ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুমিনের ভাবনায় বসন্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। শাখে শাখে পত্র-পল্লবে বইছে নতুনত্বের ঢেউ। মৃদুমন্দ দখিনা হাওয়ায় বর্ণবিরল প্রকৃতির অঙ্গে লেগেছে পুলকসঞ্চার। বনবীথিকার রিক্ত শাখে জেগেছে নতুন কুঁড়ির উল্লাস। থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে জুড়ে গেছে প্রকৃতির প্রতিটি কোণে; নীরবে, নিভৃতে। মেঠোপথ থেকে নিয়ে রাজপথ—সর্বত্র যেন ফাগুনের আগুনে জ্বলজ্বল করছে। কোকিলের কুহু কুহু তান খুশির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে মনমহুয়ায়। লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে একসঙ্গে বেজে উঠছে হাজারো পাখির আনন্দের সুর। পলাশ-শিমুলের শাখে শাখে ফাগুনের আগুন লেগে যেন দাউদাউ করছে। চন্দ্রমল্লিকা, মহুয়া, বকুল, সুরভি রঙ্গন, পুলক জুঁই, গন্ধরাজ, শ্বেত শিমুল, কুর্চি ফুলের গাছেও লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা ফুটে উঠেছে কবিগুরুর কবিতায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে/কত ফুল ফোটে/কত বাঁশি বাজে/কত পাখি গায়…।’

বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে শেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন আর চৈত্র বসন্তের পরিধি হলেও বৈশাখের শেষ পর্যন্ত থাকে এর ব্যাপ্তি। শহরে বসন্তের তেমন সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না। তাই তো কবি বলেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ তবে গ্রাম্য জীবনে বাস্তবিক পক্ষেই বসন্ত নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ আর নির্মল সুখের বার্তা। প্রকৃতির নবজাগরণ পত্র-পল্লবে জানান দিয়ে যায় হাওয়া বদলের কথা।

বসন্ত মানেই ফুলের সমাহার। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বসন্তের অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতি। হাদিসে ফুলের অনেক বর্ণনা এসেছে। এসেছে অনেক উপমাও। আবু মুসা আল আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হলো কমলালেবু, যা স্বাদে ও গন্ধে উত্তম। আর যে মুমিন কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হলো খেজুর, যার সুগন্ধ না থাকলেও স্বাদে মিষ্ট। আর যে মুনাফেক কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হলো রায়হানা ফুল, যার সুগন্ধি আছে এবং স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফেক কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হলো হান্যালাহ (মাকাল ফল), যার কোনো সুগন্ধি নেই এবং স্বাদও খুব তিক্ত। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৪৫)

বসন্তের ছোঁয়া পেয়ে জেগে ওঠে মৃতপ্রায় প্রকৃতি। এসবই হয় আল্লাহ তাআলার কুদরতি ইশারায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ দেখতে পান। এরপর আমি যখন এর ওপর পানি বর্ষণ করি তখন তা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদের সবুজ শ্যামল শোভামণ্ডিত জোড়া উত্পন্ন করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৫)

মহান আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করেছেন বসন্তের সব উপকরণ দিয়ে।

জান্নাতের বসন্ত নির্দিষ্ট কোনো মাসে নয়; বরং বছরের প্রতিটি দিনই বসন্ত থাকবে। যারা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মগ্ন না হয়ে আল্লাহর প্রেমে মগ্ন থাকে, শুধু তারাই আল্লাহর সেই চির বসন্তের স্বাদ উপভোগ করার তাওফিক লাভ করবে। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন সব বাগানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেগুলোর পাদদেশ দিয়ে নদ-নদী বয়ে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তিনি তাদের চিরস্থায়ী বাগানসমূহে পবিত্র গৃহেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মহান সফলতা।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)

চারদিকে আহ কী শোভা-সৌন্দর্য! অপরূপ সুন্দরের বাঁধন। স্নিগ্ধ ও নিখুঁত সৃষ্টি! এত সৌন্দর্য দেখে মনে পড়ে যায় পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে, আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি। মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে তাদের মাঝে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

বনে-বাদাড়ে আর কাননে কাননে মনের সুখে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি ও মৌমাছির ঝাঁক। মৃদু হাওয়ায় কাঁপে গাছের শাখা-প্রশাখা। টুপটাপ ঝরে পড়ে শিমুল ফুল। মুহূর্তে রক্তিম হয়ে ওঠে শিমুলতলা। মাতাল হাওয়ায় উদাসী বনে যায় মন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এল এ বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায়রে/চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।’

প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিটি মানুষ বর্ণিল সাজে সজ্জিত বসন্তকে বরণ করে নেয় হূদয়ের গভীর থেকে। প্রাণে প্রাণে বয়ে যাওয়া ফল্গুধারায় উচ্ছ্বসিত মন ও মননকে আরো প্রাণবন্ত ও বর্ণিল করে নেয়। অল্প সময়ের অবগাহনে মানবমনের কাগজে রঙিন তুলির পেলব স্পর্শে অনিন্দ্যসুন্দর ছবি এঁকে যায় ঋতুরাজ বসন্ত।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুমিনের ভাবনায় বসন্ত

আপডেট টাইম : ০৩:২৭:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২০

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতিতে লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। শাখে শাখে পত্র-পল্লবে বইছে নতুনত্বের ঢেউ। মৃদুমন্দ দখিনা হাওয়ায় বর্ণবিরল প্রকৃতির অঙ্গে লেগেছে পুলকসঞ্চার। বনবীথিকার রিক্ত শাখে জেগেছে নতুন কুঁড়ির উল্লাস। থোকায় থোকায় কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া জানান দিচ্ছে, বসন্ত এসে জুড়ে গেছে প্রকৃতির প্রতিটি কোণে; নীরবে, নিভৃতে। মেঠোপথ থেকে নিয়ে রাজপথ—সর্বত্র যেন ফাগুনের আগুনে জ্বলজ্বল করছে। কোকিলের কুহু কুহু তান খুশির বার্তা দিয়ে যাচ্ছে মনমহুয়ায়। লতাপাতার ফাঁকে ফাঁকে একসঙ্গে বেজে উঠছে হাজারো পাখির আনন্দের সুর। পলাশ-শিমুলের শাখে শাখে ফাগুনের আগুন লেগে যেন দাউদাউ করছে। চন্দ্রমল্লিকা, মহুয়া, বকুল, সুরভি রঙ্গন, পুলক জুঁই, গন্ধরাজ, শ্বেত শিমুল, কুর্চি ফুলের গাছেও লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা ফুটে উঠেছে কবিগুরুর কবিতায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে/কত ফুল ফোটে/কত বাঁশি বাজে/কত পাখি গায়…।’

বাংলার ছয় ঋতুর মধ্যে শেষ ঋতু বসন্ত। ফাল্গুন আর চৈত্র বসন্তের পরিধি হলেও বৈশাখের শেষ পর্যন্ত থাকে এর ব্যাপ্তি। শহরে বসন্তের তেমন সৌন্দর্য ফুটে ওঠে না। তাই তো কবি বলেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ তবে গ্রাম্য জীবনে বাস্তবিক পক্ষেই বসন্ত নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ আর নির্মল সুখের বার্তা। প্রকৃতির নবজাগরণ পত্র-পল্লবে জানান দিয়ে যায় হাওয়া বদলের কথা।

বসন্ত মানেই ফুলের সমাহার। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে বসন্তের অনিন্দ্যসুন্দর প্রকৃতি। হাদিসে ফুলের অনেক বর্ণনা এসেছে। এসেছে অনেক উপমাও। আবু মুসা আল আশআরি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে মুমিন কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হলো কমলালেবু, যা স্বাদে ও গন্ধে উত্তম। আর যে মুমিন কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হলো খেজুর, যার সুগন্ধ না থাকলেও স্বাদে মিষ্ট। আর যে মুনাফেক কোরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হলো রায়হানা ফুল, যার সুগন্ধি আছে এবং স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফেক কোরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হলো হান্যালাহ (মাকাল ফল), যার কোনো সুগন্ধি নেই এবং স্বাদও খুব তিক্ত। (মুসলিম, হাদিস : ১৭৪৫)

বসন্তের ছোঁয়া পেয়ে জেগে ওঠে মৃতপ্রায় প্রকৃতি। এসবই হয় আল্লাহ তাআলার কুদরতি ইশারায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ দেখতে পান। এরপর আমি যখন এর ওপর পানি বর্ষণ করি তখন তা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও ফুলে-ফেঁপে ওঠে এবং প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদের সবুজ শ্যামল শোভামণ্ডিত জোড়া উত্পন্ন করে।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৫)

মহান আল্লাহ জান্নাত সৃষ্টি করেছেন বসন্তের সব উপকরণ দিয়ে।

জান্নাতের বসন্ত নির্দিষ্ট কোনো মাসে নয়; বরং বছরের প্রতিটি দিনই বসন্ত থাকবে। যারা পৃথিবীর ভোগবিলাসে মগ্ন না হয়ে আল্লাহর প্রেমে মগ্ন থাকে, শুধু তারাই আল্লাহর সেই চির বসন্তের স্বাদ উপভোগ করার তাওফিক লাভ করবে। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন সব বাগানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেগুলোর পাদদেশ দিয়ে নদ-নদী বয়ে যাবে। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আর তিনি তাদের চিরস্থায়ী বাগানসমূহে পবিত্র গৃহেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে সবচেয়ে বড় হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। এটাই মহান সফলতা।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭২)

চারদিকে আহ কী শোভা-সৌন্দর্য! অপরূপ সুন্দরের বাঁধন। স্নিগ্ধ ও নিখুঁত সৃষ্টি! এত সৌন্দর্য দেখে মনে পড়ে যায় পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে, আমি সেগুলোকে তার শোভা করেছি। মানুষকে এ পরীক্ষা করার জন্য যে তাদের মাঝে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৭)

বনে-বাদাড়ে আর কাননে কাননে মনের সুখে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি ও মৌমাছির ঝাঁক। মৃদু হাওয়ায় কাঁপে গাছের শাখা-প্রশাখা। টুপটাপ ঝরে পড়ে শিমুল ফুল। মুহূর্তে রক্তিম হয়ে ওঠে শিমুলতলা। মাতাল হাওয়ায় উদাসী বনে যায় মন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘এল এ বনান্তে পাগল বসন্ত/বনে বনে মনে মনে রঙ সে ছড়ায়রে/চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।’

প্রকৃতিপ্রেমী প্রতিটি মানুষ বর্ণিল সাজে সজ্জিত বসন্তকে বরণ করে নেয় হূদয়ের গভীর থেকে। প্রাণে প্রাণে বয়ে যাওয়া ফল্গুধারায় উচ্ছ্বসিত মন ও মননকে আরো প্রাণবন্ত ও বর্ণিল করে নেয়। অল্প সময়ের অবগাহনে মানবমনের কাগজে রঙিন তুলির পেলব স্পর্শে অনিন্দ্যসুন্দর ছবি এঁকে যায় ঋতুরাজ বসন্ত।