রাখাইন আমরা কখনো নেব না: শেখ হাসিনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যকে বাংলাদেশে যুক্ত করার বিষযে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান ব্র্যাড শেরম্যানের প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, প্রত্যেকটা দেশের সার্বভৌমত্ব আছে। বাংলাদেশ অন্যের কোনো ভূখণ্ড নিতে চায় না। সাম্প্রতিক চীন সফর নিয়ে জানাতে সোমবার গণভবনে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেরম্যানের এই প্রস্তাব সম্পর্কে জানতে চান একজন গণমাধ্যমকর্মী। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে এই প্রস্তাব তোলেন দেশটির এই কংগ্রেসম্যান।

তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রস্তাবে ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বলেছেন, ‘আমার যে সীমানা আছে, আমার যে দেশটা ৫৪ হাজার বর্গমাইল, বা ১৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার, আমরা তাতেই খুশি। অন্যের জমি নিয়ে আসা এবং অন্যের কোনো প্রদেশ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, আমি এটা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি, এটা আমরা কখনো নেব না।’

‘প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। মিয়ানমার তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সাথে তারা রাখাইন স্টেট জুড়ে দিতে চায় কেন? এই ধরনের কথা বলা অত্যন্ত গর্হিত কাজ, অন্যায় কাজ বলে মনে করি।’

‘রাখাইন স্টেটে প্রতিনিয়ত যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, আমরা জেনেবুঝে ওই ধরনের একটা গোলমেলে জিনিস আমাদের দেশের সাথে যুক্ত করব কেন? এটা আমরা কখনই করব না।’

‘হ্যাঁ, সেখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার মানুষরা যখন আশ্রয় চেয়েছে, মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। আশ্রয় দেওয়ার অর্থ এটা না, আমরা তাদের রাষ্ট্রের একটা অংশ নিয়ে চলে আসব। এই মানসিকতা আমাদের নেই। এটা আমরা চাই না। প্রত্যেকটা দেশ তার সার্বভৌমত্ব নিয়ে থাকবে, সেটাই আমি চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতার সমালোচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘হতে পারে তারা খুব বড় দেশ। সে দেশের একজন কংগ্রেসম্যান। কিন্তু তারা কি ভুলে গেছে তাদের অতীত? এক সময় গৃহযুদ্ধ লেগেই থাকত। সে অতীত তাদের ভুলে যাওয়া উচিত না। আর সেটা যে ভবিষ্যতেও আসবে না, সেটা তারা কী করে ভাবে?’

‘এভাবে একটা দেশের মধ্যে এভাবে গোলমাল পাকানো কোনো মতেই ঠিক না। যেখানেই তারা হাত দিয়েছে, সেখানেই তো আগুন জ্বলেছে। কোথাও তো শান্তি আসেনি। বরং জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হচ্ছে। অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলটা আমরা একটু শান্তিপূর্ণভাবে থাকার চেষ্টা করছি। এখানে তাদের আগুন লাগানোর প্রচেষ্টা। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য না।’

রাখাইন রাজ্য নিয়ে এ কথা না বলে মিয়ানমার যেন তার নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ফিরিযে নিযে যায়, কংগ্রেসম্যান শেরম্যানের এটাই করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘এটাই হবে মানবিক দিক। সেখানে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তাদের সেটা দেখা উচিত।’

রোহিঙ্গা সংকট ‘উপলব্ধি করেছে চীন’

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রাহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও কথা হয়েছে। মিয়ানমারের ওপর চীনের বেশ প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, এ বিষয়ে পরাশক্তি দেশটিকে তারা পাশে পাবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীন সবসময় মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। কিন্তু রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশে আছে এটা আমাদের জন্য বিরাট সমস্যা, একথাটাও তো তারা উপলব্ধি করতে পারছে। সেজন্য তারা মনে করছেন এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হওয়া উচিত। এ জন্য তাদের যা করণীয় সেটা করার আশ্বাস দিয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর