পাপুলকান্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম পাপুল কুয়েতে কনস্যুলার সার্ভিস চাইলে দেবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতের কারাগারে বন্দি লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলের অপকর্মে ফেঁসে যাচ্ছেন সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, মানবপাচারে পাপুলের কর্মকান্ডে রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাপুলের মদদদাতা কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ ব্যবসায়ী থেকে ক‚টনৈতিক হন। তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে জুলাই মাসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, কুয়েতে পাপুল এমপি হিসেবে নয়, ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার হন। তারা কনস্যুলার সার্ভিস চাইলে অবশ্যই দেব। আর রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে যদি বুঝা যায়, কিছুটা সত্যতা আছে, তাহলে নিশ্চয়ই তদন্ত হবে।

লক্ষীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুলকে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে। পাপুলের হাতে পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে। সে দেশের বেশ কয়েকজন রাজনীতিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাকেও পাপুলকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে সে সময় দূতাবাস থেকে রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম আজাদ ঢাকায় চিঠি পাঠিয়ে জানান, পাপুলের বিষয়ে অভিযোগ সত্য নয়, কুয়েতির গণমাধ্যমে সঠিক তথ্য দেয়া হয়নি। পাপুলের সঙ্গে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সংশ্লিষ্টতার খবর প্রকাশ করতে গিয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে বিপদের মুখে পড়তে হয় বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে। ২০১৬ সালে ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালামকে চুক্তিতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছিল সরকার। চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি আবুল কালাম চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতিও ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পেপারে দেখছি। পেপারে অভিযোগও আসতেছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কালামের মেয়াদ চলতি মাসে (জুলাই) শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ মাসেই উনি চলে আসবেন। নতুন রাষ্ট্রদূত কে হবেন, সেটাও নির্ধারণ করেছি। যে কোনো দিন উনি (নতুন রাষ্ট্রদূত) যাবেন। পাপুলকে গ্রেফতারে একমাস পার হলেও এখনও কুয়েত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কিছু জানায়নি। গ্রেফতারের খবর শোনার পর রাষ্ট্রদূতকে বলেছি, এ ব্যাপারে সঠিক তথ্য নিয়ে আসেন। সরকারের ভার্সনটা নিয়ে আসেন। কী কারণে উনাকে (শহিদ পাপুল) গ্রেফতার করেছে। তারা কোনো চার্জও করেনি। ঢাকায় কুয়েতি অ্যাম্বাসেডরকে অ্যাপ্রোচ করলাম যে, আপনি তথ্যগুলো দেন। সপ্তাহখানেক হয়ে গেল উনিও কোনো তথ্য দেননি।

তিনি বলেন, পাপুল কোনো সরকারি পাসপোর্ট নিয়ে কুয়েত যাননি। উনি ওখানে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করেন। ওখানে কোম্পানির সিইও ও এমডি। তিনি বোধহয় ওখানকার লোকাল রেসিডেন্ট। সে হিসাবে ওখানে গিয়েছেন। বাংলাদেশের এমপি হিসাবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি, করেছে ব্যবসায়ী হিসাবে। অর্থ ও মানবপাচারের বিষয়ে শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর অবস্থান রয়েছে। এটা দুঃখজনক যে, ট্র্যাফিকিং বন্ধ করার জন্য কত চেষ্টা চালাচ্ছি। এর মধ্যে একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিদেশে অভিযোগটা এসেছে। উনি নাকি ট্র্যাফিকিং ও মানিলন্ডারিং করেছেন। এটা কুয়েতের পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর