হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফায়ারম্যান সোহেল রানার খোঁজ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বনানীর এফ আর টাওয়ারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তিনি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই ফায়ার ফাইটারের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যতো দ্রুত সম্ভব তাকে দেশের বাইরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশের পর তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গতকাল সকালে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি সোহেল রানার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। দ্রুত সোহেল রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক মেজর একেএম শাকির নেওয়াজ জানান, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তাঁর নির্দেশের পর সোহেল রানাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, নির্দেশ পাওয়ার পরই তাৎক্ষণিকভাবে কাগজপত্র প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেন সংশ্লিষ্টরা। সোহেল রানার সঙ্গে তার স্বজনদের মধ্যে ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন ও ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে যাবেন। গতকালই তাদের সিঙ্গাপুরে পাঠানোর কথা থাকলেও সোহেল রানা ও জসিম উদ্দিনের পাসপোর্ট না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার সুশান্ত মন্ডল।
সোহেল রানার ভগ্নিপতি জসিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জানান, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা শুরু থেকেই আন্তরিক ছিলেন। তাদের আন্তরিকতা ও পত্রিকায় লেখালেখির কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরে পড়েছে। তার নির্দেশে সোহেল রানার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার পাসপোর্টের প্রয়োজনীয় কাগজ, ছবি দিয়েছেন। তিনি আশা করছেন দুই এক দিনের মধ্যেই সোহেল রানাকে এয়ার এম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন সোহেল রানার অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জসিম উদ্দিন জানান, সোহেল রানার এখনও জ্ঞান ফিরেনি। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। জসিম উদ্দিন বলেন, সোহেল এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সোহেল রানার সুস্থতার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, গতকাল মানবজমিনের শেষ পৃষ্ঠায় ‘অন্যদের বাঁচাতে গিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে সোহেল রানা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সোহেল রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা দাবি করেছিলেন তার স্বজনরা। গত ২৮শে মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কুর্মিটোলা ইউনিটের সঙ্গে ছুটে যান ফায়ারম্যান সোহেল রানা। ল্যাডার (উঁচু মই) ব্যবহার করে একের পর এক উদ্ধার করছিলেন ভবনে আটকে পড়া মানুষদের। হঠাৎ ল্যাডারটি বন্ধ হয়ে যায়। ল্যাডারের বাস্কেটে তখন ভবন থেকে উদ্ধারকরা পাঁচ-ছয় জন। বাস্কেটে জায়গা হচ্ছিলো না। সোহেল রানা ল্যাডারের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যান। ওই সময়ে তার পা আটকে যায় ল্যাডারে। ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যায় তার ডান পায়ের হাড়। টান পড়ে কোমড়ে বাঁধা সেফটি হুকে। কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞান হয়ে যান সোহেল রানা। তারপর থেকে সিএমএইচে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে।