ঢাকা ০৫:০৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

লালচে বাদামি চোখের লালশীর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৯
  • ২৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরে হাতিয়া লঞ্চ ঘাটে পৌঁছলাম। সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিলাম নিঝুম দ্বীপের কালামচর সুইস বাজার ঘাটে। সকাল ৯ টায় পৌঁছে নাস্তা শেষে নৌকায় উঠলাম। মাঝি তাজুদ্দিন পূর্ব পরিচিত থাকায় আমাদের গন্তব্য তার জানা ছিলো। আমরা যাচ্ছি বিরবিরিয়া চরে। সাগরে তখন জোয়ার চলছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সাগর পাড়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। নৌকা থেকে নামার সুযোগ নেই। কারণ কাদামাটিতে হাঁটু সমেত পা গেঢ়ে যায়। তাই নৌকায় বসেই সাগরের ঢেউ আর পাখির বিশ্রাম দেখছিলাম।

স্যান্ডপাইপার বা চা-পাখি প্রজাতির পাখিই বেশী। এক ঝাঁকে প্রায়ই ৫০০ পাখি। এত বড় ঝাঁক কখনো দেখিনি। আমার সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চারজন ছাত্র ছিলেন। তারা পাখি গণনার কাজ করেন।  ঝাঁকের সংখ্যা তাদের কাছ থেকেই জানা। মাথার উপর দিয়ে হাঁস প্রজাতির পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। জোয়ারের সময় এদের বিশ্রামের জায়গার অভাব। এরই মধ্যে চোখে পড়লো ‘লালশির’ হাঁস পাখি। পখিটির নাম শুনেছি। কখনো দেখিনি। তাই উত্তেজনাটা একটু বেশী ছিলো। নৌকায় বসেই কয়েকটা শট নিলাম। যদি উড়ে যায় সেই ভয়ে। পরে কাছ থেকে খুব ভালো ছবি পেয়েছি।

লালশির Mareca গোত্রের Anatidae পরিবারের ৪৯ সে.মি. দৈর্ঘের মাঝারী আকারের হাঁস জাতীয় পাখি। এদের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে প্রায় ১ কি.গ্রা.। পুরুষ ও মেয়ে হাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষের কপাল হলুদ। মাথা তামাটে। বগল ধূসর। লেজতল কালো। বুক প্রায়ই পাট বর্ণের হয়। ওড়ার সময় ডানার সাদা অগ্রভাগ লক্ষ্য করা যায়। ঠোঁট নীলচে রঙের। মেয়ে হাঁসের বগল পীতাভ। পেট সম্পূর্ণ সাদা। ডানা খয়েরী। ঠোঁট ধূসর ও নীলে মিশানো। উভয়ের চোখ লালচে বাদামি। উভয়ের পায়ের পাতা কালো। প্রজননকালে পুরুষ হাঁসের পিঠে কালো সূক্ষ লাইন দেহের তলে সাদা রং দেখা যায়। অন্য সময় মেয়ে হাঁসের মতো দেখায়।

লালশির হাঁস পাখি উপকূলীয় এলাকায় অগভীর পানি, নদী, ডোবা, হাওর, জোয়ার-ভাটার খাঁড়ি ও লতাপাতায় ঘেরা জলাশয়ে বিচরণ করে। সাধারণত এরা বড় বড় ঝাঁকে থাকে। একেকটি ঝাঁকে প্রায় হাজারের উপর দেখা যায়। এরা উপকূল বা জলাশয়ের পাড়ে হেঁটে বেড়ায়। অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে খাবার খোঁজে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ, ভেজা ঘাস, পানির পোকামাকড় ইত্যাদি।

লালশির হাঁস আমাদের দেশে শীত মৌসুমে পরিযায়ী হয়ে খাবারের জন্য আসে। এরা আমাদের দেশে প্রজনন করে না। তাই প্রজননকালে ইউরোপ ও আফ্রিকায় চলে যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন সময়। সেই সময় সাইবেরিয়ায় পানির কাছাকাছি ঝোঁপের ভিতর মাটিতে ঘাসের উপর পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। নিজেদের বানানো বাসায় ৭-১২টি ডিম দেয়। মেয়ে লালশির ডিমে তা দিয়ে ২২-২৫ দিনে বাচ্চা ফোটায়।

আমাদের দেশে শীতকালে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের জলাশয়, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় নদীতে বা সাগরে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ইউরোপ হয়ে আফ্রিকার উত্তর অংশে ও এশিয়া পর্যন্ত এদের বিচরণ আছে। এশিয়া মহাদেশে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ,পাকিস্তান ও চীনেও পাওয়া যায়।

বাংলা নাম: লালশির হাঁস

ইংরেজি নাম: Eurasian Wigeon.

বৈজ্ঞানিক নাম: Anas penelope.

লেখক ছবিগুলো নিঝুম দ্বীপের বিরবিরিয়াচর থেকে তুলেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ক্যাটরিনার হাতে ২০ বার থাপ্পড় খেয়েছিলেন ইমরান খান

লালচে বাদামি চোখের লালশীর

আপডেট টাইম : ১০:২৯:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোরে হাতিয়া লঞ্চ ঘাটে পৌঁছলাম। সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে রওনা দিলাম নিঝুম দ্বীপের কালামচর সুইস বাজার ঘাটে। সকাল ৯ টায় পৌঁছে নাস্তা শেষে নৌকায় উঠলাম। মাঝি তাজুদ্দিন পূর্ব পরিচিত থাকায় আমাদের গন্তব্য তার জানা ছিলো। আমরা যাচ্ছি বিরবিরিয়া চরে। সাগরে তখন জোয়ার চলছে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি সাগর পাড়ে বিশ্রাম নিচ্ছে। নৌকা থেকে নামার সুযোগ নেই। কারণ কাদামাটিতে হাঁটু সমেত পা গেঢ়ে যায়। তাই নৌকায় বসেই সাগরের ঢেউ আর পাখির বিশ্রাম দেখছিলাম।

স্যান্ডপাইপার বা চা-পাখি প্রজাতির পাখিই বেশী। এক ঝাঁকে প্রায়ই ৫০০ পাখি। এত বড় ঝাঁক কখনো দেখিনি। আমার সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চারজন ছাত্র ছিলেন। তারা পাখি গণনার কাজ করেন।  ঝাঁকের সংখ্যা তাদের কাছ থেকেই জানা। মাথার উপর দিয়ে হাঁস প্রজাতির পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। জোয়ারের সময় এদের বিশ্রামের জায়গার অভাব। এরই মধ্যে চোখে পড়লো ‘লালশির’ হাঁস পাখি। পখিটির নাম শুনেছি। কখনো দেখিনি। তাই উত্তেজনাটা একটু বেশী ছিলো। নৌকায় বসেই কয়েকটা শট নিলাম। যদি উড়ে যায় সেই ভয়ে। পরে কাছ থেকে খুব ভালো ছবি পেয়েছি।

লালশির Mareca গোত্রের Anatidae পরিবারের ৪৯ সে.মি. দৈর্ঘের মাঝারী আকারের হাঁস জাতীয় পাখি। এদের ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে প্রায় ১ কি.গ্রা.। পুরুষ ও মেয়ে হাঁসের চেহারায় পার্থক্য আছে। পুরুষের কপাল হলুদ। মাথা তামাটে। বগল ধূসর। লেজতল কালো। বুক প্রায়ই পাট বর্ণের হয়। ওড়ার সময় ডানার সাদা অগ্রভাগ লক্ষ্য করা যায়। ঠোঁট নীলচে রঙের। মেয়ে হাঁসের বগল পীতাভ। পেট সম্পূর্ণ সাদা। ডানা খয়েরী। ঠোঁট ধূসর ও নীলে মিশানো। উভয়ের চোখ লালচে বাদামি। উভয়ের পায়ের পাতা কালো। প্রজননকালে পুরুষ হাঁসের পিঠে কালো সূক্ষ লাইন দেহের তলে সাদা রং দেখা যায়। অন্য সময় মেয়ে হাঁসের মতো দেখায়।

লালশির হাঁস পাখি উপকূলীয় এলাকায় অগভীর পানি, নদী, ডোবা, হাওর, জোয়ার-ভাটার খাঁড়ি ও লতাপাতায় ঘেরা জলাশয়ে বিচরণ করে। সাধারণত এরা বড় বড় ঝাঁকে থাকে। একেকটি ঝাঁকে প্রায় হাজারের উপর দেখা যায়। এরা উপকূল বা জলাশয়ের পাড়ে হেঁটে বেড়ায়। অগভীর জলে মাথা ডুবিয়ে খাবার খোঁজে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে জলজ উদ্ভিদ, ভেজা ঘাস, পানির পোকামাকড় ইত্যাদি।

লালশির হাঁস আমাদের দেশে শীত মৌসুমে পরিযায়ী হয়ে খাবারের জন্য আসে। এরা আমাদের দেশে প্রজনন করে না। তাই প্রজননকালে ইউরোপ ও আফ্রিকায় চলে যায়। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন সময়। সেই সময় সাইবেরিয়ায় পানির কাছাকাছি ঝোঁপের ভিতর মাটিতে ঘাসের উপর পালক দিয়ে বাসা বাঁধে। নিজেদের বানানো বাসায় ৭-১২টি ডিম দেয়। মেয়ে লালশির ডিমে তা দিয়ে ২২-২৫ দিনে বাচ্চা ফোটায়।

আমাদের দেশে শীতকালে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের জলাশয়, হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় নদীতে বা সাগরে পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ইউরোপ হয়ে আফ্রিকার উত্তর অংশে ও এশিয়া পর্যন্ত এদের বিচরণ আছে। এশিয়া মহাদেশে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ,পাকিস্তান ও চীনেও পাওয়া যায়।

বাংলা নাম: লালশির হাঁস

ইংরেজি নাম: Eurasian Wigeon.

বৈজ্ঞানিক নাম: Anas penelope.

লেখক ছবিগুলো নিঝুম দ্বীপের বিরবিরিয়াচর থেকে তুলেছেন।