ঢাকা ০১:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চলুন যাই শত বছরের নৌকার হাটে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০১৯
  • ২৩১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণ অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী ও খাল। এ কারণেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নদী ও খালের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। নদী ও খালে যোগাযোগের জন্য স্বল্প আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা হলো নৌকা। সবজিচাষি, পেয়ারাচাষি, জেলে, কৃষকসহ এলাকার সব শ্রেণির মানুষ কমবেশি নৌকার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এ অঞ্চলে আজ অবধি নৌকার কদর কমেনি। বর্ষা মৌসুম আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

শত বছর ধরে স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর বাজারে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে বসে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। জানা গেছে, স্বরূপকাঠি এলাকায় কাঠ সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কাঠ কিনতে আসতেন এবং নৌকা তৈরির অর্ডার করতেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই এলাকায় নৌকা তৈরি ও বিক্রির প্রচলন শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে নৌকার হাট সম্প্রসারিত হয়ে স্থায়ীভাবে সপ্তাহে দুদিন বসতে থাকে।

হাটের সময়ে রাস্তা ও খালে সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে বাহারি রকমের নৌকা। দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর এ নৌকাহাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী নৌকা কিনতে আসেন। বংশপরম্পরায় আটঘর বাজারে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করছেন কয়েকশ নৌকার কারিগর।অনেকে ভাবতে পারেন, আধুনিক যুগেও কীভাবে প্রতি হাটে শত শত নৌকা বিক্রি হয়? কারা এগুলো কেনে? উত্তরটা সহজ। বাগানের ভেতরে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট সরু খালের সংযোগ থাকে। সবজি কিংবা পেয়ারা সংগ্রহ করতে চাষিরা বাগানের ভেতরে প্রবেশের জন্য এই নৌকাগুলো বেশ উপযোগী। তা ছাড়া নৌকাগুলোর সাইজ ছোট হওয়ায় দুজন মানুষে বহন করে রাস্তার এপার থেকে ওপারে সুবিধামতো স্থানেও নিয়ে যেতে পারে। চাষিদের জন্য সাশ্রয়ী বাহন হওয়ায় শত শত বছর ধরে একইভাবে নৌকার চাহিদা বিদ্যমান আছে। মেশিন কিংবা জ্বালানি খরচ ছাড়াই একজন চাষি বছরের পর বছর একটি নৌকা ব্যবহার করতে পারেন।

বাজারের সময়- সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও সোমবার দিনব্যাপী জমজমাট থাকে এ নৌকার বাজার। সকাল থেকে নাজিরপুর, বৈঠাকাঠা, বিশারকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে করে নৌকা নিয়ে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়।দরদাম- নৌকার মাপ ও কাঠের মানের ওপর নির্ভর করে নৌকার দরদাম। মেহগনি, রেইনট্রি, কড়াই, চাম্বল ইত্যাদি কাঠের নৌকা পাওয়া যায়। নৌকার আকারভেদে এক হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতিটি নৌকা।

যাতায়াত- ঢাকা থেকে সড়ক, লঞ্চ কিংবা আকাশপথে বরিশাল আসতে হবে। বরিশাল চৌমাথা কিংবা বটতলা থেকে ম্যাজিক গাড়িতে সরাসরি আটঘর বাজারে আসা যায় (ভাড়া ৪৫ টাকা)। ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবেন আটঘর বাজার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

চলুন যাই শত বছরের নৌকার হাটে

আপডেট টাইম : ১২:৩৩:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ অগাস্ট ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল। বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণ অঞ্চলে জালের মতো ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য নদী ও খাল। এ কারণেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নদী ও খালের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। নদী ও খালে যোগাযোগের জন্য স্বল্প আয়ের মানুষের একমাত্র ভরসা হলো নৌকা। সবজিচাষি, পেয়ারাচাষি, জেলে, কৃষকসহ এলাকার সব শ্রেণির মানুষ কমবেশি নৌকার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এ অঞ্চলে আজ অবধি নৌকার কদর কমেনি। বর্ষা মৌসুম আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নৌকা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।

শত বছর ধরে স্বরূপকাঠি উপজেলার আটঘর বাজারে সন্ধ্যা নদীর শাখা খালে বসে ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। জানা গেছে, স্বরূপকাঠি এলাকায় কাঠ সহজলভ্য হওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা কাঠ কিনতে আসতেন এবং নৌকা তৈরির অর্ডার করতেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে এই এলাকায় নৌকা তৈরি ও বিক্রির প্রচলন শুরু হয়। সময়ের বিবর্তনে নৌকার হাট সম্প্রসারিত হয়ে স্থায়ীভাবে সপ্তাহে দুদিন বসতে থাকে।

হাটের সময়ে রাস্তা ও খালে সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে বাহারি রকমের নৌকা। দক্ষিণবঙ্গের বৃহত্তর এ নৌকাহাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ক্রেতারা পছন্দ অনুযায়ী নৌকা কিনতে আসেন। বংশপরম্পরায় আটঘর বাজারে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করছেন কয়েকশ নৌকার কারিগর।অনেকে ভাবতে পারেন, আধুনিক যুগেও কীভাবে প্রতি হাটে শত শত নৌকা বিক্রি হয়? কারা এগুলো কেনে? উত্তরটা সহজ। বাগানের ভেতরে প্রবেশের জন্য ছোট ছোট সরু খালের সংযোগ থাকে। সবজি কিংবা পেয়ারা সংগ্রহ করতে চাষিরা বাগানের ভেতরে প্রবেশের জন্য এই নৌকাগুলো বেশ উপযোগী। তা ছাড়া নৌকাগুলোর সাইজ ছোট হওয়ায় দুজন মানুষে বহন করে রাস্তার এপার থেকে ওপারে সুবিধামতো স্থানেও নিয়ে যেতে পারে। চাষিদের জন্য সাশ্রয়ী বাহন হওয়ায় শত শত বছর ধরে একইভাবে নৌকার চাহিদা বিদ্যমান আছে। মেশিন কিংবা জ্বালানি খরচ ছাড়াই একজন চাষি বছরের পর বছর একটি নৌকা ব্যবহার করতে পারেন।

বাজারের সময়- সপ্তাহে প্রতি শুক্র ও সোমবার দিনব্যাপী জমজমাট থাকে এ নৌকার বাজার। সকাল থেকে নাজিরপুর, বৈঠাকাঠা, বিশারকান্দিসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে করে নৌকা নিয়ে আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়।দরদাম- নৌকার মাপ ও কাঠের মানের ওপর নির্ভর করে নৌকার দরদাম। মেহগনি, রেইনট্রি, কড়াই, চাম্বল ইত্যাদি কাঠের নৌকা পাওয়া যায়। নৌকার আকারভেদে এক হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় প্রতিটি নৌকা।

যাতায়াত- ঢাকা থেকে সড়ক, লঞ্চ কিংবা আকাশপথে বরিশাল আসতে হবে। বরিশাল চৌমাথা কিংবা বটতলা থেকে ম্যাজিক গাড়িতে সরাসরি আটঘর বাজারে আসা যায় (ভাড়া ৪৫ টাকা)। ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাবেন আটঘর বাজার।