ইলিয়াছকে সড়ক দুর্ঘটনা দমাতে পারেনি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সড়ক দুর্ঘটনা দমাতে পারেনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চাকলেশ্বর গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে ইলিয়াছ মিয়াকে (৩৫)। সড়ক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন একটি পা। কিন্তু পঙ্গু হয়ে থমকে যাননি তিনি। নিজের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে ঠিকই নিজের বাস্তবতার উপযোগী করে বানিয়ে নিয়েছেন এক ‘মোটরসাইকেল রিকশা’। সেটি চালিয়েই জীবনকে সচল রেখেছেন এই অদম্য যুবক।

গত রোববার বিকেলে মির্জাপুর বাইপাসে কথা হয় ইলিয়াছ মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে তিনি ছোটবেলায় মির্জাপুর পুরোনো বাসস্টেশনে একটি গ্যারেজে মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। বিয়ের পর সে কাজ ছেড়ে উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলের একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন। আরেকটু বাড়তি আয়ের ভাবনা থেকে শুরু করেন ফেরিওয়ালার কাজ। ৪ বছর আগে একটি বাসে ফেরি করে পানীয় বিক্রির কাজ করছিলেন তিনি। তখন টাঙ্গাইলের করটিয়ায় বাসটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে তিনি বাঁ পায়ে মারাত্মক আঘাত পান। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত ওই পা কেটে ফেলতে হয় ইলিয়াসকে। সেই থেকে পঙ্গুত্বের সঙ্গে এক নতুন জীবন। মির্জাপুর বাইপাস বাসস্টেশনে সরকারি জায়গায় মুদিদোকানের ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এতে তাঁর সংসার ভালো চললেও ব্যবসাটা বেশি দিন টিকেনি। বছরখানেক আগে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হলে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি সরিয়ে নিতে হয়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে বেকায়দায় পড়েন তিনি। বছরখানেক সময় বেকারত্বের দুর্বিষহ জীবন কাটিয়ে একসময় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ খোঁজেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় এক পায়ে তা–ও চালানো সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।

শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই নিজের সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করেন। একটি রিকশা কিনে তাঁর সামনে এক আত্মীয়ের দেওয়া পুরোনো মোটরসাইকেল জুড়ে নেন। স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপ থেকে মোটরসাইকেলটির পেছনের চাকা ফেলে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে রিকশার সঙ্গে লোহার দণ্ড দিয়ে ঝালাই করে মোটরসাইকেলটি যুক্ত করে নেন ইলিয়াস। নিজের উদ্ভাবিত নতুন যানটির নাম দেন মোটরসাইকেল রিকশা, যা দিয়ে তিনি গত রোববার বিকেল থেকে নতুনভাবে জীবন শুরু করেছেন।

ইলিয়াস মিয়া বলেন, ‘এক পা নাই। তাতে কী অইছে। আমার শরীরে অহনো কাজ করার ক্ষমতা আর মুনে সাহস আছে। আমি বুদ্ধি কইর‍্যা রিকশাডা বানাইছি। রিকশায় একসঙ্গে তিনজন বসতে পারব। হোন্ডার সিটের ওপর একজন আর রিকশার সিটে দুইজন। নিয়মিত রিকশা চালাইলে আমার না অইলেও ৫০০-৬০০ টাকা আয় অইব, যা অইব তা–ই দিয়া সংসার চালিয়া পারুম।’

এক প্রশ্নের জবাবে ইলিয়াস বলেন, তিনি প্রতিবন্ধী ভাতা পান না। ভাতা পেলে কিছুটা উপকার হতো।

চাকলেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুর রহমান মৃধা জানান, ইলিয়াসের অদম্যতা তাঁদের বুকে সাহস জুগিয়েছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম জানান, ইলিয়াস যাতে প্রতিবন্ধী ভাতা পান, সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর