ঢাকা ০৯:৪১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলোচনায় সিঁথি আফরোজা শামা রুমিন নিপুণ ও মনি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০১:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯
  • ২৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ সংসদে যোগ দিয়েছে বিএনপি। সংরক্ষিত নারী আসনেও প্রার্থী দেবে। নিয়মানুযায়ী একজন নারী সংসদ সদস্য পাবে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। একটি মাত্র সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির নেত্রীদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা না থাকলেও পর্দার অন্তরালে চলছে নানামুখী দৌঁড়ঝাপ। বিএনপি নেত্রীদের মধ্যে অনেকেই গোপনে গোপনে লবিং-তদবির করছেন। যার যার বলয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছেন দলের টিকিট নিয়ে সংসদে যেতে। এই দৌড়ে রয়েছেন অন্তত ডজন খানেক নারী নেত্রী।

বিএনপির নারী নেত্রীদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পুত্রবধূ ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি এবং নিপুণ রায় চৌধুরী। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফাহিমা মুন্নী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও সাবেক সংসদ সদস্য আশিফা আশরাফী পাপিয়ার নামও রয়েছে আলোচনায়।

তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ এই দৌঁড়ে নেই বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তাদের নাম বিএনপির কেন্দ্রে আলোচনায় আছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে হবেন বিএনপির ভাগ্যবান নারী এমপি বিষয়টি নির্ধারণ করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহাসচিবের মত নিয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত।

জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে আগ্রহীরা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে সাংগঠনিক যোগ্যতা, রাজনৈতিক পটভূমি, পরিবারের অবদান ও নিজের ত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরে মনোনয়ন দাবি করছেন। রাজনৈতিক দক্ষতা ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হলে মনোনয়ন পাবেন, এমন প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী। দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় আছেন তারা।

গত সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক নেতাদের জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট কারও নাম জানাননি তিনি। এরপর থেকে বিএনপির নারী নেত্রীরা নিশ্চিত হন যে, বিএনপি সংসদে নারী প্রতিনিধি পাঠাবে। ওইদিন থেকে তাদের দৌঁড়ঝাপ বেড়ে যায়। একাদশ নির্বাচনের আগে আলোচনা ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাকে ঘিরেই বিএনপির ভবিষ্যত রাজনীতি পরিচালিত হবে। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি। পাসপোর্ট জটিলতায় দেশে আসতে পারেননি ডা. জোবাইদা। এখন জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হোক এটি চাচ্ছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ।

এরকম বাস্তবতায় বিএনপির ভেতর চলছে নানা সমীকরণ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিঁথি শেষ পর্যন্ত বিএনপির টিকিটে সংসদে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ বিএনপির হাইকমান্ডকে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন অনেকগুলো বিকল্প মাথায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যেমনটি হয়েছে দলের ৫ এমপির শপথগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়।

সূত্র জানায়, কোকোর মৃত্যুর পর শর্মিলা সিঁথি তার দুই কন্যাকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে শর্মিলা দেশে এসেছিলেন।তখন খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন। এদিকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে দলের অনেকেই নীতিনির্ধারকদের বাসায় গিয়ে তদবির শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। দলের একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, শর্মিলা সিঁথিকেই সংরক্ষিত নারী আসনে একমাত্র এমপি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়ে বিভিন্ন মতও আছে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসতেন। তবে পরিবারের কেউ রজনীতিতে আসবে কি না, তা নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বেরিয়ে আসা বা তার সিদ্ধান্তের ওপর।

তবে সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, এক্ষেত্রে তারেক রহমান যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই সংরক্ষিত আসনের এমপি হবেন। এক্ষেত্রে সিঁথিকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন নাও দেয়া হতে পারে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ডজন প্রতিযোগি থাকলেও নারী এমপির তালিকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারজন। তারা হলেন-ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, আফরোজা আব্বাস, নিপুণ রায় চৌধুরী ও শ্যামা ওবায়েদ।

আইনজ্ঞ হিসেবে রুমিন ফারহানার রয়েছে বাকপটুতা ও ক্ষুরধার যুক্তি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক পরিবারে (অলি আহাদের মেয়ে) বেড়ে ওঠা রুমিন ফারহানা বিএনপির কূটনৈতিক উইং শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। টিভি টক শোসহ দলের বিভিন্ন সেলেও কাজ করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন দলীয় বক্তব্য জাতিকে জানাতে সংসদে কার্যক্রর ভূমিকা রাখতে পারবেন রুমিন ফারহানাই।

