হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারে গত দশকজুড়ে নিজেদের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয় জাতিসংঘ। সমপ্রতি আন্তর্জাতিক সংগঠনটি নিজেদের এক প্রতিবেদনে মিয়ানমারে তাদের শাখা সংগঠনগুলোর কার্যক্রমের প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, গত এক দশক ধরে দেশটিতে প্রায় ক্রিয়াহীন ভূমিকা পালন করেছে জাতিসংঘ। সেখানে সংগঠনটির পদ্ধতিগতভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ভেঙে পড়েছে এর ব্যবস্থাপনা। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
জাতসংঘের মহাপরিচালক অ্যান্তনিও গুতেরা অনুমোদিত প্রতিবেদনটি জনসাধারণের জন্য প্রকাশের আগেই হাতে পায় দ্য গার্ডিয়ান। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমপ্রদায়ের প্রতি সরকারের সহিংসতা বৃদ্ধির লক্ষণ অগ্রাহ্য করে সেটিকে গণহত্যায় রূপ দিয়েছে জাতিসংঘ। এটি লিখেছেন গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ট রজেনথাল।
তিনি লিখেন, মিয়ানমারে জাতিসংঘ নানাদিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে, বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে ‘বিশ্বাসের সংস্কৃতি’ স্থাপন এবং সেখান থেকে মিশ্র ও অসমপূর্ণ ইঙ্গিত পাঠানোসহ নানা কারণ রয়েছে। প্রতিবেদনটি চলতি সপ্তাহেই প্রকাশ করার কথা রয়েছে। রজেনথাল লিখেছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বদলে, খাপছাড়া কৌশল অবলম্বন করায় প্রশ্নাতীতভাবেই জাতিসংঘের কিছু গুরুতর ভুল হয়েছে ও কিছু সুযোগ নষ্ট হয়েছে। সামগ্রিকভাবে জাতিসংঘের দায়িত্ব ছিল সমষ্টিগত। অন্যকথায়, এটাকে সত্যিকার অর্থে বর্ণনা করা যায় জাতিসংঘের একটি পদ্ধতিগত ব্যর্থতা হিসেবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা গোষ্ঠীদের ওপর সামরিক অভিযানের নামে হামলা চালায়। এই হামলাকে জাতিসংঘ জাতি নিধন বলে আখ্যায়িত করে। হামলায় হত্যা করা হয় হাজার হাজার মানুষকে, ধর্ষণ করা হয় নারী ও কিশোরীদের, পুড়িয়ে দেয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা।
রজেনথাল তার প্রতিবেদনে জানান, মিয়ানমারে জাতিসংঘের একাধিক শাখা সংগঠন ও কর্মকর্তাদের মধ্যে কৌশলগত সমন্বয়ের অভাব তাদের ব্যর্থতাকে ত্বরান্বিত করেছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, সংগঠনটির একেবারে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত কোনো একক কৌশল বিদ্যমান ছিল না। ফলস্বরূপ জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করতে অক্ষম ছিল।
কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন মোড় নিয়েছে যেখানে জাতিসংঘে কর্মকর্তারা একেকজন একেক অবস্থানে ছিলেন। কেউ হয়তো গঠনমূলক অংশগ্রহণ চেয়েছে, আর কেউ চেয়েছে দৃঢ় সমর্থন প্রদানের ভূমিকা। খুব সম্ভবত সাবেক মহাপরিচালক বান কি মুন এই দুপক্ষের মধ্যে সমন্বয় প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। রজেনথাল জানান, তিনি এরকম সন্দেহ প্রমাণের জন্য আলাদা করে কারো বিরুদ্ধে তদন্ত করেননি। তবে তার প্রতিবেদনে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের সাবেক সমন্বয়কারী রেনাতা লক-দেসালিয়েনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি রোহিঙ্গাদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও নির্যাতনের আকার কমিয়ে প্রচার করেছেন। রজেনথালের প্রতিবেদনে বলা হয়, লক-দেসালিয়েনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল একটি উন্নয়নমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আচমকাই তিনি নিজেকে এমন এক পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করলেন যেখানে জোরালো রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এমন পরিস্থিতে সামলানোর মতো দক্ষ ছিলেন না তিনি।
তিনি বেশ কয়েকবার সাহায্য চেয়ে আবেদন করলেও সাড়া মেলেনি উপর মহল থেকে। তার অধীনস্থ কর্মীর সংখ্যা ছিল কম। ওপর মহল থেকে নির্দেশনাও ছিল অসপষ্ট।