কলকাতার তারকাদের পূজার স্মৃতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পূজা মানেই হিন্দু ধর্মাবলীদের মহাউৎসব। বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব। হিন্দু তারকাদের এ উৎসবে আনন্দের সীমা থাকে না। যদিও তারকা হবার সুবাদে সাধারণ আট-দশটা মানুষের মতো করে পূজার আনন্দ করতে পারেন না তারা। তারপরেও পূজার চুটিয়ে উপভোগ করতে কমতি রাখেন না তারা। আর কলকাতার তারকাদেরতো জুড়িই নেই।

তবে বর্তমানের চেয়ে অতীতের পূজাগুলো ছিলো তাদের আরো উপভোগ্য। কলকাতার তারকাদের সেই সব স্মৃতি মাখা পূজার গল্প ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন তানভীর আহম্মেদ সরকার।

শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়
পূজা নিয়ে অনেক মজার স্মৃতি আছে শ্রাবন্তীর ঝুলিতে। বলেন, পূজার স্মৃতির কথা বলতে হলে অবশ্যই বলতে হবে ছোটবেলার পূজার কথা। তখন তো অনেক আনন্দ হতো পূজায়। এখনো পূজার ছুটি শব্দটি শুনলে উত্তেজনায় লোম দাঁড়িয়ে যায়। পূজা আমাদের জন্য সেরা ও বড় উৎসব। ছোটবেলা থেকেই পূজা উপভোগ করতাম।

সারা রাত জেগে ঠাকুর দেখতাম। যখন একটু বড় হই আমাকে আর দিদিকে দূরে কোথায়ও পূজায় নিয়ে যেত না। তবে বাড়ির সামনের পূজামন্ডপে বেশ মজা করতাম। এবারের পূজায় পরিবার বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ করব। ছোটবেলায় পূজার সময় একবার মেলাতে হাঁরিয়ে গেছিলাম। তখন বয়স ৫-৬ বছর হবে। মেলার মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম। এমন সময় কাঁন্না দেখে একটি পরিবার এগিয়ে আসেন এবং আমার পরিচয় যেনে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন। বাবা-মা খুব টেনশনে ছিলেন। চারদিকে অনেক খোঁজাখুজি করেন।

সব সময় অপেক্ষায় থাকতাম পূজার নতুন জামা ও জুতার। কবে বাবা শপিং করতে নিয়ে যাবেন। পূজায় উপহার দিতে ও পেতে দুটিই ভালো লাগে। ছোটবেলায় দেখতাম বড় বড় তারকারা পূজা উদ্বোধন করতেন। এখন আমিও করছি বিষয়টি খুব উপভোগ করি। পূজা সব সময় আমার কাছে একই। পূজায় পূজো পূজো গন্ধ, সিতুর খেলা ও অঞ্জলী দেয়া। প্রতি বছর পূজার জন্য অপেক্ষা করি। মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে পূজা দেখতে যাই।

মিমি চক্রবর্তী
ছোটবেলায় আমি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। তাই পরিবার থেকে একা একা পূজা দেখা বারণ ছিল। ব্যালকাল থেকেই দেখতাম আমার বয়সী মেয়েরা সেজেগুজে ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছে, ছেলেদের সঙ্গে নিত্যনতুন প্রেম করছে, হাসি-‌ঠাট্টা করছে। ইচ্ছে করতো ওদের সঙ্গে মিশে যাই। একবার পূজার ভোগ দিতে আমাদের হাউজিংয়ে এসেছিল একটি ছেলে। পরে শুনেছি, ছেলেটি আমাদের দারোয়ানের হাতে আমার নামে একটা চিঠি দিয়ে যায়। কিন্তু সেই চিঠি পড়া তো দূরের কথা, চোখে দেখারও সুযোগ পাইনি। তার আগেই আমার কাজিনরা দারোয়ানের কাছ থেকে সেই চিঠি নিয়ে নেয়। তারপর সেই চিঠির যে কী হলো আজও জানি না। জানি না কে সেই ছেলে, যে সাহস করে আমাকে চিঠি দিয়ে গিয়েছিল।

আবীর চট্রোপাধ্যায়
ছোটবেলার পূজায় ছিল লাগামহীন আনন্দ। আমার পূজা ছিল অন্য আট দশজন ছেলে-মেয়ের মতো। ‌একবার মনে আছে, তখন আমি একাদশ বা দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পূজায় সাংঘাতিক বৃষ্টি হয়েছিল। গোটা পুজাটাই মাথা গরম করে কাটিয়েছিলাম। সব পরিকল্পনা বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল। পরে যখন শেয়ার মার্কেটে চাকরি করতাম, তখন পূজায় আমার ছুটি ছিলনা। অফিসে যেতে হত। কারণ ওই অফিস চলত মুম্বাইয়ের নিয়মে। তখন বৃষ্টি হলে খুব খুশি হতাম। আমাকে অফিস যেতে হচ্ছে, আর বন্ধুরা আনন্দ করবে!‌ ওটা ছিল স্যাডিস্টিক প্লেজার!‌ তবে পূজায় আমার কোনো প্রেম হয়নি। কোনো মেয়ে আমাকে পাত্তা দিত না। তাছাড়া আমার অত সাহস বা আত্মবিশ্বাসও ছিল না।

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ছোটবেলার একটা স্মৃতি এখন মনে পড়ে। পূজার সময় আমার মাসির বাড়িতে সত্যনারায়ণ পূজা হত। সেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে আনন্দ করতাম। সেটা ছিল আমাদের একটা বড় উৎসব। ছোটবেলায় কাজিনদের সঙ্গে নাচের অনুষ্ঠান করতাম। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা মনে পড়ে সেটা হল, ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে যাওয়া আর বাবার সঙ্গে পূজার জুতা কিনতে যাওয়া। আর প্রতি বছরই আমার একই আবদার ছিল হিল জুতা। বাবা কিছুতেই হিল জুতা কিনে দেবেন না, আর আমি হিল জুতা কিনবই। সে কারণে বাড়িতে আমাকে সবাই খেপাত।

আরেকটা স্মৃতি খুব মনে পড়ে। তখন ক্লাস থ্রি-তে পড়তাম। কেনাকাটা করতে গিয়ে ম্যানিকুইনের (ডল) গায়ে একটা জামা দেখে মায়ের কাছে বায়না ধরেছিলাম- ওই জামাটাই আমার চাই। ওটা কেনার জন্য দোকানের সামনে ফুটপাথে বসে পড়েছিলাম নাছোড়বান্দার মতো।

শুভশ্রী গাঙ্গুলি
আমার ছোটবেলার পূজা কেটেছে বর্ধমানে। তখন যে পূজায় খুব মজা করতাম তা নয়। লাইনে দাঁড়িয়ে পূজা দেখা আমার কোনদিনই পছন্দের ছিলনা। বরং কলকাতায় এসে দুর্গাপূজার মাহাত্ম টের পেয়েছি। তাছাড়া পূজার সময় প্রায়ই মামার বাড়ি চলে যেতাম। সেই স্মৃতি ছিল খুব আদরের। তবে পূজায় কখনো প্রেম হয়নি। আমি ছিলাম অ্যাটিটিউড কুইন‌, তাই কেউ আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়ার সাহস পেত না।

প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জী
পূজা এলে মায়ের কথা বেশি করে মনে পড়ে। আমার ছোটবেলার পূজার যাবতীয় স্মৃতি দমদমে মামার বাড়ির পূজাকে ঘিরে। খুব বড় করে পূজা হত। আত্মীয়স্বজনে সারা বাড়ি গম-‌গম করত। আর আমরা যারা ছোট, যারা ওই ‌বাড়ির নাতি-‌নাতনি, তাদের ছিল আলাদা আদর। সত্যিই স্বপ্নের দিন। যখন একটু বড় হলাম, তখন দুর্গা পূজা আমাদের ভ্যালান্টাইনস ডে হয়ে উঠল। তখন অবশ্য ভ্যালান্টাইনস ডে-‌র নাম শুনিনি আমরা।

কিন্তু পূজার প্যান্ডেলে ঠিকই আবিষ্কার করতে পারতাম বিশেষ কোনো একজনকে। তারপর, প্যান্ডেলেই অপেক্ষা করতাম, কখন সে আসবে। প্রেমটা অবশ্য হয়নি কখনো, কিন্তু প্রতিবারই আবিষ্কার আর প্রতীক্ষার কমতি ছিল না। একটু বড় হয়ে তিন-‌চারজন বন্ধু মিলে ট্যাক্সি করে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছি। তারপর খেয়েদেয়ে সব পয়সা খরচ করে ফেলেছি। ফেরার সময় তাই নো-‌ট্যাক্সি। সেই হাঁটাতেও যে কী মজা ছিল, সেটা যেন এখনো অনুভব করতে পারি।

পায়েল মুখার্জি 
পূজোর সময় অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। সবার সঙ্গে দেখা করা আনন্দ ভাগাভাগি করা। পূজার স্মরণীয় ও মজার ঘটনা হচ্ছে প্রেম ও চুমু। এটার অন্যরকম মজা। তাছাড়া দশমীতে শাড়ি পড়ার মজাই অন্যরকম। নতুন জামা কাপড় পড়া, সাজগোজ করা। পাড়ার ছেলেরা দেখবে। নতুন প্রেম হবে। তবে পূজার সময়ের প্রেম বেশি মনে পরে। প্রতিটি পূজায় প্রেম হয়। অনেক ছেলেই তখন লাইন মারে। আমিও চোখাচোখি করি।

পূজায় নতুন নতুন প্রেম হয় আবার পূজার পর ভেঙ্গে যায়। পূজাই মানেই প্রেম। তাই পূজার উন্মাদনা অন্যরকম। কখনো কেউকে প্রেমের প্রস্তাব দেইনি। তবে প্রতি বছর পূজার সময় কম করে হলেও ৮-১০টি প্রেমের প্রস্তাব পাই। স্টেজে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হয় আর স্টেজের পাশে আমাকে নিয়ে প্রেমের প্রতিযোগিতা হয়। প্রচুর ছেলে বাড়ির সামনে কিংবা পূজামন্ডপের সামনে এসে তাঁকিয়ে থাকত। অনেক প্রেমিকই ভেতরে ভেতরে প্রেম জমা রাখত। কেউ সাহস করে বলতে পারত না (হা..হা..)।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর