হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ কয়েকশত তরুণের ভিড় জমে। যাদের কেউই বিমানের যাত্রী ছিলেন না।
জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে বিদায় জানাতে সিলেটের নেতাকর্মীরা বিমানবন্দরের ‘ভিআইপি লাউঞ্জে’ ভিড় জমান। এরপর নেতাকর্মীদের অনেকেই উড়োজাহাজটির দরজা পর্যন্ত চলে যান। সেখানে গিয়ে অনেকে সেলফিও তোলেন।
বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় এভাবে তরুণদের ভিড় জমিয়ে বিশৃঙ্খলা করার ঘটনায় কর্মকর্তাসহ অবাক হয়েছেন যাত্রীরাও।
যদিও সে ঘটনায় কেউ বিমানবন্দরের টার্মাকে ও বিমানের দরজা পর্যন্ত যাননি বলে দাবি করেছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ।
তবে ফজলে হাসান সৌমিক নামের এক ছাত্রলীগকর্মীর ফেসবুকে পোস্ট করা ছবি বলছে ভিন্ন কথা।
উড়োজাহাজের সিঁড়ির গোড়ায় ফুলের তোড়াসহ দাঁড়িয়ে তোলা পাঁচটি ছবি ফেসবুক পোস্ট করেন ওই ছাত্রলীগকর্মী।
সেখানে ফজলে হাসান লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মানিত সভাপতি শোভন ভাই চার দিনের সিলেট সফর শেষে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রার প্রাক্কালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভাইকে বিদায় জানাতে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের আগামী দিনের কান্ডারি, মুকুটহীন ছাত্রনেতা নাজমুল ইসলাম ভাইয়ের সঙ্গে।’
তবে বিমানবন্দরটির ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বলেছেন, সেদিন ছাত্রলীগের সভাপতির বিদায়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা ভিড় হয়েছিল। তাদের অনেকে ভিআইপি লাউঞ্জেও প্রবেশ করে। কিন্তু কেউ টার্মাকে যাননি। আর এতে ভিআইপি লাউঞ্জের কোনো ক্ষতি হয়নি।
কিন্তু ছাত্রলীগকর্মীর সেই ফেসবুক পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বিমানবন্দরের দুই নিরাপত্তাকর্মী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের সভাপতির বিদায়ে প্রচণ্ড ভিড় ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। সিলেট ছাত্রলীগের কয়েকশত নেতাকর্মী এসেছিলেন সেদিন। তার উৎসাহ, হইচইয়ের মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাকে বিদায় দেন। ন্যূনতম শৃঙ্খলাও মানছিলেন না এসব নেতাকর্মীরা। অনেকেই সেলফি তুলতে তুলতে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়িয়ে টার্মাকে উড়োজাহাজের সিঁড়ির গোড়ায় তথা রানওয়েতে চলে যান।
বিষয়টি মেনে নেয়ার অযোগ্য মন্তব্য করে বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ছাত্রলীগের সভাপতি কোনো জনপ্রতিনিধি বা ভিভিআইপি নন যে তাকে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা পেতে হবে। তাছাড়া ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারে অনুমোদিত ব্যক্তির সঙ্গে দুজনের বেশি দর্শনার্থী ঢোকার নিয়ম নেই। আর বিমানবন্দরের টার্মাকে সংরক্ষিত এলাকায় ক্রু, যাত্রী ও অনুমোদিত ব্যক্তিরা ব্যতিত আর কারও প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এর পরও এমন ঘটনা ঘটল।
তিনি বলেন, সম্প্রতি নানা ঘটনায় সিলেটসহ বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তামান নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে রানওয়েতে এতো মানুষের জড়ো হয়ে সেলফি তোলার ঘটনা ঘটল। বিষয়টি বিমানবন্দরের নিরাপত্তামানকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার সিলেটে সাংগঠনিক সফরে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী। সে সফরে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মীসভা করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরেন শোভন। তাকে বিদায় জানাতে সিলেট বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ভিড় জমিয়ে বিশৃঙ্খলা করেন শতাধিক নেতাকর্মী।