ঢাকা ০৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নগদ অর্থে টানাটানি, টাকা গেলো কই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ১৮৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কয়েক বছর ধরে অর্থ সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের পুঁজিবাজার। পাশাপাশি নগদ টাকার সংকটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই অবস্থায় জনমনে একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- দেশের এই টাকা যাচ্ছে কোথায়?

শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুঁজিবাজার এবং খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। যেহেতু এর পুরো অংশই কালো টাকা; তাই সেই অর্থ বিনিয়োগও করছে না, ব্যাংকেও রাখছেন না এই টাকার মালিকরা। ফলে এই অর্থ ব্যাংকের বাইরে এসে তার কিছু অংশ মানুষের কাছে অলস পড়ে আছে। আর কিছু অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযানে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, তাদের ব্যাংক হিসাবেও অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে চলছে অর্থের সংকট। তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকগুলো। স্বাভাবিক একটা ভাবনা, নগদ অর্থে টান পড়েছে। তাহলে দেশের এত টাকা গেলো কোথায়?

তিনি বলেন, বিভিন্ন রকম অবৈধ ব্যবসা করে টাকা উপার্জন করে অনেকে কোথাও কাজে লাগাতে পারছেন না। আবার কোথাও জমা রাখা বা বিনিয়োগ করাও নিরাপদ মনে করছেন না। তাই এসব অর্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে অনেক দিন ধরেই। পুঁজিবাজার অর্থের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। তাহলে টাকা কোথায় রয়েছে? এমন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো খাতে টাকা আটকে আছে বা দেশের বাইরে চলে গেছে।

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘এমন হতে পারে- দেশের টাকায় কেউ বিদেশে যেমন; মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে ‘সেকেন্ড হোম’ তৈরি করেছেন। অথবা বিদেশের ব্যাংকগুলোতে জমা রেখেছেন। কিংবা যেহেতু অনেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন; তাই ব্যাংকে না রেখে নিরাপদ হিসেবে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। এসব কারণে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমেছে।’

অলস টাকা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর মন্তব্য করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কেউ যদি নিজের কাছে অর্থ জমা করে রেখে দেন, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির। কারণ এই টাকাটা অলস পড়ে আছে। যা থেকে কোনো আয় আসছে না। অথচ তা বিনিয়োগ করলে অর্থনীতি আরো সচল থাকতো।’

চলমান শুদ্ধি অভিযানে ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজনের কাছ থেকে বেশ কয়েক কোটি নগদ টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অভিযানকে স্বাগত জানাই। এটি চলমান থাকলে অবৈধ উপায়ে অর্জন করা অনেক অলস অর্থ বের হয়ে আসবে। কিন্তু অতীতে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে হওয়া অভিযান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এই অভিযানও যদি মাঝপথে থেমে যায়, তাহলে অলস অর্থ যেমনি উদ্ধার করা যাবে না; তেমনি অর্থ পাচারও বন্ধ হবে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

‘‘ব্যাংকিং সিস্টেম অর্থাৎ ব্যাংকের বাইরে যে নগদ টাকা রয়েছে, সেটা কোনো কোনো মানুষের ঘরে বা সিন্দুকে আটকে রয়েছে। এই অর্থ ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে। এর পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৩শ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এসে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে।’’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে  বিষয়টি নিয়ে বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। বাজার থেকে আস্থা উঠে গেছে। এসব কারণে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমে গেছে।

তিনি বলেন, অনেকে এসব অর্থ বিনিয়োগ না করে নিজের কাছে রেখেছেন। অথবা বিদেশে পাচার করেছেন। শেয়ারবাজারে পুনর্বিনিয়োগ করছেন না। তাই সংকট রয়ে গেছে। তবে সেই টাকা কোনো কোনো স্থানে আছে। সাম্প্রতিক অভিযানেও এর কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ

এই দুই কৌশলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ বের হয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজার থেকেও সিন্ডিকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।

এ দুই খাতের টাকা এখন কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। আর এই টাকার একটা অংশ ক্যাসিনোর মাধ্যমে ভাগ হয়ে গেছে। অন্য একটি অংশ আমদানির আড়ালে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই দুই কারণে অর্থের টানাটানি চলছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ‘সানেম’-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন এই টাকার বড় অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরাও ভাবছেন বিনিয়োগে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তার চেয়েও সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে। যেমন: চলমান শুদ্ধি অভিযানে যে কয়েকজন অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন; এটা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করবে।

অধ্যাপক সেলিম রায়হানের মতে, চলমান শুদ্ধি অভিযান খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এটা চলমান রাখাই উচিত। এতে অনেক কালো টাকার খোঁজ পাওয়া যাবে। আবার মানুষ আস্থার অভাবে ব্যাংকে টাকা রাখছে না। ব্যাংকিং খাতকেও আস্থা অর্জনের জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই মানুষ আবার ব্যাংকমুখি হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলেও অর্থের প্রবাহ বাড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নগদ অর্থে টানাটানি, টাকা গেলো কই

আপডেট টাইম : ০৭:৩৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  কয়েক বছর ধরে অর্থ সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে দেশের পুঁজিবাজার। পাশাপাশি নগদ টাকার সংকটে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই অবস্থায় জনমনে একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- দেশের এই টাকা যাচ্ছে কোথায়?

শীর্ষ স্থানীয় ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুঁজিবাজার এবং খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। যেহেতু এর পুরো অংশই কালো টাকা; তাই সেই অর্থ বিনিয়োগও করছে না, ব্যাংকেও রাখছেন না এই টাকার মালিকরা। ফলে এই অর্থ ব্যাংকের বাইরে এসে তার কিছু অংশ মানুষের কাছে অলস পড়ে আছে। আর কিছু অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাসিনো ও ক্লাবে অভিযানে কোটি কোটি টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে, তাদের ব্যাংক হিসাবেও অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কয়েক বছর ধরে পুঁজিবাজারে চলছে অর্থের সংকট। তারল্য সংকটে ভুগছে ব্যাংকগুলো। স্বাভাবিক একটা ভাবনা, নগদ অর্থে টান পড়েছে। তাহলে দেশের এত টাকা গেলো কোথায়?

তিনি বলেন, বিভিন্ন রকম অবৈধ ব্যবসা করে টাকা উপার্জন করে অনেকে কোথাও কাজে লাগাতে পারছেন না। আবার কোথাও জমা রাখা বা বিনিয়োগ করাও নিরাপদ মনে করছেন না। তাই এসব অর্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন

এ বিষয়ে বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে অনেক দিন ধরেই। পুঁজিবাজার অর্থের অভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে। তাহলে টাকা কোথায় রয়েছে? এমন প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো খাতে টাকা আটকে আছে বা দেশের বাইরে চলে গেছে।

এই অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘এমন হতে পারে- দেশের টাকায় কেউ বিদেশে যেমন; মালয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরে ‘সেকেন্ড হোম’ তৈরি করেছেন। অথবা বিদেশের ব্যাংকগুলোতে জমা রেখেছেন। কিংবা যেহেতু অনেকে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করেছেন; তাই ব্যাংকে না রেখে নিরাপদ হিসেবে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন। এসব কারণে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমেছে।’

অলস টাকা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর মন্তব্য করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কেউ যদি নিজের কাছে অর্থ জমা করে রেখে দেন, তাহলে তা অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির। কারণ এই টাকাটা অলস পড়ে আছে। যা থেকে কোনো আয় আসছে না। অথচ তা বিনিয়োগ করলে অর্থনীতি আরো সচল থাকতো।’

চলমান শুদ্ধি অভিযানে ক্যাসিনোর সাথে সম্পৃক্ত কয়েকজনের কাছ থেকে বেশ কয়েক কোটি নগদ টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারের বিষয়ে তিনি বলেন, এই অভিযানকে স্বাগত জানাই। এটি চলমান থাকলে অবৈধ উপায়ে অর্জন করা অনেক অলস অর্থ বের হয়ে আসবে। কিন্তু অতীতে মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে হওয়া অভিযান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এই অভিযানও যদি মাঝপথে থেমে যায়, তাহলে অলস অর্থ যেমনি উদ্ধার করা যাবে না; তেমনি অর্থ পাচারও বন্ধ হবে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

‘‘ব্যাংকিং সিস্টেম অর্থাৎ ব্যাংকের বাইরে যে নগদ টাকা রয়েছে, সেটা কোনো কোনো মানুষের ঘরে বা সিন্দুকে আটকে রয়েছে। এই অর্থ ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেছে। এর পরিমাণ গত অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ৩শ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এসে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে চলে গেছে।’’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে  বিষয়টি নিয়ে বলেন, পুঁজিবাজার থেকে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। বাজার থেকে আস্থা উঠে গেছে। এসব কারণে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমে গেছে।

তিনি বলেন, অনেকে এসব অর্থ বিনিয়োগ না করে নিজের কাছে রেখেছেন। অথবা বিদেশে পাচার করেছেন। শেয়ারবাজারে পুনর্বিনিয়োগ করছেন না। তাই সংকট রয়ে গেছে। তবে সেই টাকা কোনো কোনো স্থানে আছে। সাম্প্রতিক অভিযানেও এর কিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ

এই দুই কৌশলে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে অর্থ বের হয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, খেলাপি ঋণের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজার থেকেও সিন্ডিকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়া হয়েছে।

এ দুই খাতের টাকা এখন কালো টাকায় পরিণত হয়েছে। আর এই টাকার একটা অংশ ক্যাসিনোর মাধ্যমে ভাগ হয়ে গেছে। অন্য একটি অংশ আমদানির আড়ালে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এই দুই কারণে অর্থের টানাটানি চলছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং ‘সানেম’-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান মনে করেন এই টাকার বড় অংশ দেশের বাইরে চলে গেছে।

অধ্যাপক সেলিম রায়হান

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাচ্ছে না। বিনিয়োগকারীরাও ভাবছেন বিনিয়োগে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তার চেয়েও সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ আছে। যেমন: চলমান শুদ্ধি অভিযানে যে কয়েকজন অবৈধ ক্যাসিনোর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন; এটা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করবে।

অধ্যাপক সেলিম রায়হানের মতে, চলমান শুদ্ধি অভিযান খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এটা চলমান রাখাই উচিত। এতে অনেক কালো টাকার খোঁজ পাওয়া যাবে। আবার মানুষ আস্থার অভাবে ব্যাংকে টাকা রাখছে না। ব্যাংকিং খাতকেও আস্থা অর্জনের জন্য কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই মানুষ আবার ব্যাংকমুখি হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলেও অর্থের প্রবাহ বাড়বে।