সরকার বিদেশে চাল রপ্তানির কথা ভাবছে। এটা নিঃসন্দেহে আানন্দ ও গৌরবের, অপর দিকে ভাবনার বিষয়। বর্তমান কৃষক বান্ধব সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ চালে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে গৌরব ও সাফল্যের এ ঘোষণা দিয়েছেন। কৃষককে তাঁর উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতকরণই চাল রপ্তানির মূল উদ্দেশ্য-বলেছেন অর্থমন্ত্রী।
বলা হচ্ছে, বাজারে কম মূল্যের ওএমএস এর চাল বিক্রি হচ্ছে না। কারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে ক্রয় মতাও। বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন শ্রমজীবীর আয় যে কোন সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশী। মানুষের রুচিরও পরিবর্তন ঘটেছে। চাল রপ্তানি করলেই কী কৃষকের ধানের উচিত দাম নিশ্চিত করা যাবে ? বর্তমান পরিস্থিতিতে এ কথা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
বন্যা, খরা, আইলা বা নিত্য প্রাকৃকিত দুর্যোগের হুমকির মুখে থাকা এ দেশে এখনই চাল রপ্তানির মতো ঝুকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া কী উচিত ? কৃষক ও জনবান্ধব বর্তমান সরকার কৃষককে তাঁর উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য দিতে বদ্ধপরিকর আবার জনগণকেও তাঁদের আয়ত্ত্বের মধ্যে ভোগ্যপণ্য সরবরাহ দিতে চায়। আমাদের সমাজে সব কিছুরই দাম বাড়লেও বাড়ে না শুধু ধানের দাম। ধানের দমের সাথে অন্য কোন পণ্যের সামঞ্জস্য নাই। এমনকি চালের সাথেও । কৃষকের জন্য এ এক অসহনীয় ও পীড়াদায়ক অবস্থা।
বাজারে বর্তমানে যে মূল্যে চাল বিক্রি হচ্ছে, সে অনুপাতে ধানের ন্যায্যমূল্য প্রদান কৃষককে নিশ্চিত করতে পারলে, কোন প্েযরই তির কোন সম্ভাবনা থাকবে না। কৃষকের ধানের দরপ্রাপ্তি এবং ক্রেতার চাল ক্রয়ের দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক।
‘সয়েল টু ডাইনিং টেবিল’ এর জার্নি’র গ্যাপ বা ব্যবধান কমিয়ে আনতে পারলেই অধিকাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এর ফলে মাঠ পর্যায়ে কৃষক অধিক দাম পাবে এবং ভোক্তা অধিকতর কম দামে চাল কিনতে এবং বাজার সকল মহলের জন্য সহনশীল থাকবে।
বর্তমানের প্রচলিত বাজার দরেই তা করা সম্ভব। এ জন্য দরকার একদিকে কাদ (নীচু/ঢালু) হওয়া লাভের নিক্তিকে শুধু ব্যালেন্স করে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা। সরকারকে এক্ষেত্রে ন্যায়দণ্ড- হাতে শক্ত হতে হবে। শুধু কৃষকে ন্যায্যমূল্য প্রদানের জন্য চাল রপ্তানির দরকার নাই।
আসুন দেখি, কত ধানে কত চাল, কত খরচ? ব্রাণবাড়িয়া জেলা দেশের অন্যতম ব্যবসা স্থান আশুগঞ্জের-হাজী তারা মিয়া অটো বয়লার অ্যান্ড রাইস মিল এর স্বত্ত্বাধিকারী মো: কাউসার আহমেদ প্রতি ১৫ টন ধান হতে চাল উৎপাদনে খরচের যে হিসাব দিয়েছেন, খাতওয়ারী তা নিম্নে প্রদত্ত হলো:
(১) ধান সেদ্ধ, শুকানো, ক্রাশিং ও ডেলিভারি বাবদ ২০ জন শ্রমিক প্রয়োজন। প্রতি শ্রমিক মজুরি ৪৮০/ টাকায় ২০জনে ৯, ৬০০টাকা ।
(২)জ্বালানি বাবদ খরচ, তুষ ৫৩ বস্তা (৫০ কেজি/বস্তা) ১০০ টাকা প্রতি বস্তা হলে ৫৩ বস্তা ৫,৩০০ টাকা
(৩) চাতাল ভাড়া ৮,০০০.০০ টাকা
(৪) বিদ্যুত বিল ২,১০০ টাকা
(৫) ধান ফাটাতে এক পিচ রাবার ৭,৮০০ টাকা
(৬) আনুুষঙ্গিক খরচ ৩, ০০০ টাকা
সুতরাং যা দাঁড়াচ্ছে, ১৫ টন ধান থেকে চাল তৈরিতে মোট খরচ হচ্ছে ৩৫,৮০০,০০ টাকা। প্রতি টন ধান থেকে চাল তৈরিতে মোট খরচ ২৩৮৬.৬৬ টাকা, প্রতি কেজি ধান হতে চাল তৈরিতে খরচ ২.৩৮ টাকা।
অপরদিকে, ৫ টন ধান থেকে উপজাত হিসাবে পাওয়া যাবে-তুষ ১২০ বস্তা, (১০০ টাকা হলে ১২০ বস্তার মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১২,০০০ টাকা), কুড়া ৩৩ বস্তা(৭০০ টাকা বস্তা হলে ৩৩ বস্তার মূল্য দাঁড়ায় ২৩,১০০ টাকা), ১৫ টন ধান থেকে প্রাপ্য উপজাতের মূল্য দাঁড়ায় ৩৫,১০০ টাকা। একইভাবে এক টন ধান থেকে প্রাপ্য উপজাতের মূল্য দাঁড়াবে মোট ২,৩৪০ টাকা। এক কেজি ধান থেকে প্রাপ্য উপজাতের মূল্য ২.৩৪ টাকা।
তাহলে এটি স্পষ্ট যে এক কেজি ধান থেকে চাল তৈরিতে বলতে গেলে অতিরিক্ত কোন টাকা খরচ করতে হয় না। ধান ভাঙ্গিয়ে প্রাপ্য উপজাতের মূল্য দিয়েই ধান ভাঙ্গানোর খরচ মিটানো হয়। এর সাথে পরিবহণ ব্যয় ধরলে ১০ টাকা মণপ্রতি হিসাবে প্রতি কেজি ধানের পরিবহণ খরচ ০.৪০ টাকা ধরা যেতে পারে।
অপরপক্ষে ধান ও চালের অনুপাত হচ্ছে: ১.৪৫ঃ ১ । ৪০ কেজি ধান থেকে ২৭.৫ কেজি চাল হয়। এ পরিমাণ চালের উৎপাদন মূল্য হচ্ছে (পরিবহণ ১০ টাকা + ধান ভাঙ্গানো ০.০৪ টাকা হিসাবে ৪০ কেজি + আশুগঞ্জে বর্তমান ধানের দর ৫৮০ টাকা) ৫৯১.৬/২৭.৫ টাকা ।
অর্থাৎ মিলে প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ২১.৫১ টাকা। মাঠ পর্যায়ে ধানের দাম ৫০০ টাকা বা ৫৫০ টাকা ধরে হিসাব করে কেজি প্রতি চাল উৎপাদন খরচ হয় যথাক্রমে ১৮.৬০ টাকা বা ২০.৪২ টাকা মাত্র।
অন্যদিকে কৃষক পর্যায়ে জমিতে প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে অবস্থাভেদে খরচ হচ্ছে যথাক্রমে ৭০০, ৭৫০ ও ৮৬০ টাকা (দৈনিক ইত্তেফাক, ২০.০৫.১২)। অর্থাৎ কেজি প্রতি চাল উৎপাদন করতে কৃষক পর্যায়ে অবস্থা ভেদে খরচ হচ্ছে যথাক্রমে ২৫.৮৭, ২৭.৬৯ ও ৩১.৬৯ টাকা। এক্ষেত্রে একজন কৃষকের প্রতি কেজিতে অবস্থা ভেদে ক্ষতি হচ্ছে ৭.২৭ টাকা-১৩.০৯ টাকা। আর রাইস মিলে সরকার নির্ধারিত মূল্য ৭২০ টাকা হিসাবে প্রতি কেজি চাল উৎপাদন খরচ হচ্ছে ২৬.৬০ টাকা ।
এ দামে একটা পর্যায়ে মাত্র কৃষকের কেজি প্রতি ০.৭৩ টাকা লাভ হবে। সরকার রাইস মিল থেকে চাল কিনবে কেজি প্রতি ২৮ টাকা দামে। এ দামে একজন মিল মালিকের কেজিতে প্রতি লাভ হবে ৬.৪৯ -৯.৪০ টাকা । আর কৃষকের তি হচ্ছে কেজি প্রতি ৭.২৭ টাকা-১৩.০৯ টাকা। এ অরাজকতা, অন্যায়, অগ্রহণযোগ্য ও ন্যায় বিচার পরিপন্থী। এটা চলতে দেয়া ও মেনে নেয়া যায় না।
এ হিসাব শুধু বর্তমান বাজার দর, খরচ, বিভিন্ন সূত্র ও মিল হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে করা। অবস্থার প্রেক্ষিতে এর তারতম্য হতে পারে। এতে কৃষকের রিস্ক ফ্যাক্টর হিসাবে নেয়া হয়নি। এ হিসাব থেকে ধান উৎপাদন খরচ, চাল তৈরির ব্যয় ও সরকারের অবস্থানের একটি সাধারণ চিত্র/ধারণা পাওয়া যবে।
আমরা সবাই জানি, বাজরে আমরা কত দামে চাল কিনছি ? চলতি বাজার দরে লাভের পরিমাণ অনেক অনেক বেশী। এ থেকে আমরা মিল মালিক/ব্যবসায়ীর লাভ কত বা কৃষকের ক্ষতিই বা কত-তা ধারণা করতে পারি। লাভের হিস্যা উৎপাদক কৃষক ও মিল মালিক/ব্যবসায়ীদের মঝে ভাগ করতে বাঁধা কোথায় ? সুষম বন্টনে উৎপাদক, বিক্রেতা ও ভোক্তা-এ ত্রিপক্ষই সমভাবে লাভবান হবে।
কিন্তু বাজারে তো চালের দাম কম নয়। আমরা ভোক্তাগণ কী কম দামে চাল খাচ্ছি? কৃষকের ধান থেকে উৎপাদিত চাল আমরা বেশী দামে কিনছি। অথচ কৃষক এ অতিরিক্ত মূল্যের ন্যায্য হিস্যা পাচ্ছেন না। তাঁকে এ থেকে বঞ্চিত করে অবিচার করা হচ্ছে। ধান উৎপাদনে কৃষকের, চাল তৈরিতে মিল মালিক, ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের প্রাপ্য ন্যায্য হিস্যা আনুপাতিক হারে সুষম বণ্টন করতে পারলে কোন প্যই ক্ষতির সম্মুখিন হবে না । একজন কৃষক পরিপূর্ণ ঝুঁকির মুখে ফসল উৎপাদন করেন। যে কোন মুহূর্তে ফসলহানিতে সর্বশান্ত হতে পারেন। তাঁর রিস্ক ফ্যাক্টর আমরা হিসাবে নিই না। অথচ একজন মিল মালিক বা ব্যবসায়ী পরিপূর্ণ লাভ নিশ্চিত হয়েই ব্যবসা করেন। যার ঝুঁকি বেশী, তাঁর ক্ষতিও বেশী। এ কেমন রীতি! হওয়া উচিত ছিল উল্টোটা।
কৃষি পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে অধিষ্ঠিত করতে কৃষককে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হবে। ন্যায্যমূল্য প্রদানের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব। ধানের কম দাম, সার ও জ্বালানি মূল্যের উর্ধ্ব গতির কারণে আগামী ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সরকার নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছে। ভোক্তাদের উচিত মূল্যে ও নিখাত খাদ্য প্রাপ্তিতে কত উদ্যোগ, শত প্রচেষ্টা। ভ্রাম্যমাণ ভেজাল বিরোধী আদালত, র্যাব, পুলিশ, ম্যাজিষ্ট্রেট এর ব্যাপক তৎপরতায় এ নষ্ট সমাজে আমাদের আশান্বিত করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্যের উর্ধ্ব মূল্য নির্ধারণে বিরতিহীন মিটিং করে আমদানিকারকদের সাথে। বেশী দামে বিক্রি করা যাবে না। আইনের ব্যাঘাত হলে নির্ঘাত জেল জরিমানা অবধারিত। ভেজাল, কেমিক্যাল মিশ্রিত পণ্য বিক্রি রোধ ও বাটখারার বাটপারি বন্ধেও কর্মতৎপরতা প্রসংশনীয়। কিন্তু উৎপাদক বা কৃষকের জন্য পণ্যের নিম্ন মূল্য কি নির্ধারণ করা আছে ? নাই। উৎপাদন খরচের নীচে পণ্য কৃষককে বিক্রি করতে বাধ্য করা যাবে না। উৎপাদকের সুরা বা সে যেন তিগ্রস্থ না হয় তার কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা নাই।
ধানের মূল্য নির্ধারণে কৃষকদের সাথে মিটিং এর কোন ঘটনা আমার জানা নাই। বিক্রেতা বা আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য আমদানি খরচসহ লাভ ধরেই দাম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বাজারে সে দামে বিক্রি হয়। কখনো তাঁরা লস দিয়ে পণ্য বিক্রি করে না। কৃষিও তো এক ধরণের ব্যবসা। তবে তাঁকে কেন তি গুণতে হবে ? তাঁদের কোন সংগঠন বা ভয়েজ নাই বলে ? সরকার সকলের, দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ন্যায়সঙ্গগত আচরণই কাম্য। উৎপাদন মূল্যের সাথে লাভ ধরে নির্ধারিত দামে মিল মালিকসহ সবাইকে ধান কিনতে বাধ্য করতে হবে।
উর্ধ্বমূল্য নিশ্চিতকরণে যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত, র্যাব বা পুলিশ কাজ করে তবে নিম্নমূল্য প্রাপ্তিতেও তাঁদের সক্রিয় কর্মতৎপরতা কেন চালানো হবে না ? সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয়মূল্য একটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। এ দামে ধান বিক্রি করতে পারলেও কৃষকের তেমন তি হবে না। এখন প্রয়োজন এর সঠিক বাস্তবায়ন এবং দরকার কঠোর মনিটরিং। সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান না কিনলে সে মিল থেকে চাল ক্রয় করা যাবে না। নির্ধারিত মূল্যে ধান না কিনলেও ঘোষিত মূল্যে চাল সরবরাহে তাদের কোন আপত্তি নাই। বলা হবে, ওপেন মার্কেট, মার্কেটই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে। কোন হস্তপে কাম্য নয়। কিন্তু সরকার তো সকলের মঙ্গল, দুর্বলকে রা করবে। সরকার তো এক চোখা নীতিতে বিশ্বাস করে না। সরকারকেই কৃষকের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির সুরা নিশ্চিত করতে হবে। বেশী মানুষ কৃষককে ক্ষতিগ্রস্থ করে মুষ্টিমেয় লোকের পকেট ভারি করা উচিত নয়। ভোটের বাজারেও কৃষকের ভোট সংখ্যা বেশী।
‘কৃষক বাঁচলে, দেশ বাঁচবে’ বা ‘কৃষক বাচাঁও, দেশ বাঁচাও’ ইত্যাদি শ্লোগানের বাস্তব বাস্তবায়ন চাই। প্রয়োজনবোধে সকল ধান সরকারি জিম্মায় নিয়ে সররকার নির্ধারিত মূল্যে মিলে ধান সরবরাহের ব্যবস্থা এবং রাইস মিল গুলোকেও কঠোর নজরদরিতে আনা যেতে পারে। এর সাথে জাতির বাঁচা মরার প্রশ্ন । কৃষককে ন্যায্য মূল্য প্রদানে একটি উপায় খুঁজে আমাদের বের করতে হবেই এবং কঠিন, কঠোর ও শক্ত হাতে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
অধিক লাভ প্রত্যাশীদের হাতে অসহায় কৃষককে ছেড়ে দেয়া যায় না। পেশী শক্তি, অর্থ সম্পদ, ব্যবসায়ী-দুষ্ট অপরাজনীতির কুটকৌশলের কাছে কৃষককে জিম্মি বা হার মানতে দেয়া যায় না।
প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের কৃষকের নামে অঙ্গ সংঠন রয়েছে। তাঁরাও এক্ষেত্রে নিরব ভূমিকা পালন করছেন। পদ পদবি, নেতার স্তুতি বা লেজুর ভিত্তির জন্য তাঁরা যত না সরব, কৃষকের স্বার্থ রায় তাঁরা তত নীরব। দলীয় স্বার্থ বা ফরমাইশী প্রোগ্রামের বাইরে যাওয়ার মতা তাঁদের নাই। গুলি খেয়ে মরল বা পণ্যের দাম না পেয়ে কৃষক জিন্দা-লাশ অবস্থায় রইল-এ নিয়ে তাঁদের কোন মাথা ব্যথা নাই। কৃষকের স্বার্থ বা দাবি আদায়ে তো কেউ হরতাল বা অনশন ডাকে করে না। আমাদের বুদ্ধিজীবী/বিবৃতিজীবী বা ক্যাচালজীবী মহল রাজনীতি বা আন-প্রডাক্টিভ খাতে যত উচ্চকণ্ঠ, কৃষকের কথা বলতে তাঁরা তত বোবা ও বধির। কিন্তু অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ হয়?
ইতিমধ্যে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং বিশ্বব্যাপী খরা ও প্রাকৃতিক কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ষড়ঋতুর এ দেশে খরা, বন্যা, আইলা, সিডর ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হিসাবে নিয়েই বুঝে, শুনে, গুণে, ভেবে খাদ্য মজুদ বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
সরকারের অব্যাহত সহায়তা এবং সময় মতো বীজ সার, সেচ, জ্বালানি, খামার যান্ত্রিকীরণে ভূর্তকি ও ঋণপ্রাপ্তি সহজলভ্যতার জন্য বাংলাদেশ আজ প্রায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে। আমাদের প্রকৃত জাতীয় বীর কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষকগণ আমাদের কৃষি ব্যবস্থাকে এমনভাবে সাজিয়েছেন যে, প্রতিাদনই কোন না কোন ফসল কর্তন হচ্ছে, অধিক ফলন দিচ্ছে, প্রতি চার মাস অন্তর ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে দুর্ভিক্ষ ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রাজনৈতিক উদার, দূরদৃষ্টি সিদ্ধান্ত ও সহযোগিতা এ সফলতা অর্জনে সম্ভব হয়েছে। সরকারের এ অর্জনকে ধরে রাখতে হবে। নস্যাৎ করে দিতে হবে মধ্যসত্বভোগী চক্রের চক্রান্ত। রাইস মিল মালিক বা ব্যবসায়ীগণ এদেশেরই মাটির সন্তান। জাতির প্রতি তাঁদেরও দায়দ্ধতা রয়েছে, রয়েছে ভালবাসা।
সোনা ফলানো কৃষক, সোনার ডিম পারা রাজহাঁসটিকে তাঁরা বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। ফলনের ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখতেই তা করতে হবে। লাভের ন্যায্য হিস্যা কৃষককে দিতে তাঁরা কার্পণ্য করবে না। প্রয়োজন সমন্বয় ও সমঝোতা।
ড. নিয়াজ পাশা: কৃষি প্রকৌশলী, একজন হাওর ভূমিপুত্র। সাবেক সহ-সভাপতি(ভিপি), ফজলুল হক হল সংসদ, বাকৃবি, ময়মনসিংহ।