ঢাকা ০১:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভ্যাট দেবে জনগণ, দেশের হবে উন্নয়ন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৫:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০১৯
  • ২৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতি বছর জুন মাস এলেই বাজেটের বিষয়টি আমাদের সামনে আসে। দেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় পড়ে। নতুন করে আবার কী উৎকট ঝামেলা তাদের ঘাড়ে চেপে বসে। বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ার কারণও আছে। বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন তাদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট-হাসপাতাল বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়।

সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, কোথা থেকে কত আয় হবে সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট। বাংলাদেশের বর্তমান পর্যায়ে উন্নয়ন-গতির যে তাগিদ, সে তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দও অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক বড় তা বলা যাবে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও অর্থনীতির গতি অনুযায়ী অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত কয় বছরে সরকার সফলভাবে জনগণের ওপর করজাল বিস্তৃত করে চলেছে। তার পরও আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে বেশ বড় আকারের ঘাটতি। ঋণের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা। করজাল বাড়াতে এবারও বাজেটে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax- VAT), সংক্ষেপে মূসক। বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত একটি আধুনিক কর, যা যে কোনো ব্যবসায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট মূল্য সংযোজনের ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। দেশীয় পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়, বিদেশী পণ্য আমদানি ও রপ্তানি, দেশাভ্যন্তরে সেবা বা পরিসেবার উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে এ কর আরোপযোগ্য। এ কর উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে আরোপ ও আদায় করা হলেও, এর দায়ভার চূড়ান্তভাবে ভোক্তাকেই বহন করতে হয়। এ কর পরোক্ষ কর। জনগণের অগোচরে এ কর আদায় করা হয়।

এবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। চলমান বাজেটের চেয়ে এ বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়। এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিপুল ঘাটতি মেটানো হবে ঋণ করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে আসার প্রত্যাশা করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এ অংক আগের অর্থবছরের ভ্যাট আদায় থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট হিসেবে আদায় হবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে বিগত পাঁচ বছরে যত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার বড় অংশই আদায় হয়েছে ভ্যাটের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন চালু হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ভ্যাটই হয়ে উঠেছে রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস। ২০১২ সালে ভ্যাট আইন সংশোধন করা হলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে তা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবিতে সংশোধিত ভ্যাট আইন আরও দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। অবশেষে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবারের বাজেটে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর রাখা হয়েছে ছয়টি। একক ভ্যাট হারের পরিবর্তে পণ্য বা সেবা আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানের ন্যায় ভ্যাট-হার যথাক্রমে ২.৪ ও ২ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়।

চলমান অর্থবছরে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পদ্ধতি, ৪ শতাংশ ভ্যাট পদ্ধতি এবং প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি এ তিনটি পদ্ধতি চালু আছে। প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ১৪ হাজার টাকা। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকানে বছরে ১০ হাজার টাকা। জেলা শহরের পৌর এলাকায় অবস্থিত ছোট ছোট দোকান বছরে ৭ হাজার ২শ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ৩ হাজার ৬শ টাকা ভ্যাট দেয়। কোন কোন দোকান প্যাকেজ ভ্যাট প্রদান করবে, তা স্থানীয় দোকান মালিক সমিতির নেতা এবং স্থানীয় ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা মিলে অর্থবছরের প্রারম্ভে নির্ধারণ করেন।

এবারের বাজেটে পুনরায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার সব পর্যায়ে ৪% হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বার্ষিক টার্নওভার (লেনদেন) ৮০ লাখ টাকার ওপর হতে ৩ কোটি টাকা বিক্রিসম্পন্ন হলেই ৪% হারে ভ্যাট দিতে হবে সেই ব্যবসায়ীকে। তা না হলে তাকে আর ভ্যাট দিতে হবে না। কিন্তু ভ্যাট যদি প্রতিটি পণ্যমূল্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তা হলে টার্নওভার দিয়ে লাভ কি। সব ধরনের পণ্যের সঙ্গেই ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব ব্যবসায়ী অথবা দোকানির বার্ষিক টার্নওভার ৮০ লাখ টাকা না হলেও তিনিও তো পণ্যের ভ্যাট নিচ্ছেন। তা হলে তিনি কাকে ভ্যাট দেবেন। আর যদি তিনি সরকারকে ভ্যাট নাই দেন, তা হলে কেন ভ্যাট নেবেন, আর ভোক্তাই-বা কেন তাকে ভ্যাট দেবেন।

