ঢাকা ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যার প্ররোচণায় ডা. মিতুর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৫৮:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • ৩২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানোর কথা জানিয়েছিল পুলিশ। যথাসময়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছেও বটে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়ায় পুলিশ তেমন কিছুই জানাতে পারেনি। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনায় ডা. মিতুর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে এ কথা জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় খালাতে ভাইয়ের বাসা থেকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল। এরপর মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান।

এ সময় শুক্রবার সকাল ১১টায় সিএমপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর কথাও বলেন তিনি। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে এসে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এখনো। গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমানত শাহ (র.) মাজার এলাকা থেকে মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর চান্দগাঁও থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা হচ্ছে।

মিজানুর রহমান বলেন, ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ করেছেন সেসব বিষয় যাচাই চলছে। আকাশের মৃত্যুর পেছনে যদি তাদের কারও ইন্ধন থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুলিশ জব্দ করেছে। তবে মোবাইল ফোন থেকে আকাশ তার ফেসবুকে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও বিভিন্ন ছবি সম্বলিত যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেগুলো ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটি আমাদের তদন্তের বিষয়। ডিলিট হলেও সেই স্ট্যাটাস রিকোভার করা সম্ভব।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আকাশের পরিবার চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানা গেছে। তবে পরিবার মামলা না করলেও আকাশের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের ডায়িং ডিক্লারেশন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মির্জা সায়েম মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার, পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা ২০ মিনিটে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা থেকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মরদেহ উদ্ধার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুইয়া।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় চিকিৎসকরা ইনজেকশনে বিষ প্রয়োগ করে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও একই কথা উল্লেখ করা হয়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ডা. আকাশ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেছেন। তার শরীরের কোথাও বড় ধরণের আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বাম হাতে ইনজেকশনের সুইয়ের কয়েকটি দাগ রয়েছে।

ওসি বলেন, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করার পর ডা. আকাশ আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি ফেসবুকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে স্ট্যাটাস দেন। পরপুরুষের সাথে স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবিও রয়েছে তার ফেসবুক টাইমলাইনে। আমরা সকল তথ্য সংগ্রহ করেছি। মিতুর ঘনিষ্ট কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ডা. আকাশের মা জোবাইদা আক্তার জানান, বুধবার রাতে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয় আকাশের। রাত চারটার কিছু আগে মিতু তার বাবাকে ফোন দিলে তিনি গাড়ি নিয়ে এসে মিতুকে নিয়ে যান। এরপর আকাশ মনমরা হয়ে বাসার সোফায় বসে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর মোবাইল চালাতে চালাতে ওয়াশরুমে যান আকাশ। পরে ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে বাথরুমে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় পাশেই কয়েকটি ইনজেকশনের সিরিঞ্জও পড়ে ছিল।

ডা. আকাশের ফেসবুক টাইমলাইনে দেখা যায়, আত্মহননের কয়েকমুহুর্ত আগে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে স¤পর্কের অবনতির ঘটনাবলি তুলে ধরেন। তার সর্বশেষ স্ট্যাটাস ছিল ভাল থেক আমার ভালবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আত্মহত্যার প্ররোচণায় ডা. মিতুর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৪:৫৮:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানোর কথা জানিয়েছিল পুলিশ। যথাসময়ে সংবাদ সম্মেলন হয়েছেও বটে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না হওয়ায় পুলিশ তেমন কিছুই জানাতে পারেনি। তবে আত্মহত্যার প্ররোচনায় ডা. মিতুর বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে এ কথা জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনের নেতৃত্বে থাকা চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম মহানগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নগরীর নন্দনকানন এলাকায় খালাতে ভাইয়ের বাসা থেকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের স্ত্রী ডা. তানজিলা হক চৌধুরী মিতুকে গ্রেপ্তার করে নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একটি দল। এরপর মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান।

এ সময় শুক্রবার সকাল ১১টায় সিএমপির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর কথাও বলেন তিনি। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে এসে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. মিজানুর রহমান বলেন, মিতুকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এখনো। গ্রেপ্তারের পর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আমানত শাহ (র.) মাজার এলাকা থেকে মিতুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ। নগরীর চান্দগাঁও থানায় পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা হচ্ছে।

মিজানুর রহমান বলেন, ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তানজিলা হক চৌধুরী মিতু, তার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ করেছেন সেসব বিষয় যাচাই চলছে। আকাশের মৃত্যুর পেছনে যদি তাদের কারও ইন্ধন থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে মোস্তফা মোরশেদ আকাশের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি পুলিশ জব্দ করেছে। তবে মোবাইল ফোন থেকে আকাশ তার ফেসবুকে স্ত্রী তানজিলা হক চৌধুরী মিতুর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ও বিভিন্ন ছবি সম্বলিত যে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সেগুলো ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, এটি আমাদের তদন্তের বিষয়। ডিলিট হলেও সেই স্ট্যাটাস রিকোভার করা সম্ভব।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আকাশের পরিবার চান্দগাঁও থানায় মামলা দায়ের করবেন বলে জানা গেছে। তবে পরিবার মামলা না করলেও আকাশের দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের ডায়িং ডিক্লারেশন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মির্জা সায়েম মাহমুদ, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার, পরিদর্শক (তদন্ত) জোবায়ের সৈয়দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা ২০ মিনিটে নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকের বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাসা থেকে ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশের মরদেহ উদ্ধার করে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে তার লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভুইয়া।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মোস্তফা মোরশেদ আকাশকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই সময় চিকিৎসকরা ইনজেকশনে বিষ প্রয়োগ করে তিনি আত্মহত্যা করেন বলে ধারণা করেন। পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও একই কথা উল্লেখ করা হয়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার বলেন, ডা. আকাশ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করে আত্মহত্যা করেছেন। তার শরীরের কোথাও বড় ধরণের আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে বাম হাতে ইনজেকশনের সুইয়ের কয়েকটি দাগ রয়েছে।

ওসি বলেন, স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করার পর ডা. আকাশ আত্মহত্যা করেন। এর আগে তিনি ফেসবুকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ এনে স্ট্যাটাস দেন। পরপুরুষের সাথে স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবিও রয়েছে তার ফেসবুক টাইমলাইনে। আমরা সকল তথ্য সংগ্রহ করেছি। মিতুর ঘনিষ্ট কয়েকজনকে আটকের চেষ্টা চলছে।

ডা. আকাশের মা জোবাইদা আক্তার জানান, বুধবার রাতে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হয় আকাশের। রাত চারটার কিছু আগে মিতু তার বাবাকে ফোন দিলে তিনি গাড়ি নিয়ে এসে মিতুকে নিয়ে যান। এরপর আকাশ মনমরা হয়ে বাসার সোফায় বসে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পর মোবাইল চালাতে চালাতে ওয়াশরুমে যান আকাশ। পরে ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে বাথরুমে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় পাশেই কয়েকটি ইনজেকশনের সিরিঞ্জও পড়ে ছিল।

ডা. আকাশের ফেসবুক টাইমলাইনে দেখা যায়, আত্মহননের কয়েকমুহুর্ত আগে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও দিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে স¤পর্কের অবনতির ঘটনাবলি তুলে ধরেন। তার সর্বশেষ স্ট্যাটাস ছিল ভাল থেক আমার ভালবাসা তোমার প্রেমিকদের নিয়ে।