দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মানবাধিকারসহ অন্যান্য দিকে বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এসব কারণে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
নেদারল্যান্ডস সফরকালে দ্য হেগ-এ হোটেল আমরাথ কুরহাসে বৃহস্পতিবার দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে তার সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের জিডিপি ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়ছে, রপ্তানি আয় ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, রেমিট্যান্স দ্বিগুন বেড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলেও ডাচ ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ক্রয়ক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৭তম বৃহৎ অর্থনীতি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতি বিশ্বের এখন সবচেয়ে দ্রুত অগ্রসরমান পাঁচটি অর্থনীতির একটি।
তিনি আরও জানান, গোল্ডম্যান সাচস বাংলাদেশকে পরবর্তী শ্রেষ্ঠ ১১ অর্থনীতির একটি এবং জেপি মরগ্যান বাংলাদেশকে উদীয়মান সেরা ৫ এর একটি অর্থনীতি বলেও উল্লেখ করছে।
দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মানবাধিকারসহ অন্যান্য দিকে বাংলাদেশের অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
দেশের কৃষি ও শিল্পোন্নয়নে প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশের অগ্রগতির কথাও ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগ নীতি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উদার। আমরা আইন করে বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা দিচ্ছি, কর অবকাশ দিচ্ছি, মেশিনারি আমদানিতে থাকছে শুল্ক ছাড়, রেমিট্যান্স রয়্যালটিসহ অন্যান্য সুবিধা থাকছে। যার মধ্যে রয়েছে স্বল্প মজুরিতে পরিশ্রমি তরুণ শ্রমগোষ্ঠী, স্বল্প খরচে ব্যবসা চালু করার সুযোগ। ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বাজারে কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তৈরি পোশাক খাতে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারী দেশ। তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, উন্নত মজুরি ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে নেদারল্যান্ডস সরকারের সহযোগিতার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশে বস্ত্র, চামড়া, রাসায়নিক, ওষুধ, সিরামিক, জাহাজনির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, প্ল্যাস্টিক সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল ও ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী, তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ আরও বিভিন্ন খাতে নেদারল্যান্ডসের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের ৮টি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এগুলো শতভাগ রপ্তানি পণ্য উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। যে কেউ চাইলে, আসুন জোনগুলো নিজেদের মতো করে তৈরি করে নিন, বাণিজ্য করুন- বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
ডাচ বিনিয়োগকারীদের আবারও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, একসঙ্গে কাজ করতে আমরা কোটি মানুষের ভাগ্য বদলে ভূমিকা রাখি।
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২৫ মিনিটের প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। এতে নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন। প্রধানমন্ত্রী সেসব প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দেন।
সেমিনার শেষে প্রধানমন্ত্রী ‘টমেটো ওর্য়াল্ড’ পরিদর্শনে যান। বিকেলে তিনি বাংলাদেশি প্রবাসীদের একটি নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।