ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পশু-পাখি প্রজাতির মাছ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:০১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৪৮ বার

জীব বৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির প্রাণী। অস্তিত্ব সঙ্কট ও হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রাণীসম্পদ। গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। ঝুঁকিতে আছে আরও শ’খানেক। প্রকৃতির প্রতি মানুষের শাসন, পরিবেশ দূষণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে পরিবেশ বিপর্যয় জোরালো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হারিয়ে যেতে পারে অতি পরিচিত প্রাণীও! আগামী কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কয়েক দশক ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা। ১১ বছরে ৩৩৪ টি বাঘ কমেছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ১০৬। ১৯৮০ সালের পর এ পর্যন্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৭০ টি বাঘ মারা গেছে। মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব বা খাদ্যের অভাবে কমেছে হাতির সংখ্যাও। সব মিলিয়ে সারা দেশে ২০০’র বেশি হাতি নেই। আর প্রকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শকুন প্রায় বিলুপ্তির পথে। টিকে থাকা শকুনের সংখ্যা কোনক্রমেই ৩০০’র বেশি হবে না। বৃষ্টিভেজা রাতে ঘরের পাশে এখন আর অগের মতো শোনা যায় না ব্যাঙের ডাক। ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে ব্যাঙের নানা প্রজাতি। কমেছে কাছিমের সংখ্যাও। হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাণী শিকারের প্রতি মানুষের মনোবৃত্তি, ভোগের ইচ্ছা ও অর্থনৈতিক কারণই প্রাণী কমে যাওয়ার অন্যতম করণ। তার মতে, দেশের কোথাও চারণভূমি নেই। ফলে খাদ্যসঙ্কটে গবাদিপশু। এখনও সুন্দরবনে অবৈধভাবে হরিণ শিকার হয়। হরিণ শিকারের কারণেও বাঘের সংখ্যা কমছে বলে তার অভিমত।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, সংরক্ষণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে মোট বন্যপ্রজাতির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আগামী কয়েক বছরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাদের মতে, বিদ্যমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যে হাজারখানেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী টিকে আছে, যারা পরিবর্তিত পরিবেশে বিপন্ন। অর্ধেক প্রজাতিই এখন কোন না কোন ধরনের হুমকির সম্মুখীন।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ ও দ্যা ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন বাংলাদেশ শাখার এক জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। দেড় শ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ১৩ প্রজাতির মেরুদ-ী প্রাণী, ৪৭ প্রজাতির দেশী পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর, ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১০ টি মিলিয়ে প্রায় তিন শ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। একইভাবে বিপন্ন অবস্থায় ১০৬ প্রজাতির নলবাহী উদ্ভিদ।
জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ নদী বর্ষাকাল শেষে মরা খালে পরিণত হয়। বিষাক্ত বর্জ্য ও নদীতে সারা বছর পানি না থাকার কারণে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণীও বিলুপ্তির পথে। মিঠা পানির প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত। শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ আগের ন্যায় দেখা যায় না। নদীতে বসবাসকারী ঘড়িয়াল ও শুশুকও বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। আর গ্রামে আগের মতো দেখা যায় না গুইশাপ।
অভিযোগ রয়েছে, বিলুপ্তির পথে এমন প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার বন্য পশু-পাখি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অবাধে বিক্রি হয়। রাজধানীর কাঁটাবনের পশু-পাখির মার্কেট এর অন্যতম। বিরলপ্রায় সব ধরনের পশু-পাখি এখানে পাওয়া যায়। লালমুখো বানর, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, লাল ঠোঁটের টিয়া, শিকারি ঈগল, হরিণ, বন্যবিড়াল-কুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপসহ অনেক প্রাণী বিক্রি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে এমন মার্কেট, যেখানে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্তসব প্রাণী। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে শিকার ও বিক্রির কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব প্রজাতি।
বাঘ ॥ বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, যা এখন বিলুপ্তির পথে। প্রতিবছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে বাঘের সংখ্যা। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মাত্র ১০৬ টি বাঘ রয়েছে। ২০০৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি। ১১ বছরেই বাঘের সংখ্যা কমেছে ৩৩৪ টি।
বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সুন্দরবনের প্রায় ৭০ টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩ টি। ২০০৪ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৪০ টি। আর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১০৬! অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পরিচালিত এক জরিপের তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ৩৬৯ টি।
বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বলেন, ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতির জরিপে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সুন্দরবনে ৮৩ থেকে ১৩০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে? গড় হিসেবে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০৬?
হাতি ॥ দেশে ক্রমাগত কমছে হাতির সংখ্যা। সারা বিশ্বে এশিয়ান এলিফ্যান্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার দাবি করা হলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২০০’র বেশি হবে না। হুমকির মুখে থাকা প্রকৃতির এ বন্ধুকে গভীর সঙ্কটাপন্ন প্রাণী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। হাতির বিচরণভূমিতে মানুষের হানা ও প্রকৃতিতে খাদ্য সঙ্কটসহ নানা কারণে হাতির সংখ্যা কমছে বলে মনে করেন হাতি বিশেষজ্ঞরা।
আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতির দেখা মেলে। তবে কমছে সে সংখ্যা। বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারিদের উৎপাত হাতি কমার অন্যতম কারণ। হাতি শিকার এবং চুরি করে পাচারও বাড়ছে দিন দিন। এভাবেই কমছে হাতির সংখ্যা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়নের ২০১২ সালের প্রকাশিত এক তথ্যমতে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে ১০ বছরে মানুষের হাতে ৪৭ টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. আবুল হাসনাত মোঃ রায়হান সরকারের মতে, সর্বশেষ গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ৪০০ থেকে কমে হাতির সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২০০’র কম।
শকুন ॥ দু’শ’ প্রজাতির পাখি হুমকির মধ্যে, এর মধ্যে রয়েছে শকুন। দেশে ক্রমাগত কমছে শকুনের সংখ্যা। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ। স্বাধীনতা পূর্বে ৫০ হাজার শকুন থাকলেও বর্তমানে সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০০’র নিচে। গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার শকুন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া আবাসস্থল, খাদ্য সঙ্কট তো রয়েছেই। শকুনের জন্য ঘোষিত নিরাপদ এলাকাতেও শকুন নিরাপদে নেই। ধারণা করা হয়, সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব না হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এ প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ কয়েক দশক পূর্বে প্রতিটি গ্রামে শকুনের দেখা মিলত। বর্তমানে পাখিটির দেখা পাওয়া দুষ্কর। দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও এর এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশী প্রজাতির বাংলা শকুনও।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সারা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন রয়েছে। দেশে এক সময় ৬ প্রজাতির শকুনের দেখা মিললেও এর ৩ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করত। বাংলা ও সরুঠোঁট প্রজাতির শকুন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকলেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে স্থায়ীভাবে বসবাস করা রাজশকুন।
জানা গেছে, পশু চিকিৎসায় ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ও কিটোপ্রোফেন ব্যবহার শকুনের কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। ২০০৩ সালে মার্কিন গবেষক ড. লিন্ডসে ওক প্রমাণ করেন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম (ডাইক্লোফেন) ওষুধ ব্যবহার করা গরু ও ছাগলের মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শকুন মারা যায়। ফলে ভারত ও পাকিস্তান ২০০৬ সালে, নেপাল ২০০৯ সালে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম (ডাইক্লোফেন) বন্ধ করে পরিবর্তে মেলোক্সিক্যামসহ বিকল্প ওষুধ ব্যবহার শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তবে কোথাও কোথাও এখনও ব্যবহার হয়।
কাছিম ॥ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির কাছিম। কাইট্টা কাছিম ও বিশ্ববিখ্যাত বোস্তামী কাছিমও রয়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। প্রচলিত আছে, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর (রহ) মাজার ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে বোস্তামী কাছিমের দেখা পাওয়া দুষ্কর। মাজারের পুকুরটিতেও কমে গেছে কাছিমের সংখ্যা। ধারণা করা হয়, বর্তমানে মাজার সংলগ্ন পুকুরে ১৫০ থেকে ৩৫০ টি কাছিমের আবাস রয়েছে। মাজার সংলগ্ন পুকুরটির মতো দেশের পুরনো পুকুরে কাছিমের দেখা মিললেও বর্তমানে সরীসৃপ এ প্রাণীটির দেখা পাওয়া দুষ্কর। অন্যান্য এলাকার মতো ময়মনসিংহ অঞ্চলের কাইট্টা কাছিমের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। জানা গেছে, দেশে একসময় ২৮ প্রজাতির কাছিম পাওয়া যেত। ৫ টি সামুদ্রিক প্রজাতি, ২ টি পাহাড়ী এবং খাল-বিল ও হাওড়সহ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ২১ প্রজাতির কাইট্টা কাছিম বাস করত। আইইউসিএনের ২০০০ সালের জরিপে দেশের ২০ প্রজাতির কাইট্টা কাছিমকে বিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালে অন্যতম বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় বোস্তামী কাছিমের নাম উঠে আসে। পরিবেশ বন্ধু কাছিম সংরক্ষণ করা না হলে তা বিলুপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন কাছিম সংরক্ষণের আহ্বান।
ব্যাঙ ॥ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে ব্যাঙের সংখ্যাও। গত ৩৫ বছরে ব্যাঙের ২০০ প্রজাতি হারিয়ে গেছে, অথচ যা হওয়ার কথা ছিল আগামী ৫০০ বছরে। গুরুত্ব উপলব্ধির পূর্বেই দেশে কমে গেছে ব্যাঙ। সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব না হলেও পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, কীটনাশক প্রয়োগের কারণেই কমেছে ব্যাঙ। এছাড়া খাদ্য ও চালানের নিমিত্তে ব্যাঙ নিধন অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হয়, টিকে থাকা ব্যাঙের প্রজাতি রক্ষা করা সম্ভব না হলে পরিবেশের ইকো-সিস্টেমের ওপর প্রথম আঘাত আসবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে ১৮ এপ্রিল পালিত হয় সেভ দ্যা ফ্রগস ডে।
বিলুপ্ত যেসব প্রাণী ॥ বন বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ১৪ টি প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডোরাকাটা হায়েনা, গ্রে উলফ (ধূসর নেকড়ে), বারাশিঙা বা কাদা হরিণ, ব্ল্যাকবাক (হরিণ জাতীয়), নীলগাই, গাওর, বানটেং (এক ধরনের বুনো মোষ), বন্য জলমহিষ, সুমাত্রান গ-ার, জাভান গ-ার, ভারতীয় গ-ার, দেশী ময়ূর, পিঙ্ক হেডেড ডাক (পাখি) ও মিঠা পানির কুমির।
প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভবের স্থান সেভাবে তৈরি না হওয়ায় প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভবের জায়গাটা সেভাবে তৈরি হয়নি। পাখি, সাপ বা ব্যাঙ দেখামাত্রই তার দিকে ঢিল ছোড়ার প্রবণতা রয়েছে। রয়েছে শিকারের মনোবৃত্তি। প্রাণীর খাবার বা আবাসস্থল কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ মানুষ। তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রয়োজনে প্রাণী একদিকে খাবারে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে হচ্ছে ভোগ-বিলাসের সামগ্রীতে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীব বৈচিত্র্যের ওপর মানুষই প্রভাব ফেলছে। দেশে কৃষিজমি বৃদ্ধি করতে বন উজাড় করা হচ্ছে। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আবাসস্থল ও খাদ্য সঙ্কটের কারণে কমছে নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন থেকে এখনও কী পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়, তা কল্পনাও করা যাবে না। উচ্চাভিলাষী অনেক মানুষ ঢাকায় বসে এখনও হরিণের মাংস খায়। হরিণ না থাকলে সুন্দরবনে বাঘ থাকবে না। বাঘের খাবার কমে যাওয়াও বাঘ কমার অন্যতম কারণ।
এ প্রসঙ্গে বন বিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মোঃ ইউনুছ আলী বলেন, ফরেস্ট ইকো-সিস্টেম যাতে পরিবর্তন না হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। নগরায়ন ও শিল্পায়ন যত বেশি হবে জীব বৈচিত্র্যের ওপর তত প্রভাব পড়বে। প্রাণীরা খুব সংবেদনশীল হওয়ায় পরিবর্তিত পরিবেশে টিকতে না পেরে বিভিন্ন প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউনুছ আরও বলেন, এখনও সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যে তেমনভাবে প্রভাব পড়েনি। একাধিক ডাকাত দল সক্রিয় থাকায় অবৈধ শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত। অবৈধ শিকার ও পাচার রোধে সাধ্যাতীত চেষ্টা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পশু-পাখি প্রজাতির মাছ

আপডেট টাইম : ০৮:০১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অক্টোবর ২০১৫

জীব বৈচিত্র্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির প্রাণী। অস্তিত্ব সঙ্কট ও হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রাণীসম্পদ। গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। ঝুঁকিতে আছে আরও শ’খানেক। প্রকৃতির প্রতি মানুষের শাসন, পরিবেশ দূষণ ও পরিবর্তিত জলবায়ুর কারণে পরিবেশ বিপর্যয় জোরালো হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। হারিয়ে যেতে পারে অতি পরিচিত প্রাণীও! আগামী কয়েক বছরে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কয়েক দশক ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা। ১১ বছরে ৩৩৪ টি বাঘ কমেছে। বর্তমানে এ সংখ্যা ১০৬। ১৯৮০ সালের পর এ পর্যন্ত সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ৭০ টি বাঘ মারা গেছে। মানুষ-হাতি দ্বন্দ্ব বা খাদ্যের অভাবে কমেছে হাতির সংখ্যাও। সব মিলিয়ে সারা দেশে ২০০’র বেশি হাতি নেই। আর প্রকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী শকুন প্রায় বিলুপ্তির পথে। টিকে থাকা শকুনের সংখ্যা কোনক্রমেই ৩০০’র বেশি হবে না। বৃষ্টিভেজা রাতে ঘরের পাশে এখন আর অগের মতো শোনা যায় না ব্যাঙের ডাক। ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে ব্যাঙের নানা প্রজাতি। কমেছে কাছিমের সংখ্যাও। হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় পাখি দোয়েল। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রাণী শিকারের প্রতি মানুষের মনোবৃত্তি, ভোগের ইচ্ছা ও অর্থনৈতিক কারণই প্রাণী কমে যাওয়ার অন্যতম করণ। তার মতে, দেশের কোথাও চারণভূমি নেই। ফলে খাদ্যসঙ্কটে গবাদিপশু। এখনও সুন্দরবনে অবৈধভাবে হরিণ শিকার হয়। হরিণ শিকারের কারণেও বাঘের সংখ্যা কমছে বলে তার অভিমত।
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের মতে, সংরক্ষণ ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে মোট বন্যপ্রজাতির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আগামী কয়েক বছরে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। তাদের মতে, বিদ্যমান পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়ে যে হাজারখানেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী টিকে আছে, যারা পরিবর্তিত পরিবেশে বিপন্ন। অর্ধেক প্রজাতিই এখন কোন না কোন ধরনের হুমকির সম্মুখীন।
ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশ ও দ্যা ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন বাংলাদেশ শাখার এক জরিপের তথ্য থেকে জানা যায়, গত ২০০ বছরে বিলুপ্ত হয়েছে অন্তত ৩০০ প্রজাতির প্রাণী। দেড় শ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, ১৩ প্রজাতির মেরুদ-ী প্রাণী, ৪৭ প্রজাতির দেশী পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর, ৬৩ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১০ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ১০ টি মিলিয়ে প্রায় তিন শ’ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও বিপন্ন ৪৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। একইভাবে বিপন্ন অবস্থায় ১০৬ প্রজাতির নলবাহী উদ্ভিদ।
জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ নদী বর্ষাকাল শেষে মরা খালে পরিণত হয়। বিষাক্ত বর্জ্য ও নদীতে সারা বছর পানি না থাকার কারণে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণীও বিলুপ্তির পথে। মিঠা পানির প্রায় ৫৪ শতাংশ প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত। শামুক, ঝিনুক, কচ্ছপ আগের ন্যায় দেখা যায় না। নদীতে বসবাসকারী ঘড়িয়াল ও শুশুকও বিলুপ্তির তালিকায় রয়েছে। আর গ্রামে আগের মতো দেখা যায় না গুইশাপ।
অভিযোগ রয়েছে, বিলুপ্তির পথে এমন প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার বন্য পশু-পাখি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অবাধে বিক্রি হয়। রাজধানীর কাঁটাবনের পশু-পাখির মার্কেট এর অন্যতম। বিরলপ্রায় সব ধরনের পশু-পাখি এখানে পাওয়া যায়। লালমুখো বানর, লজ্জাবতী বানর, মুখপোড়া হনুমান, লাল ঠোঁটের টিয়া, শিকারি ঈগল, হরিণ, বন্যবিড়াল-কুকুর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, সাপসহ অনেক প্রাণী বিক্রি হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও প্রকাশ্যে গড়ে উঠেছে এমন মার্কেট, যেখানে অবৈধভাবে বিক্রি হচ্ছে বিলুপ্তসব প্রাণী। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, অবৈধভাবে শিকার ও বিক্রির কারণে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব প্রজাতি।
বাঘ ॥ বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, যা এখন বিলুপ্তির পথে। প্রতিবছরই আশঙ্কাজনক হারে কমছে বাঘের সংখ্যা। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে মাত্র ১০৬ টি বাঘ রয়েছে। ২০০৪ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি। ১১ বছরেই বাঘের সংখ্যা কমেছে ৩৩৪ টি।
বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী, ১৯৮০ সাল থেকে এ পর্যন্ত চোরা শিকারি ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সুন্দরবনের প্রায় ৭০ টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। তাদের রেকর্ড অনুযায়ী, ১৯৮২ সালে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৫৩ টি। ২০০৪ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৪৪০ টি। আর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১০৬! অন্যদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা পরিচালিত এক জরিপের তথ্যে বলা হয়, বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা ৩৬৯ টি।
বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বলেন, ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতির জরিপে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সুন্দরবনে ৮৩ থেকে ১৩০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে? গড় হিসেবে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০৬?
হাতি ॥ দেশে ক্রমাগত কমছে হাতির সংখ্যা। সারা বিশ্বে এশিয়ান এলিফ্যান্টের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার দাবি করা হলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২০০’র বেশি হবে না। হুমকির মুখে থাকা প্রকৃতির এ বন্ধুকে গভীর সঙ্কটাপন্ন প্রাণী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। হাতির বিচরণভূমিতে মানুষের হানা ও প্রকৃতিতে খাদ্য সঙ্কটসহ নানা কারণে হাতির সংখ্যা কমছে বলে মনে করেন হাতি বিশেষজ্ঞরা।
