ঢাকা ০৭:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওহুদের প্রান্তরে মহিলা সাহাবি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০১৯
  • ২০১ বার

ওহুদের প্রসঙ্গ উঠলেই নবী করিম (সা.) বলতেন, ওহুদের
যুদ্ধে আমার ডানে-বামে আঘাতগুলো ঢাল দিয়ে তিনি প্রতিহত করলেন। তারপর তিনি তরবারির আঘাত করে শত্রু সৈন্যের ঘোড়ার পা কেটে ফেললেন। ঘোড়া মাটিতে পড়ে যাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে শত্রু সৈন্যও মাটিতে পড়ে গেল। হুজুরে আকরাম (সা.) এ দৃশ্য দেখে হজরত উম্মে আম্মারার দুই সন্তানকে তাদের মায়ের সাহায্যে প্রেরণ করলেন। তারা অগ্রসর
হয়ে শত্রুকে জাহান্নামে প্রেরণ করেছিলেন

ওহুদের প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে বেশ কয়েকজন নারীও ছিলেন। তারা সৈন্যদের পানি পান করাতেন এবং আহতদের সেবাযতœ করতেন। হজরত আয়েশা, হজরত আনাসের আম্মা উম্মে সুলাইম, হজরত উম্মে আম্মারা (রা.), আনহুন্না আজমাঈন প্রমুখ নারী মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। তারা মশকভর্তি করে পানি এনে সৈন্যদের পান করাতেন এবং পানি শেষ হয়ে গেলে পুনঃ মশক ভর্তি করে পানি নিয়ে আসতেন। আহত সৈন্যদের ক্ষতস্থানে তারা ব্যান্ডেজও বেঁধে দিতেন।
তবে ওহুদের যুদ্ধে যত নারীই অংশগ্রহণ করে থাকুন না কেন, হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) এর অভাবনীয় ভূমিকার কারণে তার নাম সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। তীরন্দাজ বাহিনীর আদেশ অবহেলার কারণে মুসলিম বাহিনী যখন হঠাৎ শত্রু বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিল, তখন হজরত উম্মে আম্মারা আহত সৈন্যদের সেবায় ব্যস্ত ছিলেন।
তিনি যখন শুনলেন শত্রু বাহিনী চিৎকার করে বলছে, ‘কোথায় মোহাম্মদ! তার সন্ধান করতে থাক, সে জীবিত থাকলে আমরা কেউ বিপদমুক্ত নই; তাই তাঁকে হত্যা করতেই হবে।’ এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হজরত উম্মে আম্মারা উঠে দাঁড়ালেন এবং দেখলেন আল্লাহর নবী যেখানে অবস্থান করছেন, শত্রু বাহিনী সেদিকেই ছুটি যাচ্ছে। তিনি একজন নারী, তবুও নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। পানির পাত্র সজোরে নিক্ষেপ করলেন। যৎসামান্য যে অস্ত্র হাতের কাছে পেলেন তা নিয়ে শত্রুর সামনে এসে উপস্থিত হলেন। একটি ঢাল জোগাড় করে তিনি শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে লাগলেন। শত্রুর আক্রমণ এতটা তীব্র ছিল যে, অনেক বিখ্যাত মুসলিম বীরও ময়দানে টিকে থাকতে পারেননি। অথচ এ ধরনের মারাত্মক ও নাজুক পরিস্থিতিতে হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) অতুলনীয় বিক্রমে শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছিলেন।
তিনি তীব্র বেগে ছুটে একবার ডানে এবং একবার বামে যাচ্ছিলেন, যেন শত্রু বাহিনীর কোনো সদস্য আল্লাহর নবীর কাছে যেতে না পারে। হজরত উম্মে আম্মারার দুটি সন্তানও ওহুদের প্রান্তরে যুদ্ধ করছিলেন। শত্রু বাহিনী যখন দেখল এ নারীর কারণে মোহাম্মদ (সা.) এর কাছে পৌঁছা যাচ্ছে না, তখন তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, এই নারীকে আগে হত্যা করে তারপর মোহাম্মদের কাছে অগ্রসর হতে হবে। তখন শত্রু বাহিনী হজরত উম্মে আম্মারাকেই আক্রমণ করল।