সাধারণ একজন ক্রেতা কীভাবে জানবেন, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার কত; সে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করে কিনা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করুক আর না-ই করুক, ভোক্তাকে ভ্যাট পরিশোধ করতেই হবে। এ নতুন আইন প্রয়োগে সব ধরনের পণ্য কিংবা সেবার মূল্য গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার তাদের বক্তব্যে বলছেন, কোনো পণ্য কিংবা সেবার মূল্য বাড়বে না। তাদের এ ধরনের বক্তব্য আসলে শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) চালু করতে হবে। ইসিআর রসিদেই ভ্যাটের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। ইসিআর রসিদই ভ্যাট চালান হিসেবে বিবেচিত হবে।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট একটি ভোগভিত্তিক কর ব্যবস্থা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ করের ভার ভোক্তাদের ওপরই বর্তায়। দেশের কর-কাঠামোর পুরোটাই মূল্য সংযোজন কর বা পরোক্ষ করের ওপর দাঁড় করিয়েছে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ করই হওয়া দরকার ছিল মূল আয়। রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, তাদের প্রাপ্ত করের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, করের সিংহভাগই জোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ রাষ্ট্রে যাদের আয় বেশি তারা কর দেন কম; আর যাদের আয় কম, তারাই বেশি কর দেন। এটা কোনো দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি হতে পারে না। প্রগ্রেসিভ কর-ব্যবস্থায় যাদের আয় বেশি, তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে করারোপ করা হয়। এতে নাগরিকদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান ক্রমে কমিয়ে আনা হয়, যা রাষ্ট্রে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রগ্রেসিভ কর-ব্যবস্থায় একটি দেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ মোট আদায়কৃত করের প্রায় ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রকাশনাতেই এ কথা বলা হয়েছে। দেশে পরোক্ষ করের মধ্যে ভ্যাটের হার অনেক বেশি, ১৫ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তা ১২. ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১২ শতাংশ এবং জাপানে ৫ শতাংশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কিছুদিন আগে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “কর ফাঁকি দেয় বড় বড় ব্যবসা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু তার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর৷ যাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা দরকার, তাদের আনা যাচ্ছে না৷ এসব বিপুল আয়ের মানুষ কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছেন৷ এ কারণে সুইস ব্যাংকের আমানতকারীদের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম৷”

বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক খাতগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে নতুন বাজেটে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি বন্ধ, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ এবং বিদেশে পাচারকৃত তহবিল দেশে ফিরিয়ে এনে অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিলের জোগান দেয়াটাই হবে অধিক বুদ্ধিমানের কাজ।

ভ্যাট বা পরোক্ষ করের মাধ্যমে দারিদ্র্যদীর্ণ এই দেশে সাধারণ মানুষ ষোলো আনা কর মিটিয়ে যাবেন আর কোটিপতি, শত কোটিপতিরা বিলিয়নিয়ার তুলনামূলকভাবে কম করে দেবেন (তাও আবার ফাঁকি), এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। নীতি-নৈতিকতার বিচারে এটাই যথার্থ হওয়া উচিত যে, যত বেশি আয় তত বেশি হারে কর। করনীতির এ বৈষম্যই বড়লোকদের দ্রুতগতিতে আরও বড়লোক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আয়ের তুলনায় কর কম দিতে হয় বলেই তাদের সম্পদ ক্রমে ফুলেফেঁপে উঠছে।

অ্যাডাম স্মিথের মতে, ‘কর হলো কর প্রদানকারীর জন্য এক ধরনের সম্মানজনক অবস্থা- যা তাকে দাসত্ব নয় স্বাধীনতা প্রদান করে।’ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম হচ্ছে কর প্রদান। এর বিনিময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে নানারকম সেবা দেওয়া, তার নিরাপত্তা বিধান করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটাই হচ্ছে রীতি। যে রাষ্ট্র জনগণকে যত সেবা দেবে, সেখানে জনগণও তত বেশি কর দেবে- এটাই সাধারণভাবে হওয়ার কথা। অথচ বাংলাদেশের জনগণের রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সেবার পরিমাণ কমতে কমতে এখন শূন্যের কোঠায় চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান- জনগণের এসব প্রাপ্তিতে সরকারের ভূমিকা নেই বললেই চলে।

ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে চায় সরকার। আর তাই দেশের উন্নয়নের সোপান হিসেবে পরিচিত বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামীতে পদ্মা সেতুর মতো মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্য বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক খাতগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে নতুন বাজেটে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি বন্ধ, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ এবং বিদেশে পাচারকৃত তহবিল দেশে ফিরিয়ে এনে অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিলের জোগান দেয়াটাই হবে অধিক বুদ্ধিমানের কাজ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

ভ্যাট দেবে জনগণ, দেশের হবে উন্নয়ন

আপডেট টাইম : ০৫:০৫:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুন ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রতি বছর জুন মাস এলেই বাজেটের বিষয়টি আমাদের সামনে আসে। দেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় পড়ে। নতুন করে আবার কী উৎকট ঝামেলা তাদের ঘাড়ে চেপে বসে। বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ার কারণও আছে। বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যারা কাজ করেন তাদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট-হাসপাতাল বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়।

সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, কোথা থেকে কত আয় হবে সেই পরিকল্পনার নামই বাজেট। বাংলাদেশের বর্তমান পর্যায়ে উন্নয়ন-গতির যে তাগিদ, সে তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দও অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক বড় তা বলা যাবে না। জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও অর্থনীতির গতি অনুযায়ী অস্বাভাবিক কিছু নয়। গত কয় বছরে সরকার সফলভাবে জনগণের ওপর করজাল বিস্তৃত করে চলেছে। তার পরও আমরা দেখতে পাচ্ছি বাজেটে বেশ বড় আকারের ঘাটতি। ঋণের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরশীলতা। করজাল বাড়াতে এবারও বাজেটে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax- VAT), সংক্ষেপে মূসক। বিংশ শতাব্দীতে উদ্ভাবিত একটি আধুনিক কর, যা যে কোনো ব্যবসায়ের মাধ্যমে সৃষ্ট মূল্য সংযোজনের ওপর আরোপ করা হয়ে থাকে। দেশীয় পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয়, বিদেশী পণ্য আমদানি ও রপ্তানি, দেশাভ্যন্তরে সেবা বা পরিসেবার উৎপাদন, বিপণন ও বিক্রয় ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে এ কর আরোপযোগ্য। এ কর উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে আরোপ ও আদায় করা হলেও, এর দায়ভার চূড়ান্তভাবে ভোক্তাকেই বহন করতে হয়। এ কর পরোক্ষ কর। জনগণের অগোচরে এ কর আদায় করা হয়।

এবার ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট সংসদে উপস্থাপিত হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট। চলমান বাজেটের চেয়ে এ বাজেট ১২ দশমিক ৬১ শতাংশ বড়। এ বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এ বিপুল ঘাটতি মেটানো হবে ঋণ করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬শ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে আসার প্রত্যাশা করা হয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। এ অংক আগের অর্থবছরের ভ্যাট আদায় থেকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট হিসেবে আদায় হবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে বিগত পাঁচ বছরে যত রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার বড় অংশই আদায় হয়েছে ভ্যাটের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে ভ্যাট আইন চালু হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ভ্যাটই হয়ে উঠেছে রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস। ২০১২ সালে ভ্যাট আইন সংশোধন করা হলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার মুখে তা আর বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবিতে সংশোধিত ভ্যাট আইন আরও দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছিল। অবশেষে ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবারের বাজেটে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর রাখা হয়েছে ছয়টি। একক ভ্যাট হারের পরিবর্তে পণ্য বা সেবা আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ, উৎপাদনে ১০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৭.৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের ক্ষেত্রে বর্তমানের ন্যায় ভ্যাট-হার যথাক্রমে ২.৪ ও ২ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়।

চলমান অর্থবছরে ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পদ্ধতি, ৪ শতাংশ ভ্যাট পদ্ধতি এবং প্যাকেজ ভ্যাট পদ্ধতি এ তিনটি পদ্ধতি চালু আছে। প্যাকেজ ভ্যাটের আওতায় ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ১৪ হাজার টাকা। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার ছোট ছোট দোকানে বছরে ১০ হাজার টাকা। জেলা শহরের পৌর এলাকায় অবস্থিত ছোট ছোট দোকান বছরে ৭ হাজার ২শ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার ছোট ছোট দোকান বছরে ৩ হাজার ৬শ টাকা ভ্যাট দেয়। কোন কোন দোকান প্যাকেজ ভ্যাট প্রদান করবে, তা স্থানীয় দোকান মালিক সমিতির নেতা এবং স্থানীয় ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা মিলে অর্থবছরের প্রারম্ভে নির্ধারণ করেন।

এবারের বাজেটে পুনরায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার সব পর্যায়ে ৪% হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বার্ষিক টার্নওভার (লেনদেন) ৮০ লাখ টাকার ওপর হতে ৩ কোটি টাকা বিক্রিসম্পন্ন হলেই ৪% হারে ভ্যাট দিতে হবে সেই ব্যবসায়ীকে। তা না হলে তাকে আর ভ্যাট দিতে হবে না। কিন্তু ভ্যাট যদি প্রতিটি পণ্যমূল্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তা হলে টার্নওভার দিয়ে লাভ কি। সব ধরনের পণ্যের সঙ্গেই ভ্যাট যুক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব ব্যবসায়ী অথবা দোকানির বার্ষিক টার্নওভার ৮০ লাখ টাকা না হলেও তিনিও তো পণ্যের ভ্যাট নিচ্ছেন। তা হলে তিনি কাকে ভ্যাট দেবেন। আর যদি তিনি সরকারকে ভ্যাট নাই দেন, তা হলে কেন ভ্যাট নেবেন, আর ভোক্তাই-বা কেন তাকে ভ্যাট দেবেন।

সাধারণ একজন ক্রেতা কীভাবে জানবেন, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার কত; সে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করে কিনা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট পরিশোধ করুক আর না-ই করুক, ভোক্তাকে ভ্যাট পরিশোধ করতেই হবে। এ নতুন আইন প্রয়োগে সব ধরনের পণ্য কিংবা সেবার মূল্য গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে, যা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার তাদের বক্তব্যে বলছেন, কোনো পণ্য কিংবা সেবার মূল্য বাড়বে না। তাদের এ ধরনের বক্তব্য আসলে শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া কিছু নয়। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) চালু করতে হবে। ইসিআর রসিদেই ভ্যাটের বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। ইসিআর রসিদই ভ্যাট চালান হিসেবে বিবেচিত হবে।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট একটি ভোগভিত্তিক কর ব্যবস্থা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ করের ভার ভোক্তাদের ওপরই বর্তায়। দেশের কর-কাঠামোর পুরোটাই মূল্য সংযোজন কর বা পরোক্ষ করের ওপর দাঁড় করিয়েছে। অথচ দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ করই হওয়া দরকার ছিল মূল আয়। রাজস্ব বোর্ডের হিসাব অনুসারে, তাদের প্রাপ্ত করের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, আর বাকি ৩০ শতাংশ আসে প্রত্যক্ষ কর থেকে। তার মানে দেখা যাচ্ছে, করের সিংহভাগই জোগান দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ কর বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, এ রাষ্ট্রে যাদের আয় বেশি তারা কর দেন কম; আর যাদের আয় কম, তারাই বেশি কর দেন। এটা কোনো দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতি হতে পারে না। প্রগ্রেসিভ কর-ব্যবস্থায় যাদের আয় বেশি, তাদের ওপর ক্রমবর্ধমান হারে করারোপ করা হয়। এতে নাগরিকদের মধ্যে আয়ের ব্যবধান ক্রমে কমিয়ে আনা হয়, যা রাষ্ট্রে এক ধরনের ভারসাম্য বজায় রাখে। প্রগ্রেসিভ কর-ব্যবস্থায় একটি দেশে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ মোট আদায়কৃত করের প্রায় ৫০ শতাংশ হওয়া উচিত। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রকাশনাতেই এ কথা বলা হয়েছে। দেশে পরোক্ষ করের মধ্যে ভ্যাটের হার অনেক বেশি, ১৫ শতাংশ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে তা ১২. ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১২ শতাংশ এবং জাপানে ৫ শতাংশ।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কিছুদিন আগে ডয়চে ভেলেকে বলেন, “কর ফাঁকি দেয় বড় বড় ব্যবসা ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান৷ কিন্তু তার চাপ পড়ে সাধারণ মানুষের ওপর৷ যাদের ট্যাক্সের আওতায় আনা দরকার, তাদের আনা যাচ্ছে না৷ এসব বিপুল আয়ের মানুষ কর ফাঁকি দিয়ে দেশের বাইরে অর্থ পাচার করছেন৷ এ কারণে সুইস ব্যাংকের আমানতকারীদের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম৷”

বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক খাতগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে নতুন বাজেটে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি বন্ধ, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ এবং বিদেশে পাচারকৃত তহবিল দেশে ফিরিয়ে এনে অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিলের জোগান দেয়াটাই হবে অধিক বুদ্ধিমানের কাজ।

ভ্যাট বা পরোক্ষ করের মাধ্যমে দারিদ্র্যদীর্ণ এই দেশে সাধারণ মানুষ ষোলো আনা কর মিটিয়ে যাবেন আর কোটিপতি, শত কোটিপতিরা বিলিয়নিয়ার তুলনামূলকভাবে কম করে দেবেন (তাও আবার ফাঁকি), এটা কোনোমতেই সমর্থনযোগ্য নয়। নীতি-নৈতিকতার বিচারে এটাই যথার্থ হওয়া উচিত যে, যত বেশি আয় তত বেশি হারে কর। করনীতির এ বৈষম্যই বড়লোকদের দ্রুতগতিতে আরও বড়লোক হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আয়ের তুলনায় কর কম দিতে হয় বলেই তাদের সম্পদ ক্রমে ফুলেফেঁপে উঠছে।

অ্যাডাম স্মিথের মতে, ‘কর হলো কর প্রদানকারীর জন্য এক ধরনের সম্মানজনক অবস্থা- যা তাকে দাসত্ব নয় স্বাধীনতা প্রদান করে।’ নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম হচ্ছে কর প্রদান। এর বিনিময়ে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে নানারকম সেবা দেওয়া, তার নিরাপত্তা বিধান করা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটাই হচ্ছে রীতি। যে রাষ্ট্র জনগণকে যত সেবা দেবে, সেখানে জনগণও তত বেশি কর দেবে- এটাই সাধারণভাবে হওয়ার কথা। অথচ বাংলাদেশের জনগণের রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া সেবার পরিমাণ কমতে কমতে এখন শূন্যের কোঠায় চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান- জনগণের এসব প্রাপ্তিতে সরকারের ভূমিকা নেই বললেই চলে।

ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন ও মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে চায় সরকার। আর তাই দেশের উন্নয়নের সোপান হিসেবে পরিচিত বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আগামীতে পদ্মা সেতুর মতো মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্য বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করতে চায় সরকার।

বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মানবসম্পদের উন্নয়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক খাতগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকছে নতুন বাজেটে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর কর না বাড়িয়ে ধনীদের ওপর প্রগতিশীল হারে কর আদায় বৃদ্ধি, কর ফাঁকি বন্ধ, ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থ এবং বিদেশে পাচারকৃত তহবিল দেশে ফিরিয়ে এনে অতিরিক্ত উন্নয়ন তহবিলের জোগান দেয়াটাই হবে অধিক বুদ্ধিমানের কাজ।