নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যার বিচার আদৌ কি হবে? হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর এই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নরসিংদীবাসীর মনে। যত দিন যাচ্ছে, তত হতাশ হয়ে পড়ছে তারা। ইতিমধ্যে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে এজাহারভুক্ত ১১ আসামি বাদ পড়েছে। তাই মামলার বাদী পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মাধ্যমে যথাযথ তদন্ত চান। এ জন্য তিনি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। এরপর ঝুলে গেছে বিচারকাজ।
২০১১ সালের ১ নভেম্বর নরসিংদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র লোকমান হোসেনকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর ভাই কামরুজ্জামান কামরুল তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এর মধ্যে এক আসামি মোবারক হোসেন মোবা বিদেশে পলাতক। বাকি ১৩ জনের সবাই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাহউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। এতে মামলার এজাহারভুক্ত তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবা, এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তাঁর ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযোগপত্রে আশরাফুলকে হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এই অভিযোগপত্রের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি আবেদন করেন কামরুল। আদালত পরদিন নারাজি আবেদন খারিজ করেন। পরে ২৮ আগস্ট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন কামরুল। আদালত ৪ নভেম্বর আপিল আবেদন খারিজ করেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের আবেদন জানান। হাইকোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে এ মামলার বিচারকাজ স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে নরসিংদী চেম্বারের পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘এটা অত্যন্ত হতাশার বিষয়। যখন সব কিছু প্রতিকূলে ছিল তখন আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। যার কারণে অনেক হত্যাকারী ধরা পড়েছে। এখন সব অনুকূলে থাকার পরও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মেয়র লোকমানের মতো একজন মানুষের হত্যা মামলা এতটা স্তিমিতভাবে এগোবে তা আমরা ভাবতে পারি না। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, আদৌ কি লোকমানের বিচার হবে?’
মামলার বাদী ও পৌর মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ঝামেলা তৈরি করে গেছে এগুলোকে পরাস্ত করার জন্য আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। হাইকোর্টে আমাদের আবেদন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। হয়তো এক-দেড় মাসের মধ্যে শুনানি হবে। আমরা আশা করি, হাইকোর্টে ন্যায়বিচার পাব।’
চার দিনের কর্মসূচি : লোকমান হোসেনের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চার দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জেলা ও শহর আওয়ামী লীগ, জেলা ছাত্রলীগ এবং জনবন্ধু লোকমান হোসেন ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে আজ রবিবার পৌর কবরস্থানে সমাধিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে লোকমান স্মৃতিস্তম্ভ উদ্বোধন, গণভোজ ও শহরের বিভিন্ন স্থানে লোকমান হোসেনের কর্মময় ও রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন ভিডিও চিত্র প্রদর্শন। আগামীকাল সোমবার স্মরণসভা, মঙ্গলবার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বুধবার লোকমান হোসেনকে নিয়ে লেখা কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও পুরস্কার বিতরণ।
হত্যাস্থলে তৈরি জনবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভের ভাস্কর অলি মাহমুদ বলেন, ‘স্মৃতিস্তম্ভে লোকমান হোসেনের প্রতিকৃতি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিকৃতির পেছনের অংশের টেরাকোটায় নদী, মেঘলা আকাশ, মাছ, পাখি, নৌকা ও প্রকৃতির দৃশ্য ফুটে উঠেছে। এখানে মেঘলা আকাশ শোকের প্রতীক। স্মৃতিস্তম্ভে কালো গ্রানাইটে ৩ স্তরবিশিষ্ট বেদি রয়েছে। স্তরগুলোকে জনপ্রিয়তার প্রতীক হিসেবে বোঝানো হয়েছে।’