হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাম তার ‘রাজা বাবু’। খাবারের তালিকাও অনেকটা রাজার মতোই। না এই রাজাবাবু কোনো মানুষের নাম নয়। ৪৫ মণ ওজনের গরু এটি। দেশীয় পদ্ধতিতে লালন পালন করা বিশালাকৃতির গরুটি লালন পালন করে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের জামিরতা গ্রামের মানিক ব্যাপারি। জেলার ‘সবচেয়ে বড়’ গরুটি দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ ভিড় করছেন বাড়িটিতে।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ ভিড় করছেন ‘রাজা বাবুকে’ একনজর দেখতে। আসছে ঈদুল আজহায় তিন বছর বয়সী ‘রাজাবাবুকে’ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার মালিক মানিক ব্যাপারি। এজন্য দাম চেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। গরুটি ঈদের এক সপ্তাহ আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা কোরবানির পশুর হাটে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন মানিক ব্যাপারি। শুধু রাজাবাবুই নয়, আসন্ন ঈদে বিক্রির জন্য আরও ২১টি গরু লালন-পালন করেছেন মানিক।
‘রাজাবাবুর’ খবর ছড়িয়ে পড়লে গরুটিকে একনজর দেখতে শত শত মানুষ মানিক ব্যাপারীর বাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করছেন।
মানিক ব্যাপারির গরুর খামারে কাজ করা কর্মচারী রতন সরকার জানান, প্রতিদিন ভিড় সামলাতে তাদের বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, ‘রাজা বাবুকে’ বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। কারণ এর ওজন ও আকার অন্য গরুর চেয়ে ২/৩ গুণ বেশি। গরুটিকে সম্পূর্ণ সুষম খাদ্য যেমন, কাঁচা ঘাস, তিল ও সরিষার খৈল, ছোলা, গম ও ভুট্টার ভূষি, ভাতের মাড় ও ভাল মানের খড় খাওয়ানো হয়। রোগজীবাণুর হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তাকে সাবান ও শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করানো হয়। রাখা হয় উন্নত পরিবেশে। মশা থেকে বাঁচাতে রাখা হয় মশারির ভেতরে। এছাড়াও জ্বালানো হয় কয়েল।
রাজাবাবুকে দেখতে আসা জামিরতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র সাকিল রানা জানান, স্কুলে এসে রাজাবাবুর কথা শুনে টিফিনের সময় দেখতে এসেছেন। সে এর আগে এতোবড়ো ষাঁড় দেখেনি বলে জানায়।
একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র রাকিবুল ইসলাম সুমন, আশিকুল ইসলাম ও রাকিবুল ইসলাম অরণ্য জানায়, তাদের এলাকার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় আকারের ষাঁড় গরু। তাই প্রায় প্রতিদিনই টিফিনের ফাঁকে গরুটিকে একনজর দেখতে আসে।
গরুর মালিক মানিক ব্যাপারী বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে গরু লালন পালন করছি। প্রতিবছর কোরবানির হাটে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৪০/৪৫টি করে ষাঁড় গরু বিক্রি করি। এগুলোর দাম দুই থেকে সাড়ে চার লাখের মধ্যে থাকে। এবারই প্রথম ৪৫ মণ ওজনের রাজাবাবুকে ফতুল্লার হাটে তুলতে যাচ্ছি। এরই মধ্যে বাড়ির ওপর এসে একাধিক ক্রেতা ১০ লাখ টাকা দাম বলেছে। কিন্তু আমি সর্বশেষ ১৫ লাখ টাকা বলে দিয়েছি। যদি এ দামে কেউ আগ্রহী হয়, তাহলে এখানেই বিক্রি করব। না হলে ঈদের এক সপ্তাহ আগে ফতুল্লার কোরবানির হাটে নিয়ে যাব’।
নৌপথে গরুটিকে ফতুল্লার হাটে নেওয়ার জন্য ৩৫ হাজার টাকায় বড় আকারের ইঞ্জিনচালিত একটি শ্যালো নৌকাও ভাড়া করেছেন বলে জানান তিনি। মানিক ব্যাপারীর মেজ ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাওন আহমেদ জানায়, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই সে সার্বক্ষণিকভাবে রাজাবাবুর কাছেই থাকে। এটি তার খুব প্রিয়। সে গরুটিকে খুব ভালোবাসে।
মানিক ব্যাপারীর স্ত্রী বিলকিস পারভীন বলেন, ‘গরুটি যেন আমাদের পরিবারের একজন। সে আমার সন্তানের মতই আদরে বেড়ে উঠেছে। বিক্রি করতে মন চায় না। কিন্তু এতো বড় ভারি গরু রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এর যত্ন ও পরিচর্চায় দুইজন লোক লাগে। তাদের সার্বক্ষণিক ওর পেছনে কাজ করতে হয়। ওর পেছনে খরচও বেড়ে গেছে। তাই এবার বিক্রি করা সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।