হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হংকংয়ে গত জুন মাস থেকে চলছে বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভের কারণ একটি বিতর্কিত বন্দি প্রত্যর্পণ বিল। বিক্ষোভের কারণে বিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিতও করা হয়েছে। তবে বিলটি একেবারে বাতিল চেয়ে এবং হংকংয়ের বেইজিংপন্থি প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের পদত্যাগ চেয়ে থেমে থেমে বিক্ষোভ চলছিলই। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার হংকংকে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে চীনের কাছে হস্তান্তরের ২২তম বার্ষিকীর দিনে গণতন্ত্রপন্থি কয়েকশ’ তরুণের একটি দল আইন পরিষদ ভবনে ভাংচুর চালায়। পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষে জড়ায় তারা। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা গ্রাফিতি আকারে নানারকম বার্তা লিখে দেয় আইন পরিষদের ভেতরের দেয়ালে। কেন্দ্রীয় অধিবেশন কক্ষের ভেতরে হংকংয়ের প্রতীকের ওপর এক বিক্ষোভকারী কালো রঙ ছিটিয়ে দেয়। আরেকজন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা তুলে ধরে।

এসব ঘটনার পর গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিকরা একটি বিষয় বুঝতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন। তা হলো- কেন তরুণরা আইন পরিষদে এমন নজিরবিহীন হামলা চালাল? এর আসল কারণটা কী? ক্লাউডিয়া মো নামে এক রাজনীতিক বললেন, যে কোনো ধরনের সহিংসতার নিন্দা আমরা জানাই। কিন্তু হংকংসহ সারাবিশ্বের মানুষের কাছে আমি আহ্বান জানাব, তরুণদের এমন সহিংস হয়ে ওঠার পেছনের কারণটা কী তা বোঝার। এডি চু নামে আরেক গণতন্ত্রপন্থি রাজনীতিক একই কথা বললেন। তবে তিনি বিষয়টি পরিস্কার করে জানালেন, সোমবার তরুণরা যা করেছে তার মাধ্যমে আসলে অস্বস্তিকর একটি সত্য প্রকাশিত হয়েছে। তা হলো, হংকংয়ের মানুষ তাদের নিজেদের আইন পরিষদকেই শ্রদ্ধা করে না। কারণ তারা মনে করে আইন পরিষদ তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে চীনের কাছে হংকংকে হস্তান্তরের পর বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। ২০১৪ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে আমব্রেলা মুভমেন্ট নামে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয়। সম্প্রতি চীনে বন্দি প্রত্যর্পণ বিল আইন পরিষদে তোলার বিরোধিতা করে ফের রাজপথে নামে লাখ লাখ গণতন্ত্রপন্থি, যা গত দুই দশকে নজিরবিহীন। তারা বলছে, বিলটি পাস হলে চীন হংকংয়ের বিরোধীদের দমনে বিশেষ সুযোগ পাবে। বিক্ষোভের মুখে বিলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী লাম। বিক্ষোভকারীরা বলছে, বিলটি একেবারে বাতিল করতে হবে এবং লামকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে সোমবারের সংঘর্ষের পর এই দুই দাবির ভিত্তিতে চলমান আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশ্নেষকরা বলছেন, সোমবার আইন পরিষদে তরুণদের একটি অংশ যেভাবে সহিংসতা চালিয়েছে তাতে আন্দোলনে বিভক্তি আসতে পারে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে গণতন্ত্রের আন্দোলন।

ক্লাউডিয়া মো বলছেন, হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ এখন আইন পরিষদে হামলার ঘটনাটি বড় করে তুলবে। অনেক মানুষের জন্য এখন এটি আবেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে এবং শেষ পর্যন্ত তাতে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাম এখন গণতন্ত্রপন্থি তরুণদের কার্যকলাপকে সমানে দোষারোপ করে যাবেন। আসলে যে কারণে এই সমস্যাটি তৈরি হলো তার সমাধান কিন্তু তিনি দেননি। উল্টো ওই কারণকে কেন্দ্র করে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য এখন তিনি তরুণ গণতন্ত্রপন্থিদের দায়ী করবেন। এটাই কমিউনিস্টদের নীতি। হংকংয়ে এটা কাজ করবে না।

হংকংয়ের প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্নেষক সানি লো জানান, সোমবার আইন পরিষদে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার ক্ষতিকর প্রভাব পরিস্কারভাবে গণতন্ত্রপন্থিদের আন্দোলনের ওপর পড়বে। ওই ঘটনা গণতন্ত্রপন্থিদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অহিংসপন্থি এবং সংখ্যালঘু সহিংসপন্থিতে বিভক্ত করবে বলে মত দেন তিনি। তাহলে সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে? এই প্রশ্নের জবাবে সানি জানান, এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর তিনি জানেন না। সরকার যে কৌশল নিয়েছে তাতেও সমাজে শান্তি ফিরবে না। বরং সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে সানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর ফেরালেন। তিনি বললেন, ইন্টারনেটে গণতন্ত্রপন্থিদের একটি অংশের কার্যকলাপ আপনি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন। তারা গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে আমি তাদের এই শহীদ হওয়ার মানসিকতা এড়িয়ে চলতে বলব।

সানি তরুণদের চরমপন্থার দিকে এগোতে নিষেধ করলেও তাদের প্রিয় মুখ জশুয়া ওং সোমবার মনে করিয়ে দিয়েছেন, হংকংয়ে গণতন্ত্র মুক্তির যুদ্ধ চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর