ঢাকা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ বছরেও জমির মালিক হতে পারেনি বিয়াম স্কুল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:২৭:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯
  • ২২৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্থানীয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র ইংলিশ ভার্সনের স্কুলটির (বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল) ক্যাম্পাসের জমি ১০ বছরেও নিজের নামে পায়নি। দেড় বছর আগে একবার স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবহৃত ভূমিকে স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠালেও ওই ফাইলের পরবর্তীতে আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আরেকবার ব্যবহৃত ওই ভূমিকে স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার জন্য জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখায় ভূমি অফিস থেকে পাঠানো হলেও এবারও এই ফাইল নড়ছে না। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিভাবকরা স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট শহরের ষোলঘরে সুরমা নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অব্যবহৃত ভূমি ও গৃহে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. সাবের হোসেন এই বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ইংরেজিতে জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমদ ভুইয়া স্কুল ভবন উদ্বোধন করেন। ২০০৯ ইংরেজির ১৭ জানুয়ারি বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ সাদিক একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্নেই স্থানীয় ধনাঢ্য ও শিক্ষানুরাগীরা নানাভাবে আর্থিক সহায়তাও করেন। সহায়তা প্রদানকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অব. অতিরিক্ত সচিব সাকির উদ্দিন আহমদ এক লাখ টাকা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মো. মোবারক আলী এক লাখ টাকা মো. নুরুল হক ৫০ হাজার টাকা, মো. গিয়াস উদ্দিন দুই লাখ টাকা, মো. মইনুল হক ২০ হাজার ৫০০ টাকা, অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও কবীরুজ্জামান ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। ৯৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৯ সালে ইংলিশ ভার্সনের এই স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ১৯০ জন।

শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেবার জন্য। বিদ্যালয়ের এক সময়ের অভিভাবক বিশ্ব দত্ত জানালেন, ‘স্কুলটিতে শিক্ষকের সংকট, বিশেষ করে যোগ্য শিক্ষকের সংকট ছিল শুরু থেকেই। এছাড়া শুরু থেকেই সবাই ভোগছিলেন অনিশ্চয়তায়। নবম ও দশম শ্রেণি খোলা হবে কী-না। স্কুলটি টিকবে কী-না, এই নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকরা।’ স্কুলের একজন শিক্ষক নাম না ছাপানোর অনুরোধ করে বলেন,‘শিক্ষকদের আন্তরিকতা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হলে বিদ্যালয়ের ফলাফল বিবেচনায় আনতে হবে। বিদ্যালয়ের ফলাফল প্রথম থেকেই ভালো হয়েছে। মূলত. উপরের ক্লাসগুলো না খোলায় সকল অভিভাবকের মধ্যে অনিশ্চয়তা ছিল, উপরের ক্লাসে ওঠার পর তাঁদের সন্তানদের কোথায় নিয়ে যাবেন। এই উৎকণ্ঠায় গত ৯ বছরে ১৫১ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকরা এখানে ৩-৪ বছর পড়াশুনা করানোর পর অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন।’
বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক আছেন প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষকরা দাবি করলেন, শিক্ষকদের যোগ্যতার মানদ- বিবেচিত হয় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে। শুরু থেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো করছে।

তারা জানালেন, ‘২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন, এরমধ্যে ৩ জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পায়, সাধারণ বৃত্তি পায় ৩ জন, ৪ শিক্ষার্থী এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে।’ ২০১৭ সালে ৬ জন পিএসসি পরীক্ষার্থী’র ২ জন জিপিএ-৫ পায়, ৩ জন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৬ সালে ৮ জন পিএসসি পরীক্ষার্থী সকলেই জিপিএ-৫ পায় এবং সকলেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পায়। ২০১৫ সালে ৭ জন পরীক্ষার্থীর ২ জন জিপিএ-৫ পায় এবং ২ জন এ গ্রেডে উন্নীত হয় অন্যরা বি গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়।

২০১৪ সালে ৯ জন পিএসসি পরীক্ষার্থীর ৩ জন জিপিএ-৫ পায়, এর মধ্যে একজন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়, ৪ জন এ গ্রেড এবং ২ জন অন্য গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৩ সালে ৮ জন পরীক্ষার্থী’র ৭ জন জিপিএ-৫ পায়, এরমধ্যে ২ জন ট্যালেন্টপুলে এবং একজন সাধারণ বৃত্তি পায় এবং একজন অন্য গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। শিক্ষকরা জানালেন, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি না খোলায় উৎকন্ঠিত অভিভাবকরা নীচের ক্লাস থেকেই শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন শুরু থেকেই। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে অনাগ্রহ সকল অভিভাবকেরই।

এরপরও ২০১৭ সালে ৩ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ জন জিপিএ-৫ পায়, একজন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৬ সালে ২ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুজনেই জিপিএ-৫ পায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক সানজিদা খানম বলেন, ‘জেলায় একমাত্র ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করেছেন ৬ জন জেলা প্রশাসক। অথচ. এই স্কুলের ব্যবহৃত জমি এখনো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এরজন্য দায় কার?’ আরেক অভিভাবক সরস্বতী পুরকায়স্থ বলেন, ‘নয় বছর পর এই বছর স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কুলের নামে জেএসসি পরীক্ষা দেবে।

অর্থাৎ নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। এর আগে অন্য স্কুলের নামে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অথচ. এই বিদ্যালয়ে অনেক বিশিষ্টজনের সন্তানরাই পড়াশুনা করছে। আরও আগে নিমাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি হওয়া উচিৎ ছিল। একই সঙ্গে হওয়া অন্য স্কুলগুলো আরও আগেই এমন অনুমোদন পেয়েছে। শুনেছি সুনামগঞ্জের কৃতী মানুষ সাবেক শিক্ষা সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান সাদিক স্যার গত মাসে নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন। আমরা মনে করি স্কুলটিকে এগিয়ে নিতে হলে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।’

বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের জমি বন্দোবস্ত কেন হচ্ছে না? এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেড় বছর আগে স্কুলের ব্যবহৃত ৬০ শতাংশ জমি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলেও পরবর্তীতে এই ফাইল গায়েব হয়ে যায়, এই ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
গত ২০ এপ্রিল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা স্কুলের অভিভাবক সভায় জানিয়েছেন, বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের বর্তমান ব্যবহৃত ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে কিছু বাধা থাকলেও প্রস্তাব জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’

বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের অধ্যক্ষ ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে চেষ্টা করছি ইংলিশ ভার্সনের এই স্কুলটি যাতে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। ফলাফল ভালো করার চেষ্টা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখানে অভিভাবকদের ইংরেজি পড়ানোর ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। পাশাপাশি যারা পড়াতে চান, তারাও কিছু অনিশ্চয়তায় ভোগেছেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো উপরের ক্লাসগুলো না থাকায় অনেকে ভাবেন, নিচের ক্লাসে পড়িয়ে উপরের ক্লাসে বাচ্চারা উঠলে কোথায় পড়াবেন।’ তিনি জানালেন, সম্প্রতি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের সহায়তায় নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন আমরা উপরের ক্লাসগুলো চালু’র চেষ্টা করবো। উপরের ক্লাস চালু করতে হলে শ্রেণি কক্ষের জন্য ভবন লাগবে। ভবন করতে জমি স্কুলের নামে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নতুন আরও শিক্ষকেরও প্রয়োজন পড়বে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সফিউল আলমের প্রমোশন হয়েছে, তিনি এখান থেকে চলে যেতে চাচ্ছেন, পুরোনো ফাইলগুলো দেখে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। আমি দ্রুতই এই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

১০ বছরেও জমির মালিক হতে পারেনি বিয়াম স্কুল

আপডেট টাইম : ০৫:২৭:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্থানীয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হওয়া সুনামগঞ্জ জেলার একমাত্র ইংলিশ ভার্সনের স্কুলটির (বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুল) ক্যাম্পাসের জমি ১০ বছরেও নিজের নামে পায়নি। দেড় বছর আগে একবার স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবহৃত ভূমিকে স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠালেও ওই ফাইলের পরবর্তীতে আর কোন হদিস পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি আরেকবার ব্যবহৃত ওই ভূমিকে স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার জন্য জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখায় ভূমি অফিস থেকে পাঠানো হলেও এবারও এই ফাইল নড়ছে না। এ কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিভাবকরা স্কুলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট শহরের ষোলঘরে সুরমা নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অব্যবহৃত ভূমি ও গৃহে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. সাবের হোসেন এই বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২৫ ডিসেম্বর ২০০৮ ইংরেজিতে জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমদ ভুইয়া স্কুল ভবন উদ্বোধন করেন। ২০০৯ ইংরেজির ১৭ জানুয়ারি বিয়াম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ সাদিক একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

প্রতিষ্ঠানটির সূচনা লগ্নেই স্থানীয় ধনাঢ্য ও শিক্ষানুরাগীরা নানাভাবে আর্থিক সহায়তাও করেন। সহায়তা প্রদানকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অব. অতিরিক্ত সচিব সাকির উদ্দিন আহমদ এক লাখ টাকা, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে মো. মোবারক আলী এক লাখ টাকা মো. নুরুল হক ৫০ হাজার টাকা, মো. গিয়াস উদ্দিন দুই লাখ টাকা, মো. মইনুল হক ২০ হাজার ৫০০ টাকা, অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা ও কবীরুজ্জামান ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেন। ৯৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০০৯ সালে ইংলিশ ভার্সনের এই স্কুলটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে এই স্কুলের ছাত্রসংখ্যা ১৯০ জন।

শুরু থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন না প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নেবার জন্য। বিদ্যালয়ের এক সময়ের অভিভাবক বিশ্ব দত্ত জানালেন, ‘স্কুলটিতে শিক্ষকের সংকট, বিশেষ করে যোগ্য শিক্ষকের সংকট ছিল শুরু থেকেই। এছাড়া শুরু থেকেই সবাই ভোগছিলেন অনিশ্চয়তায়। নবম ও দশম শ্রেণি খোলা হবে কী-না। স্কুলটি টিকবে কী-না, এই নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকরা।’ স্কুলের একজন শিক্ষক নাম না ছাপানোর অনুরোধ করে বলেন,‘শিক্ষকদের আন্তরিকতা বা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে হলে বিদ্যালয়ের ফলাফল বিবেচনায় আনতে হবে। বিদ্যালয়ের ফলাফল প্রথম থেকেই ভালো হয়েছে। মূলত. উপরের ক্লাসগুলো না খোলায় সকল অভিভাবকের মধ্যে অনিশ্চয়তা ছিল, উপরের ক্লাসে ওঠার পর তাঁদের সন্তানদের কোথায় নিয়ে যাবেন। এই উৎকণ্ঠায় গত ৯ বছরে ১৫১ জন শিক্ষার্থীকে অভিভাবকরা এখানে ৩-৪ বছর পড়াশুনা করানোর পর অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে গেছেন।’
বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষক আছেন প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষকরা দাবি করলেন, শিক্ষকদের যোগ্যতার মানদ- বিবেচিত হয় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে। শুরু থেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষায় ভালো করছে।

তারা জানালেন, ‘২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন, এরমধ্যে ৩ জন ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পায়, সাধারণ বৃত্তি পায় ৩ জন, ৪ শিক্ষার্থী এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে।’ ২০১৭ সালে ৬ জন পিএসসি পরীক্ষার্থী’র ২ জন জিপিএ-৫ পায়, ৩ জন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৬ সালে ৮ জন পিএসসি পরীক্ষার্থী সকলেই জিপিএ-৫ পায় এবং সকলেই ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পায়। ২০১৫ সালে ৭ জন পরীক্ষার্থীর ২ জন জিপিএ-৫ পায় এবং ২ জন এ গ্রেডে উন্নীত হয় অন্যরা বি গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়।

২০১৪ সালে ৯ জন পিএসসি পরীক্ষার্থীর ৩ জন জিপিএ-৫ পায়, এর মধ্যে একজন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়, ৪ জন এ গ্রেড এবং ২ জন অন্য গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৩ সালে ৮ জন পরীক্ষার্থী’র ৭ জন জিপিএ-৫ পায়, এরমধ্যে ২ জন ট্যালেন্টপুলে এবং একজন সাধারণ বৃত্তি পায় এবং একজন অন্য গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। শিক্ষকরা জানালেন, ৯ম ও ১০ম শ্রেণি না খোলায় উৎকন্ঠিত অভিভাবকরা নীচের ক্লাস থেকেই শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিলেন শুরু থেকেই। এছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার পর এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে অনাগ্রহ সকল অভিভাবকেরই।

এরপরও ২০১৭ সালে ৩ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ জন জিপিএ-৫ পায়, একজন এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়। ২০১৬ সালে ২ জন শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে দুজনেই জিপিএ-৫ পায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিভাবক সানজিদা খানম বলেন, ‘জেলায় একমাত্র ইংলিশ ভার্সনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা জেলা প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় হয়েছে। ২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করেছেন ৬ জন জেলা প্রশাসক। অথচ. এই স্কুলের ব্যবহৃত জমি এখনো সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। এরজন্য দায় কার?’ আরেক অভিভাবক সরস্বতী পুরকায়স্থ বলেন, ‘নয় বছর পর এই বছর স্কুলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের স্কুলের নামে জেএসসি পরীক্ষা দেবে।

অর্থাৎ নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে। এর আগে অন্য স্কুলের নামে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। অথচ. এই বিদ্যালয়ে অনেক বিশিষ্টজনের সন্তানরাই পড়াশুনা করছে। আরও আগে নিমাধ্যমিক পাঠদানের অনুমতি হওয়া উচিৎ ছিল। একই সঙ্গে হওয়া অন্য স্কুলগুলো আরও আগেই এমন অনুমোদন পেয়েছে। শুনেছি সুনামগঞ্জের কৃতী মানুষ সাবেক শিক্ষা সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান সাদিক স্যার গত মাসে নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন। আমরা মনে করি স্কুলটিকে এগিয়ে নিতে হলে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।’

বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের জমি বন্দোবস্ত কেন হচ্ছে না? এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেড় বছর আগে স্কুলের ব্যবহৃত ৬০ শতাংশ জমি বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের নামে বন্দোবস্ত দেবার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রস্তাব পাঠানো হলেও পরবর্তীতে এই ফাইল গায়েব হয়ে যায়, এই ফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
গত ২০ এপ্রিল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন নাহার রুমা স্কুলের অভিভাবক সভায় জানিয়েছেন, বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের বর্তমান ব্যবহৃত ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানে কিছু বাধা থাকলেও প্রস্তাব জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’

বিয়াম ল্যাবরেটরী স্কুলের অধ্যক্ষ ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে চেষ্টা করছি ইংলিশ ভার্সনের এই স্কুলটি যাতে ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠা পায়। ফলাফল ভালো করার চেষ্টা করার পাশাপাশি শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখানে অভিভাবকদের ইংরেজি পড়ানোর ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। পাশাপাশি যারা পড়াতে চান, তারাও কিছু অনিশ্চয়তায় ভোগেছেন। এরমধ্যে অন্যতম হলো উপরের ক্লাসগুলো না থাকায় অনেকে ভাবেন, নিচের ক্লাসে পড়িয়ে উপরের ক্লাসে বাচ্চারা উঠলে কোথায় পড়াবেন।’ তিনি জানালেন, সম্প্রতি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক স্যারের সহায়তায় নিমাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি পাওয়া গেছে। এখন আমরা উপরের ক্লাসগুলো চালু’র চেষ্টা করবো। উপরের ক্লাস চালু করতে হলে শ্রেণি কক্ষের জন্য ভবন লাগবে। ভবন করতে জমি স্কুলের নামে বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। নতুন আরও শিক্ষকেরও প্রয়োজন পড়বে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সফিউল আলমের প্রমোশন হয়েছে, তিনি এখান থেকে চলে যেতে চাচ্ছেন, পুরোনো ফাইলগুলো দেখে যাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। আমি দ্রুতই এই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’