রাজধানীবাসীর জন্য একটি বিরাট প্রাপ্তি ছিল হাতিরঝিল। চালু হওয়ার সাথে সাথেই এটা পরিণত হয়েছিল নগরবাসীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্রে। আধুনিকতার হাত ধরে আবহমান বাংলা যেন নেমে এসেছিল ঢাকায়। বিশাল পানিরাশি, সেতু, উদ্যান, আলোর খেলা- সব মিলিয়ে ঝিলটি ঢাকাবাসীকে কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যাবে।
কিন্তু অবহেলা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনাহীনতায় একটি স্বপ্ন যেন অল্প দিনের মধ্যেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে।
ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন এলাকার পচা আবর্জনা ঝিলের মধ্যে প্রবেশ করে নষ্ট করছে পানির স্বচ্ছতা। এ পানি অনেক দিন ঝিলে আটকে থাকায় ক্রমেই পানির রং কালো ও সবুজ হয়ে পড়ছে। উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ঝিল পাড় ও আশপাশের এলাকায়। দুর্গন্ধে তাদের টেকা দায়। তবুও যারা এখানে বেড়াতে আসছেন তারাও দুর্গন্ধের কারণে বেশি সময় থাকতে পারছেন না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাতির ঝিলের চারদিকে শুধু ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়ি। পানির ময়লা পরিষ্কারের জন্য আধুনিক যন্ত্র বসানো হলেও তা চালু নেই। বরং এর পাশেই আগে ওঠানো আবর্জনা জড়ো করে রাখা হয়েছে। কয়েকজন কারিগরকে মধুবাগ মোড়ের যন্ত্রটি মেরামতের কাজ করতে দেখা যায়। তারা জানান, ময়লা আবর্জনা বেশি হওয়ায় আটকে গেছে। এসব আবর্জনা পরিষ্কার না করলে যন্ত্রটি চলবে না। এছাড়া ঝিলের কিনারা ঘেষেও অনেক স্থানে আবর্জনার স্তুপ রয়েছে। ঝিলের রাস্তার পাশে যেসব প্লাস্টিকের ডাস্টবিন রাখা হয়েছে তাতে ময়লা জমে ভর্তি হলেও পরিষ্কার করা হয়নি। অনেক স্থানে মানুষের মল পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
তবে হাতিরঝিলের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এর ভিতরে থাকা পানি। প্রায় দুই ফুটের মতো নেমে গেছে পানির স্তর। কোথাও কালো আবার কোথাও সবুজ রং ধারণ করেছে পানি। ময়লা ভেসে বেড়াচ্ছে। কিছু ময়লা সম্প্রতি ঝিল থেকে তুলে কিনারা ঘেষে রাখা হয়েছে। স্যাঁতসেঁতে এ ময়লার স্তর থেকেও গন্ধ ছড়াচ্ছে।
স্থানীয় অধিবাসী ও বেসরকারি একটি কোম্পানির ম্যানেজার হানিফ আহমেদ জানান, আশপাশের এলাকার পানি ড্রেন দিয়ে ঝিলের পানিতে প্রবেশ করে। বৃষ্টি হলে পানি বেড়ে যায়। এ পানির সাথে ময়লা আবর্জনা চলে আসে। সেগুলো পচে এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, হাজারিবাগের ট্যানারির যে দুর্গন্ধ সে রকম দুর্গন্ধ হাতিরঝিলেও। মনে হয় কোরবানির পশুর রক্ত ড্রেন দিয়ে হাতির ঝিলে এসে পড়েছে।
স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম জানান, মাস দেড়েক ধরে পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মাঝেমাঝে ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করতে দেখি। কিন্তু দুর্গন্ধ যায় না। এ কারণে মানুষ আসা কমে গেছে। কেউ এলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারেন না।
হাতিরঝিলের বায়তুল মাহফুজ মসজিদের মুয়াজ্জিন হাফেজ নুরুল ইসলাম বলেন, ঝিল রক্ষণাবেক্ষণকারীরা গতকালও ময়লা পরিষ্কার করে কিনারে রেখেছে। আবার ব্লিচিং পাউডার দিয়ে থাকে। দুর্গন্ধর কারণে মুসল্লিদের সমস্যা হয়ে বলে তিনি জানান।
ঝিলে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা শহিদুর রহমান নামে এক দর্শনার্থী জানান, বন্ধের সময় একটু বিনোদনের জন্য পরিবার নিয়ে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ টেকা যাবে না মনে হচ্ছে। এত দুর্গন্ধ বাচ্চারা অস্বস্তি প্রকাশ করছে। দেখি অন্য কোথাও চলে যেতে হবে মনে হচ্ছে।
আমিনুর রহমান নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, অনেক দিন ধরেই এ রকম দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এটি দেখার মনে হয় কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ হাতিরঝিলে আসা বন্ধ করে দেবে।