আইইউসিএন বলছে, তিন প্রজন্মে হাতির সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ায় এশিয়ান হাতির দেখা মেলে। তবে কমছে সে সংখ্যা। বন উজাড় এবং দাঁতের জন্য শিকারিদের উৎপাত হাতি কমার অন্যতম কারণ। হাতি শিকার এবং চুরি করে পাচারও বাড়ছে দিন দিন। এভাবেই কমছে হাতির সংখ্যা। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়নের ২০১২ সালের প্রকাশিত এক তথ্যমতে, ২০০৩ থেকে ২০১২ সালে ১০ বছরে মানুষের হাতে ৪৭ টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে। আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্টি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. আবুল হাসনাত মোঃ রায়হান সরকারের মতে, সর্বশেষ গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ৪০০ থেকে কমে হাতির সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২০০’র কম।
শকুন ॥ দু’শ’ প্রজাতির পাখি হুমকির মধ্যে, এর মধ্যে রয়েছে শকুন। দেশে ক্রমাগত কমছে শকুনের সংখ্যা। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে এ পর্যন্ত শকুন হ্রাসের পরিমাণ ৯৮ শতাংশ। স্বাধীনতা পূর্বে ৫০ হাজার শকুন থাকলেও বর্তমানে সব মিলিয়ে এ সংখ্যা ৩০০’র নিচে। গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক ও কিটোপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার শকুন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এছাড়া আবাসস্থল, খাদ্য সঙ্কট তো রয়েছেই। শকুনের জন্য ঘোষিত নিরাপদ এলাকাতেও শকুন নিরাপদে নেই। ধারণা করা হয়, সচেতনতা সৃষ্টি সম্ভব না হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী এ প্রাণীটি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ কয়েক দশক পূর্বে প্রতিটি গ্রামে শকুনের দেখা মিলত। বর্তমানে পাখিটির দেখা পাওয়া দুষ্কর। দেশে তিন প্রজাতির শকুন স্থায়ীভাবে বসবাস করলেও এর এক প্রজাতি ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্তির পথে দেশী প্রজাতির বাংলা শকুনও।
বন বিভাগের তথ্যমতে, সারা পৃথিবীতে ২৩ প্রজাতির শকুন রয়েছে। দেশে এক সময় ৬ প্রজাতির শকুনের দেখা মিললেও এর ৩ প্রজাতি স্থায়ীভাবে বসবাস করত। বাংলা ও সরুঠোঁট প্রজাতির শকুন প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকলেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে স্থায়ীভাবে বসবাস করা রাজশকুন।
জানা গেছে, পশু চিকিৎসায় ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ও কিটোপ্রোফেন ব্যবহার শকুনের কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। ২০০৩ সালে মার্কিন গবেষক ড. লিন্ডসে ওক প্রমাণ করেন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম (ডাইক্লোফেন) ওষুধ ব্যবহার করা গরু ও ছাগলের মৃতদেহ ভক্ষণ করলে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শকুন মারা যায়। ফলে ভারত ও পাকিস্তান ২০০৬ সালে, নেপাল ২০০৯ সালে ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম (ডাইক্লোফেন) বন্ধ করে পরিবর্তে মেলোক্সিক্যামসহ বিকল্প ওষুধ ব্যবহার শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে গবাদিপশুর চিকিৎসায় ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। তবে কোথাও কোথাও এখনও ব্যবহার হয়।
কাছিম ॥ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির কাছিম। কাইট্টা কাছিম ও বিশ্ববিখ্যাত বোস্তামী কাছিমও রয়েছে অস্তিত্ব সঙ্কটে। প্রচলিত আছে, চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর (রহ) মাজার ছাড়া বিশ্বের অন্য কোন অঞ্চলে বোস্তামী কাছিমের দেখা পাওয়া দুষ্কর। মাজারের পুকুরটিতেও কমে গেছে কাছিমের সংখ্যা। ধারণা করা হয়, বর্তমানে মাজার সংলগ্ন পুকুরে ১৫০ থেকে ৩৫০ টি কাছিমের আবাস রয়েছে। মাজার সংলগ্ন পুকুরটির মতো দেশের পুরনো পুকুরে কাছিমের দেখা মিললেও বর্তমানে সরীসৃপ এ প্রাণীটির দেখা পাওয়া দুষ্কর। অন্যান্য এলাকার মতো ময়মনসিংহ অঞ্চলের কাইট্টা কাছিমের সংখ্যাও হ্রাস পেয়েছে। জানা গেছে, দেশে একসময় ২৮ প্রজাতির কাছিম পাওয়া যেত। ৫ টি সামুদ্রিক প্রজাতি, ২ টি পাহাড়ী এবং খাল-বিল ও হাওড়সহ অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে ২১ প্রজাতির কাইট্টা কাছিম বাস করত। আইইউসিএনের ২০০০ সালের জরিপে দেশের ২০ প্রজাতির কাইট্টা কাছিমকে বিপন্ন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৮ সালে অন্যতম বিপন্নপ্রায় প্রাণীর তালিকায় বোস্তামী কাছিমের নাম উঠে আসে। পরিবেশ বন্ধু কাছিম সংরক্ষণ করা না হলে তা বিলুপ্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। পরিবেশবাদীরা জানিয়েছেন কাছিম সংরক্ষণের আহ্বান।
ব্যাঙ ॥ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে ব্যাঙের সংখ্যাও। গত ৩৫ বছরে ব্যাঙের ২০০ প্রজাতি হারিয়ে গেছে, অথচ যা হওয়ার কথা ছিল আগামী ৫০০ বছরে। গুরুত্ব উপলব্ধির পূর্বেই দেশে কমে গেছে ব্যাঙ। সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব না হলেও পরিবেশবাদীদের আশঙ্কা, কীটনাশক প্রয়োগের কারণেই কমেছে ব্যাঙ। এছাড়া খাদ্য ও চালানের নিমিত্তে ব্যাঙ নিধন অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করা হয়, টিকে থাকা ব্যাঙের প্রজাতি রক্ষা করা সম্ভব না হলে পরিবেশের ইকো-সিস্টেমের ওপর প্রথম আঘাত আসবে। সচেতনতা সৃষ্টিতে ১৮ এপ্রিল পালিত হয় সেভ দ্যা ফ্রগস ডে।
বিলুপ্ত যেসব প্রাণী ॥ বন বিভাগের তথ্যমতে, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ১৪ টি প্রাণীর প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডোরাকাটা হায়েনা, গ্রে উলফ (ধূসর নেকড়ে), বারাশিঙা বা কাদা হরিণ, ব্ল্যাকবাক (হরিণ জাতীয়), নীলগাই, গাওর, বানটেং (এক ধরনের বুনো মোষ), বন্য জলমহিষ, সুমাত্রান গ-ার, জাভান গ-ার, ভারতীয় গ-ার, দেশী ময়ূর, পিঙ্ক হেডেড ডাক (পাখি) ও মিঠা পানির কুমির।
প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভবের স্থান সেভাবে তৈরি না হওয়ায় প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাণীর প্রতি মানুষের অনুভবের জায়গাটা সেভাবে তৈরি হয়নি। পাখি, সাপ বা ব্যাঙ দেখামাত্রই তার দিকে ঢিল ছোড়ার প্রবণতা রয়েছে। রয়েছে শিকারের মনোবৃত্তি। প্রাণীর খাবার বা আবাসস্থল কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ মানুষ। তিনি আরও বলেন, মানুষের প্রয়োজনে প্রাণী একদিকে খাবারে পরিণত হচ্ছে, অন্যদিকে হচ্ছে ভোগ-বিলাসের সামগ্রীতে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীব বৈচিত্র্যের ওপর মানুষই প্রভাব ফেলছে। দেশে কৃষিজমি বৃদ্ধি করতে বন উজাড় করা হচ্ছে। মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া আবাসস্থল ও খাদ্য সঙ্কটের কারণে কমছে নানা প্রজাতির প্রাণীর সংখ্যা।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন থেকে এখনও কী পরিমাণ হরিণ শিকার করা হয়, তা কল্পনাও করা যাবে না। উচ্চাভিলাষী অনেক মানুষ ঢাকায় বসে এখনও হরিণের মাংস খায়। হরিণ না থাকলে সুন্দরবনে বাঘ থাকবে না। বাঘের খাবার কমে যাওয়াও বাঘ কমার অন্যতম কারণ।
এ প্রসঙ্গে বন বিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মোঃ ইউনুছ আলী বলেন, ফরেস্ট ইকো-সিস্টেম যাতে পরিবর্তন না হয় সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। নগরায়ন ও শিল্পায়ন যত বেশি হবে জীব বৈচিত্র্যের ওপর তত প্রভাব পড়বে। প্রাণীরা খুব সংবেদনশীল হওয়ায় পরিবর্তিত পরিবেশে টিকতে না পেরে বিভিন্ন প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউনুছ আরও বলেন, এখনও সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র্যে তেমনভাবে প্রভাব পড়েনি। একাধিক ডাকাত দল সক্রিয় থাকায় অবৈধ শিকার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমাদের অভিযান অব্যাহত। অবৈধ শিকার ও পাচার রোধে সাধ্যাতীত চেষ্টা করছি।