হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পাঁচ পদের মধ্যে দুই পদে দুই নেতাকে নিয়োগ দেয়ার পর অন্য তিন পদে নিয়োগ নিয়ে চাপ বাড়ছে হাইকমান্ডের ওপর। লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন বেশ কয়েকজন নেতা। আবার পাঁচটি শূন্য পদ থাকলেও দুটি পূরণ করার ঘটনাকে কেউ কেউ নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। তাঁরা বলছেন, শূন্য থাকার পরও তিনটি পদে কাউকে নিয়োগ না দেয়া দলের হাইকমান্ডের নির্লিপ্ততা এবং সিদ্ধান্তহীনতার নজির।
মহিলা দলের সাবেক সভানেত্রী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নিয়োগ দলের সর্বত্র গ্রহণযোগ্য হয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়া আর কোনো মহিলা সদস্য নেই। পাশাপাশি দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নিয়োগ নিয়েও দলের কেউ প্রশ্ন তোলেননি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু টুকু স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। তাঁর প্রয়াত বাবা আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী।
তবে দলের পুরনো আরো চার নেতাকে স্থায়ী কমিটির বাইরে রাখায় প্রশ্ন উঠেছে বিএনপিতে। দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ কয়েকজন নেতা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শূন্য পদ থাকার পরও এসব নেতাকে অন্তর্ভুক্ত না করায় দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, ওই নেতারা ‘সবাইকে খুশি’ রাখতে পারেন না বলে পদ পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ বলছেন, তারেক রহমান নিজে ইচ্ছা করেই ‘নিয়ন্ত্রণ’ হাতে রাখতে তাঁদের নিয়োগ দেননি। বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘যে দুজনকে স্থায়ী কমিটিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
কিন্তু একই সঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো বর্ষীয়ান নেতাকে বাদ দেয়ার ঘটনা দুঃখজনক। তা ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এবং প্রবীণ আইনজীবী এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে মূল্যায়ন না করায় দলের মধ্যে ভুল বার্তা যায়। তিনি বলেন, এভাবে ত্যাগী নেতাদের গুরুত্বহীন করে রাখা হলে লোকে আর বিএনপি করতে চাইবে না। আশা করব নেক্সট ফেসে যেন তাঁদের স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো কথা বা আলোচনা হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই পদে নিয়োগ দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। কিন্তু তিনি কারাগারে থাকায় এ পদে নিয়োগ দেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দুটি পদে নতুন সদস্য এসেছেন। বাকি তিনটি পদেও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সময়মতো নিয়োগ দেবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, স্থায়ী কমিটিতে পদ খালি আছে। পূরণ হওয়া দরকার। তবে শিগগিরই হবে কি না, তা জানি না।
জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির প্রবীণ কয়েকজন সদস্য সম্প্রতি শূন্য তিনটি পদে নিয়োগের বিষয়ে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা ১০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পর্যালোচনা করে এর মধ্য থেকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে তারেক রহমানকে অনুরোধ জানান। দলের প্রতি আনুগত্য, সাংগঠনিক দক্ষতাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় রাখার পরামর্শও দেন তাঁরা। স্থায়ী কমিটির সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে বিএনপির বর্তমান কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর ছাড়াও অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং আব্দুল আউয়াল মিন্টুর নাম আলোচনায় আছে।
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটি দায়িত্ব পালন করবে। সে সময় স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭টি পদের বিপরীতে নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি দুটি পদ শূন্য থাকে। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত নির্বাচিতদের মধ্যে মারা গেছেন তিনজন। তাঁরা হলেন—তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ এবং এম কে আনোয়ার। ফলে এই পাঁচটি পদ শূন্য হয়। গত ১৯ জুন দুটি পদে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে নিয়োগ দেয়া হলেও এখনো শূন্য রয়েছে আরো তিনটি পদ।
সূত্র: কালের কণ্ঠ