ঢাকা ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কচু শাকের পুষ্টিগুণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০১৯
  • ২৪৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। এদেশে কচু তেমন সমাদৃত নয় এবং অনেকটা অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কচুশাক ভিটামিন ‘এ’ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। তাই দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ শাক দু’প্রকার। যথাঃ (১) সবুজ কচুশাক ও (২) কালো কচুশাক। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ ও কালো কচুশাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। এ ক্যারোটিন থেকেই আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাক থেকেঃ-

৩·৯ গ্রাম প্রোটিন,
৬·৮ গ্রাম শর্করা,
১·৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি,
২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,
১০ মিলিগ্রাম লৌহ,
০·২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন),
০·২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন),
১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি ও
৫৬ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা রয়েছে কচু শাকের আসুন এবার সেগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ
১। রাতাকানা রোগকচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগপ্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে, যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

২। হৃদরোগ ও স্ট্রোককচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। তা ছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

৩। হিমোগ্লোবিনকচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তারই কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

৪। অক্সিজেন সরবরাহ আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

৫। দাঁত ও হাড়ের গঠনকচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬। শরীরে ক্ষতকচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।

৭। কোষ্ঠকাঠিন্যকচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।

৮। মুখ ও ত্বকের রোগভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি। তাই মুখ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে।

তবে কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

কচু শাকের পুষ্টিগুণ

আপডেট টাইম : ০৪:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কচু একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর সবজি। এদেশে কচু তেমন সমাদৃত নয় এবং অনেকটা অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা হয়। অথচ কচুশাক ভিটামিন ‘এ’ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। তাই দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ শাক দু’প্রকার। যথাঃ (১) সবুজ কচুশাক ও (২) কালো কচুশাক। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ ও কালো কচুশাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন রয়েছে। এ ক্যারোটিন থেকেই আমরা ভিটামিন ‘এ’ পেয়ে থাকি। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচুশাক থেকেঃ-

৩·৯ গ্রাম প্রোটিন,
৬·৮ গ্রাম শর্করা,
১·৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি,
২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম,
১০ মিলিগ্রাম লৌহ,
০·২২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন),
০·২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন),
১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি ও
৫৬ কিলোক্যালোরী খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়।

এছাড়া আরো অনেক স্বাস্থ্য উপকারীতা রয়েছে কচু শাকের আসুন এবার সেগুলো জেনে নেওয়া যাকঃ
১। রাতাকানা রোগকচুশাক ভিটামিন এ-এর খুব ভালো উৎস। রাতাকানা রোগসহ ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সব ধরনের রোগপ্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কচুশাকে ভিটামিন-এ থাকে, যা আমাদের রাতকানা, ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধসহ দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে দেয়।

২। হৃদরোগ ও স্ট্রোককচুশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, তাই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। তা ছাড়া কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল কমে তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

৩। হিমোগ্লোবিনকচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে এর সমাদর অনেক বেশি। আমাদের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তারই কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে, তাই রক্তশূন্যতায় ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক বললেই চলে।

৪। অক্সিজেন সরবরাহ আমাদের শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাক অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শাকের আয়রন ও ফোলেট রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। ফলে অক্সিজেন সংবহন পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিন কে রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

৫। দাঁত ও হাড়ের গঠনকচুশাকের সবচেয়ে বড় উপকারিতা হল এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস। আমাদের দাঁত ও হাড়ের গঠন ও ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচুশাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৬। শরীরে ক্ষতকচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এর লৌহ উপাদান আপনার দেহে সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। তা ছাড়া ভিটামিন-সি শরীরের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। তাই শিশুদের ছোটবেলা থেকেই কচুশাক খাওয়ানো উচিত।

৭। কোষ্ঠকাঠিন্যকচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ থাকে, যা খাবারকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে থাকে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তারা কচুশাক খেতে পারেন।

৮। মুখ ও ত্বকের রোগভিটামিন এ-এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি। তাই মুখ ও ত্বকের রোগপ্রতিরোধেও কচুশাক সমান ভূমিকা রাখে।

তবে কচুশাক বা কচু খেলে অনেক সময় গলা চুলকায়। কারণ এতে অক্সলেট নামক উপাদান থাকে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার করা উচিত। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।