়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে পদায়ন নীতিমালায়।