একজন সৈন্য তার দিকে অগ্রসর হয়ে তার ওপর তরবারির আঘাত করল। হজরত উম্মে বললেন, ওহে উম্মে আম্মারা! তুমি তোমার সন্তানের ওপর আঘাত করার কারণে উত্তম প্রতিশোধ গ্রহণ করেছ।’ মক্কার কোরাইশদের মধ্যে কামিয়ার সঙ্গেও হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) ভয়ঙ্কর মুহূর্তেও যুদ্ধ করছিলেন। ইবনে কামিয়া রাসুলকে হত্যা করার জন্য বারবার আক্রমণ করছিল। এই জালিমও রাসুল (সা.) এর পবিত্র দেহে আঘাত করেছিল। রাসুলের জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) একজন নারী হয়েও নিজের জীবন বিপন্ন করে ইবনে কামিয়াকে প্রতিরোধ করছিলেন।
আক্রমণকারী জালিমের দেহ ছিল লৌহ বর্মে আবৃত। হজরত উম্মে আম্মারা জালিমকে হত্যা করার জন্য তরবারি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু জালিমের দেহে বর্ম থাকার কারণে তার তরবারি ভেঙে গেল। জালিম এবার সুযোগ পেয়ে হজরত উম্মে আম্মারাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। হজরত উম্মে আম্মারা ঢাল দিয়ে সে আঘাত প্রতিহত করতে গিয়েও তার কাঁধে মারাত্মকভাবে আঘাত পেলেন। আহত দেহেই তিনি আল্লাহর দুশমনের সঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখলেন। তার মোকাবিলায় টিকতে না পেরে জালিম আবদুল্লাহ ইবনে কামিয়া পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নবী করিম (সা.) স্বয়ং এই মহিলার ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আজ উম্মে আম্মারা অনেকের চেয়ে অধিক বীরত্ব প্রদর্শন করেছে।’
ওহুদের প্রসঙ্গ উঠলেই নবী করিম (সা.) বলতেন, ওহুদের যুদ্ধে আমার ডানে-বামে আঘাতগুলো ঢাল দিয়ে তিনি প্রতিহত করলেন। তারপর তিনি তরবারির আঘাত করে শত্রু সৈন্যের ঘোড়ার পা কেটে ফেললেন। ঘোড়া মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত্রু সৈন্যও মাটিতে পড়ে গেল। হুজুরে আকরাম (সা.) এ দৃশ্য দেখে হজরত উম্মে আম্মারার দুই সন্তানকে তাদের মায়ের সাহায্যে প্রেরণ করলেন। তারা অগ্রসর হয়ে শত্রুকে জাহান্নামে প্রেরণ করেছিলেন।
এক পর্যায়ে তার সন্তান আহত হলে তিনি সন্তানের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে আদেশ দিলেন, ‘দ্রুত ময়দানে গিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো।’ নবী করিম (সা.) হজরত উম্মে আম্মারার সাহসিকতা এবং নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেই বারবার মহান আল্লাহর কাছে এ মহিলার জন্য দোয়া করেছিলেন। তিনি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকে শুনিয়ে হজরত উম্মে আম্মারার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তার মতো সাহস আর কার আছে।’
লড়াই চলতে থাকল, হজরত উম্মে আম্মারার কাছে এলো ওই ব্যক্তি, যে তার সন্তানকে আঘাত করেছিল। তিনি প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্যে শত্রুর দিকে অগ্রসর হলেন। বিশ্বনবী (সা.) তাকে সতর্ক করে বললেন, উম্মে আম্মারা ! সতর্ক হও! এই জালিম তোমার সন্তান আবদুল্লাহকে আহত করেছে।’
আল্লাহর নবীর কথা শুনে হজরত উম্মে আম্মারার শরীরে যেন সিংহীর শক্তি এসে জমা হলো। তিনি তরবারি দিয়ে পুত্রের ওপর আঘাতকারীর ওপর এমন শক্তিতে আঘাত হানলেন যে, তার আঘাতে শত্রু সৈন্য দ্বিখ-িত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। আল্লাহর নবী এই দৃশ্য দেখলেন। একজন মহিলার বীরত্ব দেখে আনন্দে হেসে উঠে বললেন, ‘যেদিকে তাকিয়েছি, সেদিকেই উম্মে আম্মারাকে যুদ্ধ করতে দেখেছি।’
যুদ্ধ শেষে দেখা গেল, হজরত উম্মে আম্মারার শরীরে ইসলামের শত্রুরা ১২টি স্থানে আঘাত করেছে। এত আঘাত লাগার পরও তিনি যুদ্ধ থেকে বিরত হননি। আল্লাহর রাসুলকে অক্ষত রাখার জন্য তিনি নিজের প্রাণের কোনো পরোয়া করেননি। এদের সম্পর্কেই অধ্যাপক হিট্টি কত সুন্দর কথা বলেছেন, ঞযব ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ফরংপরঢ়ষরহব ধহফ পড়হঃবসঢ়ঃ ড়ভ ফবধঃয সধহরভবংঃবফ ধঃ ঃযরং ভরৎংঃ ধৎসবফ ধহপড়ঁহঃবৎ ড়ভ ওংষধস ঢ়ৎড়াবফ পযধৎধপঃবৎরংঃরপ ড়ভ রঃ ধষষ ষধঃবৎ ধহফ মৎবধঃবৎ পড়হয়ঁবংঃং. (ঐরংঃৎু ড়ভ ঃযব অৎধনং, যরষষঢ় ক. ঐরঃঃর) অর্থাৎ, এই সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানরা যে নিয়মানুবর্তিতা ও মৃত্যুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, ফলে ইসলামের পরবর্তী ও মহত্ত্বের বিজয়ের বিশেষ লক্ষণগুলো পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
শেষ ক্ষণে এই দোয়া, আল্লাহ যেন আমাদের সব ঈমানি ভাই-বোনদের সঠিক পথের পথিক হওয়ার তৌফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ওহুদের প্রান্তরে মহিলা সাহাবি

আপডেট টাইম : ০৮:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০১৯

ওহুদের প্রসঙ্গ উঠলেই নবী করিম (সা.) বলতেন, ওহুদের
যুদ্ধে আমার ডানে-বামে আঘাতগুলো ঢাল দিয়ে তিনি প্রতিহত করলেন। তারপর তিনি তরবারির আঘাত করে শত্রু সৈন্যের ঘোড়ার পা কেটে ফেললেন। ঘোড়া মাটিতে পড়ে যাওয়ার
সঙ্গে সঙ্গে শত্রু সৈন্যও মাটিতে পড়ে গেল। হুজুরে আকরাম (সা.) এ দৃশ্য দেখে হজরত উম্মে আম্মারার দুই সন্তানকে তাদের মায়ের সাহায্যে প্রেরণ করলেন। তারা অগ্রসর
হয়ে শত্রুকে জাহান্নামে প্রেরণ করেছিলেন

ওহুদের প্রান্তরে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে বেশ কয়েকজন নারীও ছিলেন। তারা সৈন্যদের পানি পান করাতেন এবং আহতদের সেবাযতœ করতেন। হজরত আয়েশা, হজরত আনাসের আম্মা উম্মে সুলাইম, হজরত উম্মে আম্মারা (রা.), আনহুন্না আজমাঈন প্রমুখ নারী মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। তারা মশকভর্তি করে পানি এনে সৈন্যদের পান করাতেন এবং পানি শেষ হয়ে গেলে পুনঃ মশক ভর্তি করে পানি নিয়ে আসতেন। আহত সৈন্যদের ক্ষতস্থানে তারা ব্যান্ডেজও বেঁধে দিতেন।
তবে ওহুদের যুদ্ধে যত নারীই অংশগ্রহণ করে থাকুন না কেন, হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) এর অভাবনীয় ভূমিকার কারণে তার নাম সবচেয়ে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে। তীরন্দাজ বাহিনীর আদেশ অবহেলার কারণে মুসলিম বাহিনী যখন হঠাৎ শত্রু বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিল, তখন হজরত উম্মে আম্মারা আহত সৈন্যদের সেবায় ব্যস্ত ছিলেন।
