হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাঁধে বেলচা, পরনে লুঙ্গি আর পায়ে ছেঁড়া স্যান্ডেল। দেখে মনে হবে মহল্লায় কাজের সন্ধানে ঘুরছেন কেউ। কিন্তু আসলে তিনি দিনমজুর বা মিস্ত্রি নন, তিনি পুলিশের এসআই। এসেছেন আসামির খোঁজে। দিন শেষে আসামি ধরার কৌশলে সফলও হয়েছেন তিনি।
একটি হত্যা মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর আসামি ধরতে এমন অভিনব ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন রাজধানীর কদমতলী থানার এসআই মো. লালবুর রহমান। ছদ্মবেশ ধারণ করে সফল হয়েছেন। মামলার আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ মার্চ রাজধানীর কদমতলী থানা এলাকার ধনিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় পারিবারিক কলহের জের ধরে শারমিন আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতক স্বামী মাসুদ হাওলাদার। ঘটনার পরদিন শারমিনের ভাই বাদী হয়ে কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান কদমতলী থানার এসআই মো. লালবুর রহমান।
দায়িত্ব পাওয়ার পর শারমিন হত্যায় অভিযুক্ত ও মামলার আসামি স্বামী মাসুদ হাওলাদারের মোবাইল ট্রাক করার চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ পান তিনি।পরে আত্মীয়-স্বজনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে হত্যাকারীর অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে নিকট আত্মীয়ের মোবাইলে তথ্য বিশ্লেষণ করে আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন তদন্ত কর্মকর্তা লালবু।
জানতে পারেন, নিহত শারমিনের স্বামী মাসুদ পুরাতন প্যান্ট-শার্টের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসার জন্য সে শনির আখড়া দোকানের পজিশনও নিয়েছিলেন। তবে ব্যবসা শুরু করার আগেই স্ত্রীকে হত্যা করেন তিনি। পরে দোকানের পজিশনের টাকা ফেরত নিতে দোকান মালিকের পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করেন।
তবে প্রযুক্তির সহায়তায় দোকান মালিক পক্ষের লোকের সাথে যোগাযোগ করে হত্যাকাণ্ডের বিষয় তাদের জানিয়ে সহায়তা চায় পুলিশ। গতকাল সোমবার (১৯ মে) দুপুর ২টার দিকে মাসুদ দোকানের অগ্রিম টাকা নিতে গেলে মিস্ত্রি সেজে থাকা এসআই লালবুর রহমান ও এএসআই মো. জসিম ঘটনাস্থল থেকে তাকে গ্রেফতার করেন।
হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেফতারে করার কৌশল সম্পর্কে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই লালবুর রহমান বলেন, মাসুদ অনেক চতুর। তিনি আশপাশে ভালো পোশাক ও চালচলনের কাউকে দেখলে দ্রুত সটকে পড়ে। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য ছদ্মবেশ ধারণ করা হয়। রাজমিস্ত্রির পোশাকে মিন্টু চত্বর এলাকায় অবস্থান করতে থাকি। দোকান মালিক পক্ষের লোকের উপর নজর রাখে এএসআই জসিম।
তিনি আরও বলেন, অপেক্ষার একপর্যায়ে চলে আসে সেই মোক্ষম সময়। দূর থেকে একটি লোক মুখে মাস্ক পড়া অবস্থায় দোকান মালিকপক্ষের লোককে সালাম দিচ্ছে। কোনো কালক্ষেপণ না করে মাসুদকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরি। হঠাৎ জনসম্মুখে এমন ঝাপটে ধরায় স্থানীয় লোকজন জানতে চাইলে নিজের পরিচয় দিয়ে জানাই, সে হত্যা মামলার আসামি।
গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ জানান, হত্যার সময়ের চেহারা ছিল অনেক ফর্সা এবং দাড়ি-গোঁফহীন। নিজেকে গোপন রাখতে চেহারার পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। দিনের বেশিরভাগ সময় রোদে কাটান যাতে ফর্সা রং কালোতে পরিণত হয়। সেই সাথে বড় করেন দাড়ি-গোঁফ, যাতে পুলিশ বা অন্য কেউ চিনতে না পারে।
এসআই লালবু বলেন, গ্রেফতারের পর মাসুদ হাওলাদার সোমবার (২০ মে) আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।