হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক থেকে এবার এক কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা পাওয়া গেছে। গতকাল বিকালে গণনা শেষে এই টাকার হিসাব পাওয়া যায়। বিপুল পরিমাণ দানের এই টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ও দান হিসেবে বেশ কিছু স্বর্ণালংকার পাওয়া গেছে। এর আগে গত বছরের ১৩ই অক্টোবর দান সিন্দুক খোলার পর এক কোটি ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল।
গত বছরের ৭ই জুলাই দানসিন্দুক খোলার পর পাওয়া গিয়েছিল ৮৮ লাখ ২৯ হাজার ১৭ টাকা। ১৩ই মে পাগলা মসজিদের একটি দানবাক্স খুলে চুরির চেষ্টা করার সময় দুর্বৃত্তের ফেলে যাওয়া বস্তাভর্তি টাকা গণনা করে পাওয়া ৮ লাখ ৪ হাজার ৯৮১ টাকা। এ ছাড়া গত বছরের ৩০শে মার্চ দানসিন্দুক খোলার পর ৮৪ লাখ ৯২ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সেই হিসেবে গত এক বছরে পাগলা মসজিদে দান হিসেবে নগদ টাকা পাওয়া গেছে মোট চার কোটি ৮ লাখ ৫৬ হাজার ১৫৬ টাকা। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ ১১ হাজার ৯৩৫ টাকা মসজিদটিতে মানুষ দান করেন।
গতকাল সকালে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দান সিন্দুকগুলো খোলা হয়। সিন্দুক থেকে টাকা খুলে প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর শুরু হয় গণনা। টাকা গণনায় মসজিদ মাদরাসার ৬০ জন ছাত্র শিক্ষক ছাড়াও রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা অংশ নেন।
কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজির হোসেন, মো. শরীফুল আলম ও সাগুফতা হক টাকা গণনার কাজ তদারকি করেন। এ সময় সিন্দুক খোলা কমিটির সদস্যরা ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তা, মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন। টাকা গণনার এই এলাহী কাণ্ড নিজ চোখে অবলোকন করতে শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান।
প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ মসজিদটির দানসিন্দুকগুলোতে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। কথিত আছে, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। সেজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন।
জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটির অবস্থান। দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়।
টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাজির হোসেন জানান, পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক খুলে এবার এক কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা পাওয়া গেছে। টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ান ডলার, সিঙ্গাপুরী ডলার, সৌদি রিয়াল, মালয়েশিয়ান রিংগিত, ভালো পরিমাণের স্বর্ণালংকার পাগলা মসজিদের দানবাক্সে জমা পড়েছে।