ঢাকা ০৯:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মানুষের সেবায় হাতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৫
  • ৭১৪ বার

বিশাল দেহের স্তন্যপায়ী প্রাণী হাতি। অত্যন্ত উপকারী তৃণভোজী স্থলচর। হাতি বাহন, বিনোদন ও উপার্জনের মাধ্যম। এদের দাঁত, হাড়, মাংস ও চামড়া অত্যন্ত দামি বস্তু। কালো, ধূসর-ফ্যাকাসে ছাড়াও হাতি সাদা বর্ণের হয়। এ বিশাল জন্তুকে মহান আল্লাহ মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। মানুষ ইচ্ছেমতো একে ব্যবহার করে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হস্তিবাহিনীর কথা যুগ-যুগান্তর মানুষ মনে রাখবে। এরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তিবাহিনীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছেন?’ (সূরা ফিল : ১)।

হস্তিবাহিনীর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তার কুদরতের সামনে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তিনি ‘আবাবিল’ নামে ছোট ছোট পাখি দ্বারা বিরাট হস্তিবাহিনীকেও পরাজিত করেন। হাদিস বিশারদরা এটিকে নবী করিম (সা.) এর মোজেজা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি নবী করিম (সা.) এর জন্মপূর্ব মোজেজা। হস্তিবাহিনীর এ অভূতপূর্ব ঘটনা পুরো আরবের অন্তরে কোরাইশদের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দেয়। সবাই স্বীকার করে, তারা বাস্তবিকই আল্লাহভক্ত। আল্লাহ তায়ালা খোদ তাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। (কুরতুবি)।

হাতি সাধারণত ৩০ ফুটের মতো উঁচু হয়। ওজন তিন থেকে পাঁচ টন। বাঁচে ৬০ থেকে ৭০ বছর। হাতির চামড়া পুুরু, ঝুলঝুল ও হালকা লোমশ। চোখ ছোট হলেও দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ন। ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তি প্রবল। লেজ খাটো, আগায় একগুচ্ছ শক্ত চুল আছে। হাতির গর্ভকাল প্রায় দুই বছরের মতো, তথা ২২ মাস। প্রায় দুই থেকে চার বছর পর বাচ্চা দেয়। মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে। যমজ দৈবাৎ জন্মে। এদের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুন। নবজাতক প্রায় ০.৯ মিটার লম্বা হয়। ওজন হয় প্রায় ৯০ কেজি, দ্রুত বাড়ে।

হাতির শুঁড়ের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। এদের শুঁড় প্রায় দুই মিটার লম্বা হয়। ওজন হতে পারে ১৫০ কেজি পর্যন্ত। ওজন হলেও হাতি সাঁতার কাটতে পারে। গভীর পানিতে শ্বাস নেয়ার জন্য শুঁড় ব্যবহার করে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, হাতির শুঁড়ে প্রায় এক লাখ পেশি আছে, হাড় নেই। তাই হাতি শুঁড়কে অাঁকিয়ে-বাঁকিয়ে যেভাবে খুশি কাজ করতে পারে। শুঁড় দিয়েই সে পানাহার নিজের মুখে তুলে নেয়। শুঁড়-স্পর্শেই কোনো বস্তুর আকার-আকৃতি বা বৈচিত্র্য বুঝতে পারে।

হাতির খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্য। এরা প্রচুর খায়। দিনে প্রায় ১৬৯ কেজির মতো খায়। এদের পানিও লাগে প্রচুর। প্রতিদিন প্রায় ৯৮.৮ লিটারের মতো পানি লাগে। তা খেতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। দিনের বড় একটা সময় হাতি খাবার সংগ্রহ করে। কখনও দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। এদের খাওয়া আবার ঋতু নিরপেক্ষ। যেমন বর্ষাকালে এদের মেন্যুতে থাকে নতুন ঘাস, গাছের পাতা, কলাগাছ, বাঁশ, ফলমূল ও গাছের ছাল ইত্যাদি।

হাতি দলবদ্ধ প্রাণী।

পাঁচ থেকে ২০টি পর্যন্ত একত্রে বাস করে। বিপদাপদে একজোট। সব সময় জোটবদ্ধ হয়ে থাকায় দুর্দিনে একে অন্যকে সাহায্য করে। হাতি পানিতে নামে, কাদায় গড়াগড়ি করে। পুরুষ হাতি ১৫ বছর বয়সে এবং স্ত্রী হাতি আরও আগে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। স্ত্রী হাতি সারা জীবন দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। ওদিকে পুরুষ হাতি ১৩ বছর বয়সে দল ছেড়ে চলে যায় এবং বাকি জীবন একাই বসবাস করে।

হাতি খুব শান্ত স্বাভাবের প্রাণী। বেশ নিরীহও বটে। তাকে আঘাত না করলে সেও কাউকে আক্রমণ করে না। তবে খেপে গেলে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে। আক্রমণ করার সময় সে কখনও পিছিয়ে পড়ে না। এদের মধ্যে বনো হাতি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। শুঁড় দিয়ে মানুষকে আছাড় দেয়। পদদলিত করে। গাছপালা উপড়ে ফেলে। বাড়িঘর ভেঙে ফেলে। তখন মানুষের ভয়ে পালানো বা অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এদের সঙ্গে শত্রুতা করলে নিষ্কৃতি পাওয়া মুশকিল।

হাতির স্মৃতিশক্তিও প্রখর। অনেক বছর আগের ঘটনাও এদের মনে থাকে। মানুষের মতো হাতিরও রয়েছে সংবেদনশীল মন। তাই দুঃখ পেলে এদের চোখে পানিও আসে। এদের বুদ্ধির কাছে কোনো বন্যপ্রাণী টেক্কা দিতে পারে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, আবহাওয়া-সম্পর্কিত জ্ঞানেও হাতির রয়েছে সমান দক্ষতা। প্রায় ১৫০ মাইল দূরে থাকা ঝড়ের খবর সবার আগে টের পায় হাতি। হাতি তার বড় বড় কানে খুব নিচু ফ্রিকোয়েন্সিও শুনতে পায়। ফলে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের ঝড়-বৃষ্টির উপস্থিতি টের পেয়ে থাকে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য হাতিকে আমব্রেলা স্পিসিসও বলা হয়। একটি হাতি বনে ছাতার মতো কাজ করে। হাতি টিকে থাকলে বনও টিকে থাকবে। বন টিকে থাকার অর্থই হলো হাজারো জীববৈচিত্র্যের জীবন বেঁচে যাওয়া। এক হাতির মৃত্যুতে অন্যরা নির্বাক দাঁড়িয়ে শোকও পালন করে। এমনকি শুঁড় দিয়ে সেই মরা হাতিকে স্পর্শও করে। মাঝে মাঝে সঙ্গীর মৃতদেহ নিজেরাই বয়ে নিয়ে যায়।

হাতির দাঁত অমূল্য সম্পদ। সারা পৃথিবীতেই হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম বিখ্যাত। এ দাঁত আইভরি শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারত, চীন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইভরি ব্যবসার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বিলাস সামগ্রীর বেশ কদর ছিল মোগল শাসকদের কাছেও। তখন হাতির দাঁত দিয়ে সিংহাসন, পালকি, মূর্তি, অশ্বারোহীসৈন্য, জীবজন্তু, রাজদরবার, দাবার ঘুঁটি, খড়ম, ছুরি, কলমদানি, পিঠ চুলকানি ইত্যাদি শৌখিন সামগ্রী তৈরি হতো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হাতির দাঁতের তৈরি শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ সংগ্রহ এখনও বিদ্যমান। এসবের মধ্যে মনোমুগ্ধকর একটি শিল্পকর্মের নাম এলোকেশী। এটি হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি পূর্ণাবয়ব এক নারীর মূর্তি।

হাতির দাঁত খুব দামি হওয়ায় শিকারীদের কবলে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য হাতি। এক্ষেত্রে গর্ভবতী হাতিও বাদ যাচ্ছে না। ফলে পৃথিবীর বুক থেকে খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে হাতি। এমনকি ‘হাতির দেশ’ থাইল্যান্ডেও হাতি দুর্লভ প্রাণীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, খাদ্য ও সংরক্ষণের অভাবে হাতি বিলুপ্তির পথে। তাই এ জন্তুটির প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মানুষের সেবায় হাতি

আপডেট টাইম : ১১:০৪:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৫

বিশাল দেহের স্তন্যপায়ী প্রাণী হাতি। অত্যন্ত উপকারী তৃণভোজী স্থলচর। হাতি বাহন, বিনোদন ও উপার্জনের মাধ্যম। এদের দাঁত, হাড়, মাংস ও চামড়া অত্যন্ত দামি বস্তু। কালো, ধূসর-ফ্যাকাসে ছাড়াও হাতি সাদা বর্ণের হয়। এ বিশাল জন্তুকে মহান আল্লাহ মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। মানুষ ইচ্ছেমতো একে ব্যবহার করে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হস্তিবাহিনীর কথা যুগ-যুগান্তর মানুষ মনে রাখবে। এরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেননি আপনার পালনকর্তা হস্তিবাহিনীর সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছেন?’ (সূরা ফিল : ১)।

হস্তিবাহিনীর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। তার কুদরতের সামনে কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। তিনি ‘আবাবিল’ নামে ছোট ছোট পাখি দ্বারা বিরাট হস্তিবাহিনীকেও পরাজিত করেন। হাদিস বিশারদরা এটিকে নবী করিম (সা.) এর মোজেজা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এটি নবী করিম (সা.) এর জন্মপূর্ব মোজেজা। হস্তিবাহিনীর এ অভূতপূর্ব ঘটনা পুরো আরবের অন্তরে কোরাইশদের মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দেয়। সবাই স্বীকার করে, তারা বাস্তবিকই আল্লাহভক্ত। আল্লাহ তায়ালা খোদ তাদের শত্রুকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। (কুরতুবি)।

হাতি সাধারণত ৩০ ফুটের মতো উঁচু হয়। ওজন তিন থেকে পাঁচ টন। বাঁচে ৬০ থেকে ৭০ বছর। হাতির চামড়া পুুরু, ঝুলঝুল ও হালকা লোমশ। চোখ ছোট হলেও দৃষ্টিশক্তি তীক্ষ্ন। ঘ্রাণ ও শ্রবণশক্তি প্রবল। লেজ খাটো, আগায় একগুচ্ছ শক্ত চুল আছে। হাতির গর্ভকাল প্রায় দুই বছরের মতো, তথা ২২ মাস। প্রায় দুই থেকে চার বছর পর বাচ্চা দেয়। মাত্র একটি বাচ্চা প্রসব করে। যমজ দৈবাৎ জন্মে। এদের প্রজননকাল মার্চ থেকে জুন। নবজাতক প্রায় ০.৯ মিটার লম্বা হয়। ওজন হয় প্রায় ৯০ কেজি, দ্রুত বাড়ে।

হাতির শুঁড়ের রয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। এদের শুঁড় প্রায় দুই মিটার লম্বা হয়। ওজন হতে পারে ১৫০ কেজি পর্যন্ত। ওজন হলেও হাতি সাঁতার কাটতে পারে। গভীর পানিতে শ্বাস নেয়ার জন্য শুঁড় ব্যবহার করে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, হাতির শুঁড়ে প্রায় এক লাখ পেশি আছে, হাড় নেই। তাই হাতি শুঁড়কে অাঁকিয়ে-বাঁকিয়ে যেভাবে খুশি কাজ করতে পারে। শুঁড় দিয়েই সে পানাহার নিজের মুখে তুলে নেয়। শুঁড়-স্পর্শেই কোনো বস্তুর আকার-আকৃতি বা বৈচিত্র্য বুঝতে পারে।

হাতির খাবারে রয়েছে বৈচিত্র্য। এরা প্রচুর খায়। দিনে প্রায় ১৬৯ কেজির মতো খায়। এদের পানিও লাগে প্রচুর। প্রতিদিন প্রায় ৯৮.৮ লিটারের মতো পানি লাগে। তা খেতে সময় লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট। দিনের বড় একটা সময় হাতি খাবার সংগ্রহ করে। কখনও দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। এদের খাওয়া আবার ঋতু নিরপেক্ষ। যেমন বর্ষাকালে এদের মেন্যুতে থাকে নতুন ঘাস, গাছের পাতা, কলাগাছ, বাঁশ, ফলমূল ও গাছের ছাল ইত্যাদি।

হাতি দলবদ্ধ প্রাণী।

পাঁচ থেকে ২০টি পর্যন্ত একত্রে বাস করে। বিপদাপদে একজোট। সব সময় জোটবদ্ধ হয়ে থাকায় দুর্দিনে একে অন্যকে সাহায্য করে। হাতি পানিতে নামে, কাদায় গড়াগড়ি করে। পুরুষ হাতি ১৫ বছর বয়সে এবং স্ত্রী হাতি আরও আগে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। স্ত্রী হাতি সারা জীবন দলবদ্ধভাবে বসবাস করে। ওদিকে পুরুষ হাতি ১৩ বছর বয়সে দল ছেড়ে চলে যায় এবং বাকি জীবন একাই বসবাস করে।

হাতি খুব শান্ত স্বাভাবের প্রাণী। বেশ নিরীহও বটে। তাকে আঘাত না করলে সেও কাউকে আক্রমণ করে না। তবে খেপে গেলে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে। আক্রমণ করার সময় সে কখনও পিছিয়ে পড়ে না। এদের মধ্যে বনো হাতি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর। শুঁড় দিয়ে মানুষকে আছাড় দেয়। পদদলিত করে। গাছপালা উপড়ে ফেলে। বাড়িঘর ভেঙে ফেলে। তখন মানুষের ভয়ে পালানো বা অসহায়ের মতো চেয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এদের সঙ্গে শত্রুতা করলে নিষ্কৃতি পাওয়া মুশকিল।

হাতির স্মৃতিশক্তিও প্রখর। অনেক বছর আগের ঘটনাও এদের মনে থাকে। মানুষের মতো হাতিরও রয়েছে সংবেদনশীল মন। তাই দুঃখ পেলে এদের চোখে পানিও আসে। এদের বুদ্ধির কাছে কোনো বন্যপ্রাণী টেক্কা দিতে পারে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, আবহাওয়া-সম্পর্কিত জ্ঞানেও হাতির রয়েছে সমান দক্ষতা। প্রায় ১৫০ মাইল দূরে থাকা ঝড়ের খবর সবার আগে টের পায় হাতি। হাতি তার বড় বড় কানে খুব নিচু ফ্রিকোয়েন্সিও শুনতে পায়। ফলে ২৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরের ঝড়-বৃষ্টির উপস্থিতি টের পেয়ে থাকে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় হাতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য হাতিকে আমব্রেলা স্পিসিসও বলা হয়। একটি হাতি বনে ছাতার মতো কাজ করে। হাতি টিকে থাকলে বনও টিকে থাকবে। বন টিকে থাকার অর্থই হলো হাজারো জীববৈচিত্র্যের জীবন বেঁচে যাওয়া। এক হাতির মৃত্যুতে অন্যরা নির্বাক দাঁড়িয়ে শোকও পালন করে। এমনকি শুঁড় দিয়ে সেই মরা হাতিকে স্পর্শও করে। মাঝে মাঝে সঙ্গীর মৃতদেহ নিজেরাই বয়ে নিয়ে যায়।

হাতির দাঁত অমূল্য সম্পদ। সারা পৃথিবীতেই হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম বিখ্যাত। এ দাঁত আইভরি শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারত, চীন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আইভরি ব্যবসার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ বিলাস সামগ্রীর বেশ কদর ছিল মোগল শাসকদের কাছেও। তখন হাতির দাঁত দিয়ে সিংহাসন, পালকি, মূর্তি, অশ্বারোহীসৈন্য, জীবজন্তু, রাজদরবার, দাবার ঘুঁটি, খড়ম, ছুরি, কলমদানি, পিঠ চুলকানি ইত্যাদি শৌখিন সামগ্রী তৈরি হতো। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হাতির দাঁতের তৈরি শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ সংগ্রহ এখনও বিদ্যমান। এসবের মধ্যে মনোমুগ্ধকর একটি শিল্পকর্মের নাম এলোকেশী। এটি হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি পূর্ণাবয়ব এক নারীর মূর্তি।

হাতির দাঁত খুব দামি হওয়ায় শিকারীদের কবলে প্রতি বছর প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য হাতি। এক্ষেত্রে গর্ভবতী হাতিও বাদ যাচ্ছে না। ফলে পৃথিবীর বুক থেকে খুব দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে হাতি। এমনকি ‘হাতির দেশ’ থাইল্যান্ডেও হাতি দুর্লভ প্রাণীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, খাদ্য ও সংরক্ষণের অভাবে হাতি বিলুপ্তির পথে। তাই এ জন্তুটির প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।