তিনি যখন শুনলেন শত্রু বাহিনী চিৎকার করে বলছে, ‘কোথায় মোহাম্মদ! তার সন্ধান করতে থাক, সে জীবিত থাকলে আমরা কেউ বিপদমুক্ত নই; তাই তাঁকে হত্যা করতেই হবে।’ এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত হজরত উম্মে আম্মারা উঠে দাঁড়ালেন এবং দেখলেন আল্লাহর নবী যেখানে অবস্থান করছেন, শত্রু বাহিনী সেদিকেই ছুটি যাচ্ছে। তিনি একজন নারী, তবুও নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। পানির পাত্র সজোরে নিক্ষেপ করলেন। যৎসামান্য যে অস্ত্র হাতের কাছে পেলেন তা নিয়ে শত্রুর সামনে এসে উপস্থিত হলেন। একটি ঢাল জোগাড় করে তিনি শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে লাগলেন। শত্রুর আক্রমণ এতটা তীব্র ছিল যে, অনেক বিখ্যাত মুসলিম বীরও ময়দানে টিকে থাকতে পারেননি। অথচ এ ধরনের মারাত্মক ও নাজুক পরিস্থিতিতে হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) অতুলনীয় বিক্রমে শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছিলেন।
তিনি তীব্র বেগে ছুটে একবার ডানে এবং একবার বামে যাচ্ছিলেন, যেন শত্রু বাহিনীর কোনো সদস্য আল্লাহর নবীর কাছে যেতে না পারে। হজরত উম্মে আম্মারার দুটি সন্তানও ওহুদের প্রান্তরে যুদ্ধ করছিলেন। শত্রু বাহিনী যখন দেখল এ নারীর কারণে মোহাম্মদ (সা.) এর কাছে পৌঁছা যাচ্ছে না, তখন তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, এই নারীকে আগে হত্যা করে তারপর মোহাম্মদের কাছে অগ্রসর হতে হবে। তখন শত্রু বাহিনী হজরত উম্মে আম্মারাকেই আক্রমণ করল।
একজন সৈন্য তার দিকে অগ্রসর হয়ে তার ওপর তরবারির আঘাত করল। হজরত উম্মে বললেন, ওহে উম্মে আম্মারা! তুমি তোমার সন্তানের ওপর আঘাত করার কারণে উত্তম প্রতিশোধ গ্রহণ করেছ।’ মক্কার কোরাইশদের মধ্যে কামিয়ার সঙ্গেও হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) ভয়ঙ্কর মুহূর্তেও যুদ্ধ করছিলেন। ইবনে কামিয়া রাসুলকে হত্যা করার জন্য বারবার আক্রমণ করছিল। এই জালিমও রাসুল (সা.) এর পবিত্র দেহে আঘাত করেছিল। রাসুলের জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে হজরত উম্মে আম্মারা (রা.) একজন নারী হয়েও নিজের জীবন বিপন্ন করে ইবনে কামিয়াকে প্রতিরোধ করছিলেন।
আক্রমণকারী জালিমের দেহ ছিল লৌহ বর্মে আবৃত। হজরত উম্মে আম্মারা জালিমকে হত্যা করার জন্য তরবারি দিয়ে আঘাত করেন। কিন্তু জালিমের দেহে বর্ম থাকার কারণে তার তরবারি ভেঙে গেল। জালিম এবার সুযোগ পেয়ে হজরত উম্মে আম্মারাকে আঘাত করতে উদ্যত হয়। হজরত উম্মে আম্মারা ঢাল দিয়ে সে আঘাত প্রতিহত করতে গিয়েও তার কাঁধে মারাত্মকভাবে আঘাত পেলেন। আহত দেহেই তিনি আল্লাহর দুশমনের সঙ্গে লড়াই অব্যাহত রাখলেন। তার মোকাবিলায় টিকতে না পেরে জালিম আবদুল্লাহ ইবনে কামিয়া পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। নবী করিম (সা.) স্বয়ং এই মহিলার ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর শপথ! আজ উম্মে আম্মারা অনেকের চেয়ে অধিক বীরত্ব প্রদর্শন করেছে।’
ওহুদের প্রসঙ্গ উঠলেই নবী করিম (সা.) বলতেন, ওহুদের যুদ্ধে আমার ডানে-বামে আঘাতগুলো ঢাল দিয়ে তিনি প্রতিহত করলেন। তারপর তিনি তরবারির আঘাত করে শত্রু সৈন্যের ঘোড়ার পা কেটে ফেললেন। ঘোড়া মাটিতে পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত্রু সৈন্যও মাটিতে পড়ে গেল। হুজুরে আকরাম (সা.) এ দৃশ্য দেখে হজরত উম্মে আম্মারার দুই সন্তানকে তাদের মায়ের সাহায্যে প্রেরণ করলেন। তারা অগ্রসর হয়ে শত্রুকে জাহান্নামে প্রেরণ করেছিলেন।
এক পর্যায়ে তার সন্তান আহত হলে তিনি সন্তানের ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে আদেশ দিলেন, ‘দ্রুত ময়দানে গিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ো।’ নবী করিম (সা.) হজরত উম্মে আম্মারার সাহসিকতা এবং নিষ্ঠায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। যুদ্ধের ময়দানেই বারবার মহান আল্লাহর কাছে এ মহিলার জন্য দোয়া করেছিলেন। তিনি অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামকে শুনিয়ে হজরত উম্মে আম্মারার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তার মতো সাহস আর কার আছে।’
লড়াই চলতে থাকল, হজরত উম্মে আম্মারার কাছে এলো ওই ব্যক্তি, যে তার সন্তানকে আঘাত করেছিল। তিনি প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্যে শত্রুর দিকে অগ্রসর হলেন। বিশ্বনবী (সা.) তাকে সতর্ক করে বললেন, উম্মে আম্মারা ! সতর্ক হও! এই জালিম তোমার সন্তান আবদুল্লাহকে আহত করেছে।’
আল্লাহর নবীর কথা শুনে হজরত উম্মে আম্মারার শরীরে যেন সিংহীর শক্তি এসে জমা হলো। তিনি তরবারি দিয়ে পুত্রের ওপর আঘাতকারীর ওপর এমন শক্তিতে আঘাত হানলেন যে, তার আঘাতে শত্রু সৈন্য দ্বিখ-িত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। আল্লাহর নবী এই দৃশ্য দেখলেন। একজন মহিলার বীরত্ব দেখে আনন্দে হেসে উঠে বললেন, ‘যেদিকে তাকিয়েছি, সেদিকেই উম্মে আম্মারাকে যুদ্ধ করতে দেখেছি।’
যুদ্ধ শেষে দেখা গেল, হজরত উম্মে আম্মারার শরীরে ইসলামের শত্রুরা ১২টি স্থানে আঘাত করেছে। এত আঘাত লাগার পরও তিনি যুদ্ধ থেকে বিরত হননি। আল্লাহর রাসুলকে অক্ষত রাখার জন্য তিনি নিজের প্রাণের কোনো পরোয়া করেননি। এদের সম্পর্কেই অধ্যাপক হিট্টি কত সুন্দর কথা বলেছেন, ঞযব ংঢ়রৎরঃ ড়ভ ফরংপরঢ়ষরহব ধহফ পড়হঃবসঢ়ঃ ড়ভ ফবধঃয সধহরভবংঃবফ ধঃ ঃযরং ভরৎংঃ ধৎসবফ ধহপড়ঁহঃবৎ ড়ভ ওংষধস ঢ়ৎড়াবফ পযধৎধপঃবৎরংঃরপ ড়ভ রঃ ধষষ ষধঃবৎ ধহফ মৎবধঃবৎ পড়হয়ঁবংঃং. (ঐরংঃৎু ড়ভ ঃযব অৎধনং, যরষষঢ় ক. ঐরঃঃর) অর্থাৎ, এই সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানরা যে নিয়মানুবর্তিতা ও মৃত্যুর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, ফলে ইসলামের পরবর্তী ও মহত্ত্বের বিজয়ের বিশেষ লক্ষণগুলো পরিস্ফুটিত হয়ে উঠেছে।
শেষ ক্ষণে এই দোয়া, আল্লাহ যেন আমাদের সব ঈমানি ভাই-বোনদের সঠিক পথের পথিক হওয়ার তৌফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমিন।