হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানী ঢাকা শহরের পাশেই পূর্বাচল, জায়গাটি ৩০০ফিট হিসেবেও পরিচিত। ছবি তোলার জন্য খুব ভোরে রওনা হলাম পূর্বাচল। কুড়িল ফ্লাইওভার অতিক্রম করে বসুন্ধরার পাশ দিয়ে পূর্বাচল বালুর ব্রিজ পার হলেই বাঁ দিকে রাজউকের পূর্বাচল প্লট। কোনো জনবসতি নেই। সারি সারি বৈদ্যুতিক খুঁটি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তার নিচে স্থানীয় এলাকাবাসী নানা ধরনের সবজির বাগান করেছেন। প্রচুর গাছপালা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজে ঘেরা একটি বন। পরিবেশ দেখেই মনে হলো এখানে পাখির বিচরণ আছে।
রাস্তা ধরে হাঁটছি। বেশিরভাগ বৈদ্যুতিক খুঁটির উপর ‘পোকামারা বা ছোট বাজ’ পাখি বসে আছে। পুরুষ ও মেয়েপাখি দুটোরই দেখা পেলাম। মনটা আনন্দে ভরে গেল। পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখলাম। ছোট ছোট মাঁচায় শিম, করলা, বরবটি ও লাউ ঝুলছে। এ এক অপরূপ দৃশ্য। মনে হলো কোনো এক গ্রামের পথে হাঁটছি। সামনেই ছিল একটি নিম গাছ। সেই গাছে ‘পোকামারা’ পাখি বসে শিকার খুঁজছে। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম।
‘পোকামারা বা ছোট বাজ’ পাখি Falconidae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত লালচে দাগি পিঠ ও হলুদ পায়ের ৩৬ সে.মি. দৈর্ঘ্যের শিকারি পাখি। অন্যান্য বাজপাখির মতো এরাও শিকারে পারদর্শী। পুরুষ ও মেয়েপাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির পিঠের দিক লালচে রঙের। দেহের নিচে পীতাভ রঙ এবং সরু লম্বালম্বি দাগ। দেহের নিচে মোটা লম্বা দাগ। লেজের উপরের অংশের ফিতা কালো ও আগা সাদা। মাথার চাঁদি, ঘাড়ের পিছন অংশ ও ঘাড়ের পাশে ছাই রঙের লম্বা দাগ। বগল ও তলপেটে কালো তিলার মতন। ঠোঁট স্লেট-নীল। চোখ বাদামী। পা ও পায়ের পাতা হলুদ।
মেয়েপাখির পিঠ লালচে। পিঠে স্পষ্ট কালো ডোরা ও তিলা। পেট ফিকে। মাথার চাঁদি ও ঘাড়ের পিছনের অংশ ফিকে লালচে। কোমর ধূসর। লেজ কালো ডোরা। সারা বিশ্বে এই পরিবারের ১১ উপপ্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে এক উপপ্রজাতি পাওয়া যায়।
‘পোকামারা’ পাখি মরুভূমি, তৃণভূমি, আবাদি ভূমি ও উঁচু পাহাড়ের ঢালে বিচরণ করে। সচরাচর একা বা জোড়ায় থাকে। তৃণভূমি ও ধানক্ষেতের উপর এদের তীক্ষ্ণ নজর থাকে। খাবার খোঁজার সময় এরা লেজ পাখার মতো ছড়িয়ে দেয় ও ডানা মেলে উড়ে। এদের নজর থেকে কোনো শিকার বাদ যায় না। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফড়িং, পঙ্গপাল, গুবরে পোকা, ঝিঁঝিঁ পোকা, ছোট ইঁদুর, ব্যাঙ, টিকটিকি, সাপ, ছোটপাখি ও পাখির ছানা। এপ্রিল থেকে জুন মাস এদের প্রজনন সময়। প্রজননকালে ভেসে বেড়ায় ও তীক্ষ্ণ গলায় ডেকে মেয়েপাখিকে আকর্ষণ করে। খাড়া পাহাড়ের ফাটলে বা দালানে পাতা, মূল ও আবর্জনা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। অনেক সময় কাকের খালি বাসায়ও ডিম পাড়ে। বেশিরভাগ সময়ে এরা নিজেরাই বাসা বানায়। মেয়েপাখি ৪-৬টি ডিম দেয়। সাধারণত মেয়েপাখিই ডিমে তা দিয়ে ২৫-২৯ দিনে বাচ্চা ফোটায়।
‘পোকামারা বা ছোট বাজ’ পাখি আমাদের দেশে পরিযায়ী পাখি। শীত মৌসুমে ঢাকা, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে পাওয়া যায়। এছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা ও ভারত উপমহাদেশের দক্ষিণ এশিয়ায় এদের বিচরণ রয়েছে। এরা বিশ্বে বিপদমুক্ত পাখি।
বাংলা না: পোকামারা বা ছোট বাজ