ব্যাংকে ঋণ পুনঃতফসিলের হিড়িক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খেলাপি ঋণ কমাতে এবং প্রভাবশালী গ্রাহকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের তোড়জোড় শুরু হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ সুযোগ দেওয়ার কারণে ঋণ পুনঃতফসিলের পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) পুনঃতফসিল করে ৫ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৫ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে পুনঃতফসিল হয়েছে তিনগুণেরও বেশি খেলাপি ঋণ।

দ্বিতীয় প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেশি ৩ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পুনঃতফসিল করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এছাড়া খেলাপি ঋণে বিপর্যস্ত এবি ব্যাংক চতুর্থ সর্বোচ্চ ১ হাজার ২০৬ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে। আর সরকারি খাতের অগ্রণী ব্যাংক পুনঃতফসিল করেছে ৯০৭ কোটি টাকা। এছাড়া ওয়ান ব্যাংক ২৯৮ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ২৭৪ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ২২০ কোটি ও পদ্মা ব্যাংক মাত্র তিন মাসেই ২১৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে।

উলেস্নখ, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ১৬ মে ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা’ শিরোনামে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। ওই সার্কুলারে যে কোনো অঙ্কের ঋণখেলাপিদের ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে এক বছরের গ্রস পিরিয়ড দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়। ওই সময় বলা হয়েছিল, আগ্রহীদের সার্কুলার জারির ৯০ দিনের মধ্যে এ সুবিধা পেতে আবেদন করতে হবে। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট করায় এটি কার্যকরের ওপর প্রথমে স্থগিত করা হয়। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ৮ আগস্ট এক সার্কুলার দিয়ে বলা হয়, এ বিশেষ সুবিধা পেতে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন গ্রাহকরা। কিন্তু উচ্চ আদালতে আবার এ বিষয়ে রিট করায় ১৭ সেপ্টেম্বর আবেদনের সময়সীমা ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে প্রদত্ত আদেশ অনুযায়ী এ বিশেষ নীতিমালার আওতায় সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণগ্রহীতাদের অনুকূলে কোনো নতুন ঋণ সুবিধা প্রদান করা যাবে না।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অপরাধীদের সুবিধা না দিয়ে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে ঋণ বিতরণের সময় গুণগত মান যাচাই-বাছাই করার পরামর্শ এই অর্থনীতিবিদের। তিনি মনে করেন, আর্থিক খাতের রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা করা দরকার। একনাগাড়ে সুবিধা না দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর ভূমিকা পালেনের পরামর্শ দেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর