ঢাকা ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রেই বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন প্রিয়া সাহা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০২:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯
  • ২৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়ে নালিশ করে আলোচনায় আসা প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময়ই বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। তিনি দু’ধরনের নাম ব্যবহার করে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন।

প্রিয়া সাহার অভিযোগ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কতটা আমলে নিয়েছেন জানা না গেলেও, প্রিয়ার ভূল তথ্য দেয়ার মাধ্যমে ভিসা নেয়া এবং অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি নেয়ার বিষয়টা খতিয়ে দেখতে এরিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কূটনৈতিক সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের সূত্র আমলে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী ভিসা আবেদন করার সময় কেউ যদি নাম, ঠিকানা, পেশা অন্যান্য তথ্য গোপন করে এবং তা তদন্তে প্রমানিত হয় তাহলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেইসঙ্গে ভিসা পাওয়ার পরও তা বাতিল এবং ভবিষ্যতে ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

এরিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার থেকে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে প্রিয়া সাহা ছিলেন না।

ওইদিন বিভিন্ন দেশের ২৭ জন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুনানিতে বক্তব্য দেন। ‘ফ্রিডম হাউজ’ নামক একটি ওয়েবসাইটে তাদের প্রত্যেকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে প্রিয়া সাহার পরিচয় দেওয়া আছে-; “Priya Biswas Saha, a Hindu from Bangladesh who serves as General Secretary of Bangladesh Hindu-Buddhist-Christian Unity Council”।

প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে। এই তথ্যটিও মিথ‌্যা। কারণ তিনি কখনোই এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। উনি ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাও একবছর আগে থেকেই তিনি সংগঠনের সাথে নেই বলে এরই মধ্যে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। লিখিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটির হাতে এই প্রমাণ গেলে তা প্রিয়া সাহার বিপক্ষেই যাবে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

নিজের নাম ‌ব্যবহারেও তার মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে তিনি প্রিয়া বিশ্বাস সাহা’ হিসেবে নাম ব্যবহার করেছেন। তার পাসপোর্টের নামও এটি। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে একাধিক ক্ষেত্রে ‌’প্রিয়া বালা বিশ্বাস’ নাম ব্যবহার করেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন নেন। সেখানে নিজের নাম ব্যবহার করেন ‘প্রিয়া বালা বিশ্বাস’। পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক তিনি।

‘প্রিয় বালা বিশ্বাস’ নামে তার সেই আবেদনপত্র, পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনের স্ক্যান কপি এবং একাধিক নামের কাগজপত্র ঢাকার মার্কিন দূতাবাস, ‍যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে যেকোনো সময়ে পৌঁছাতে পারে বলেও বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিককে বলেন, প্রিয়া সাহার যাবতীয় মিথ্যা তথ্য যদি বাদও দেওয়া হয়, হোয়াইট হাউজে প্রবেশের জন্য শুধুমাত্র তার যে পেশাগত পরিচয় তিনি ব্যবহার করেছেন, সেটি মিথ্যা বলে প্রমাণ হলেই তো তিনি বেকায়দায় পড়ে যাবেন। তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সেখানে গেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুধুমাত্র এই একটি কারণেই তার ভিসা বাতিল হতে পারে। সাথে অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ সাংবাদিককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট কিছু রুল এবং লজ রয়েছে। সেখানে ভুল তথ্য প্রদান প্রমাণিত হলে বেকায়দায় পড়তে হবে যে কাউকেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান উধাও হয়ে গেছে। তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। যদিও শুধু বাংলাদেশ সরকার নয়, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দেয়া প্রিয়া সাহার তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রেই বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন প্রিয়া সাহা

আপডেট টাইম : ০১:০২:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে ভুল তথ্য দিয়ে নালিশ করে আলোচনায় আসা প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময়ই বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন। তিনি দু’ধরনের নাম ব্যবহার করে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন।

প্রিয়া সাহার অভিযোগ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কতটা আমলে নিয়েছেন জানা না গেলেও, প্রিয়ার ভূল তথ্য দেয়ার মাধ্যমে ভিসা নেয়া এবং অনুষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি নেয়ার বিষয়টা খতিয়ে দেখতে এরিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। কূটনৈতিক সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরের সূত্র আমলে নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন আইন অনুযায়ী ভিসা আবেদন করার সময় কেউ যদি নাম, ঠিকানা, পেশা অন্যান্য তথ্য গোপন করে এবং তা তদন্তে প্রমানিত হয় তাহলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সেইসঙ্গে ভিসা পাওয়ার পরও তা বাতিল এবং ভবিষ্যতে ভিসা না দেয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

এরিমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আয়োজিত মন্ত্রী পর্যায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার থেকে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে প্রিয়া সাহা ছিলেন না।

ওইদিন বিভিন্ন দেশের ২৭ জন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুনানিতে বক্তব্য দেন। ‘ফ্রিডম হাউজ’ নামক একটি ওয়েবসাইটে তাদের প্রত্যেকের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে প্রিয়া সাহার পরিচয় দেওয়া আছে-; “Priya Biswas Saha, a Hindu from Bangladesh who serves as General Secretary of Bangladesh Hindu-Buddhist-Christian Unity Council”।

প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করেছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে। এই তথ্যটিও মিথ‌্যা। কারণ তিনি কখনোই এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। উনি ছিলেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাও একবছর আগে থেকেই তিনি সংগঠনের সাথে নেই বলে এরই মধ্যে ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। লিখিত বা আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিটির হাতে এই প্রমাণ গেলে তা প্রিয়া সাহার বিপক্ষেই যাবে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

নিজের নাম ‌ব্যবহারেও তার মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে তিনি প্রিয়া বিশ্বাস সাহা’ হিসেবে নাম ব্যবহার করেছেন। তার পাসপোর্টের নামও এটি। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে একাধিক ক্ষেত্রে ‌’প্রিয়া বালা বিশ্বাস’ নাম ব্যবহার করেন। চলতি বছরের জুনে তিনি ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার ডিক্লারেশন নেন। সেখানে নিজের নাম ব্যবহার করেন ‘প্রিয়া বালা বিশ্বাস’। পত্রিকাটির প্রকাশক ও সম্পাদক তিনি।

‘প্রিয় বালা বিশ্বাস’ নামে তার সেই আবেদনপত্র, পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনের স্ক্যান কপি এবং একাধিক নামের কাগজপত্র ঢাকার মার্কিন দূতাবাস, ‍যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর ও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে যেকোনো সময়ে পৌঁছাতে পারে বলেও বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিককে বলেন, প্রিয়া সাহার যাবতীয় মিথ্যা তথ্য যদি বাদও দেওয়া হয়, হোয়াইট হাউজে প্রবেশের জন্য শুধুমাত্র তার যে পেশাগত পরিচয় তিনি ব্যবহার করেছেন, সেটি মিথ্যা বলে প্রমাণ হলেই তো তিনি বেকায়দায় পড়ে যাবেন। তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে সেখানে গেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। শুধুমাত্র এই একটি কারণেই তার ভিসা বাতিল হতে পারে। সাথে অন্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থারও মুখোমুখি হতে পারেন তিনি।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. (অব.) আব্দুর রশিদ সাংবাদিককে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট কিছু রুল এবং লজ রয়েছে। সেখানে ভুল তথ্য প্রদান প্রমাণিত হলে বেকায়দায় পড়তে হবে যে কাউকেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহা অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান উধাও হয়ে গেছে। তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। যদিও শুধু বাংলাদেশ সরকার নয়, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে দেয়া প্রিয়া সাহার তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।