অন্যদিকে নিপুণ রায় চৌধুরীও এসেছেন রাজনৈতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন পরিবার থেকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ নিপুণ রায় চৌধুরীর বাবা একই দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও তার রয়েছে ভূমিকা। কয়েক দফা গ্রেফতার হয়েছেন। সরকারি দলের হামলার শিকার হয়েও রাজপথে সক্রিয় এই নেত্রী। তাই তাকে দল মূল্যায়ন করবে বলে মনে করছেন বিএনপির তৃণমূল।

পারিবারিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসও সংরক্ষিত আসনের জন্য আলোচিত হচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের প্রচারাভিযানে ভূমিকা রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজনও হয়েছেন তিনি।

এছাড়া বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়েদের মেয়ে শ্যামা রহমানের রয়েছে দলে বড় অবদান।তিনি বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়েও জোরালো ভূমিকা রাখছেন। এ কারণে তার নামটিও বিবেচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত জানা নেই তার।দল সিদ্ধান্ত নিলে তিনি সংসদে যেতে চান।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বুধবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যাংকক গেছেন। ওখান থেকে তিনি লন্ডন যাবেন। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সংরক্ষিত নারী আসন ও বগুড়া-৬ আসেন প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

দল কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশ যাওয়া আগে যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সময়মতো সবই জানা যাবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিএনপির একটি নারী আসনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ২০ মের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ মে এবং ভোট ১৬ জুন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচনায় সিঁথি আফরোজা শামা রুমিন নিপুণ ও মনি

আপডেট টাইম : ০৫:০১:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ সংসদে যোগ দিয়েছে বিএনপি। সংরক্ষিত নারী আসনেও প্রার্থী দেবে। নিয়মানুযায়ী একজন নারী সংসদ সদস্য পাবে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি দলটি। একটি মাত্র সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হতে বিএনপির নেত্রীদের মধ্যে প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা না থাকলেও পর্দার অন্তরালে চলছে নানামুখী দৌঁড়ঝাপ। বিএনপি নেত্রীদের মধ্যে অনেকেই গোপনে গোপনে লবিং-তদবির করছেন। যার যার বলয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করছেন দলের টিকিট নিয়ে সংসদে যেতে। এই দৌড়ে রয়েছেন অন্তত ডজন খানেক নারী নেত্রী।

বিএনপির নারী নেত্রীদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে যারা আলোচনায় আছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের পুত্রবধূ ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি এবং নিপুণ রায় চৌধুরী। বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফাহিমা মুন্নী, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হেলেন জেরিন খান ও সাবেক সংসদ সদস্য আশিফা আশরাফী পাপিয়ার নামও রয়েছে আলোচনায়।

তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ এই দৌঁড়ে নেই বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তাদের নাম বিএনপির কেন্দ্রে আলোচনায় আছে। তবে শেষ পর্যন্ত কে হবেন বিএনপির ভাগ্যবান নারী এমপি বিষয়টি নির্ধারণ করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহাসচিবের মত নিয়ে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত।

জানা গেছে, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে আগ্রহীরা বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে সাংগঠনিক যোগ্যতা, রাজনৈতিক পটভূমি, পরিবারের অবদান ও নিজের ত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরে মনোনয়ন দাবি করছেন। রাজনৈতিক দক্ষতা ও যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হলে মনোনয়ন পাবেন, এমন প্রত্যাশা করছেন বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী। দলের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় আছেন তারা।

গত সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শরিক নেতাদের জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে একজনকে মনোনয়ন দেয়া হবে। তবে নির্দিষ্ট কারও নাম জানাননি তিনি। এরপর থেকে বিএনপির নারী নেত্রীরা নিশ্চিত হন যে, বিএনপি সংসদে নারী প্রতিনিধি পাঠাবে। ওইদিন থেকে তাদের দৌঁড়ঝাপ বেড়ে যায়। একাদশ নির্বাচনের আগে আলোচনা ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাকে ঘিরেই বিএনপির ভবিষ্যত রাজনীতি পরিচালিত হবে। কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠেনি। পাসপোর্ট জটিলতায় দেশে আসতে পারেননি ডা. জোবাইদা। এখন জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হোক এটি চাচ্ছে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কেউ কেউ।

এরকম বাস্তবতায় বিএনপির ভেতর চলছে নানা সমীকরণ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সিঁথি শেষ পর্যন্ত বিএনপির টিকিটে সংসদে গেলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। কারণ বিএনপির হাইকমান্ডকে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এখন অনেকগুলো বিকল্প মাথায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যেমনটি হয়েছে দলের ৫ এমপির শপথগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়।

সূত্র জানায়, কোকোর মৃত্যুর পর শর্মিলা সিঁথি তার দুই কন্যাকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছেন। সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে শাশুড়ি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে শর্মিলা দেশে এসেছিলেন।তখন খালেদা জিয়া বিএসএমএমইউতে ভর্তি ছিলেন। এদিকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে দলের অনেকেই নীতিনির্ধারকদের বাসায় গিয়ে তদবির শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। দলের একজন নীতিনির্ধারক যুগান্তরকে বলেন, শর্মিলা সিঁথিকেই সংরক্ষিত নারী আসনে একমাত্র এমপি হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়ে বিভিন্ন মতও আছে। সবচেয়ে ভালো হতো যদি ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসতেন। তবে পরিবারের কেউ রজনীতিতে আসবে কি না, তা নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বেরিয়ে আসা বা তার সিদ্ধান্তের ওপর।

তবে সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, এক্ষেত্রে তারেক রহমান যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই সংরক্ষিত আসনের এমপি হবেন। এক্ষেত্রে সিঁথিকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন নাও দেয়া হতে পারে।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ডজন প্রতিযোগি থাকলেও নারী এমপির তালিকায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারজন। তারা হলেন-ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, আফরোজা আব্বাস, নিপুণ রায় চৌধুরী ও শ্যামা ওবায়েদ।

আইনজ্ঞ হিসেবে রুমিন ফারহানার রয়েছে বাকপটুতা ও ক্ষুরধার যুক্তি। দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক পরিবারে (অলি আহাদের মেয়ে) বেড়ে ওঠা রুমিন ফারহানা বিএনপির কূটনৈতিক উইং শাখায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। টিভি টক শোসহ দলের বিভিন্ন সেলেও কাজ করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন দলীয় বক্তব্য জাতিকে জানাতে সংসদে কার্যক্রর ভূমিকা রাখতে পারবেন রুমিন ফারহানাই।

অন্যদিকে নিপুণ রায় চৌধুরীও এসেছেন রাজনৈতিক ঐতিহ্যসম্পন্ন পরিবার থেকে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ নিপুণ রায় চৌধুরীর বাবা একই দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী। রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামেও তার রয়েছে ভূমিকা। কয়েক দফা গ্রেফতার হয়েছেন। সরকারি দলের হামলার শিকার হয়েও রাজপথে সক্রিয় এই নেত্রী। তাই তাকে দল মূল্যায়ন করবে বলে মনে করছেন বিএনপির তৃণমূল।

পারিবারিক ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসও সংরক্ষিত আসনের জন্য আলোচিত হচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। গত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের প্রচারাভিযানে ভূমিকা রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজনও হয়েছেন তিনি।

এছাড়া বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়েদের মেয়ে শ্যামা রহমানের রয়েছে দলে বড় অবদান।তিনি বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়েও জোরালো ভূমিকা রাখছেন। এ কারণে তার নামটিও বিবেচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে জানান, সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত জানা নেই তার।দল সিদ্ধান্ত নিলে তিনি সংসদে যেতে চান।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শ্যামা ওবায়েদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। দল এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সংরক্ষিত আসনের নারী এমপি নিয়ে দলীয় ফোরামে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বুধবার সকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ব্যাংকক গেছেন। ওখান থেকে তিনি লন্ডন যাবেন। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে সংরক্ষিত নারী আসন ও বগুড়া-৬ আসেন প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।

দল কাকে মনোনয়ন দিচ্ছে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিদেশ যাওয়া আগে যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সময়মতো সবই জানা যাবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বিএনপির একটি নারী আসনের জন্য তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ২০ মের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২১ মে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৮ মে এবং ভোট ১৬ জুন।