হাওর বার্তা ডেস্কঃ তৃণমূল জনগোষ্ঠীর বিনামূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) চাকরি স্থায়ীকরণের পাশাপাশি তাদের সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ লক্ষ্যে গত ৩০ জুলাই মন্ত্রিসভায় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন-২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো এখন একটি প্রকল্পের আওতায় চলছে। আইনটি পাস হলে ক্লিনিকগুলো ট্রাস্টের আওতায় চলে আসবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম বলেন, আইনে কর্মীদের স্থায়ীকরণ, বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতির সুযোগ, গ্র্যাচুইটি, অবসর ভাতা প্রদান- এসব সুবিধা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, একটি প্রবিধানের মাধ্যমে এগুলো নিশ্চিত করা হবে। তারা ট্রাস্টের আওতায় থাকবেন। তবে সরকারি যে সুবিধাগুলো আছে সেগুলো সবই পাবেন।
বাংলাদেশ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী বিভাগের আহবায়ক আফাজ উদ্দিন লিটন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের চাকরি ট্রাস্টের আওতায় নিয়েছেন। এ আইন বাস্তবায়িত হলে আমরা সরকারিকরণের মতই সব সুযোগ-সুবিধা পাবো।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৪ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ডে একজন সভাপতি ও অতিরিক্ত সচিব বা সমমর্যাদার একজন ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকবেন। দেশের খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রী একজনকে ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেবেন। ট্রাস্টে একটি উপদেষ্টা পরিষদও থাকবে।
তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে নিভৃত গ্রামাঞ্চলে গড়ে তোলা কমিউনিটি ক্লিনিক জনগণের স্বাস্থ্য সেবার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেখানে প্রসূতি মায়ের নিরাপদ প্রসব সেবাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য সহকারীরা তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করছেন। স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা এই স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র পরিচালনায় সহায়তা করছেন।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া থানাধীন পাটগাতী ইউনিয়নের ঘিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে এই কার্যক্রমের সূচনা করেন। বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। আরো ১ হাজার ২৯টি ক্লিনিক নির্মাণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এখানে ৩২ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ সেবা নিয়েছে।
কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রেভাইডাররা (সিএইচসিপি) শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ক্লিনিকে উপস্থিত থাকেন। তারা ক্লিনিক খোলা এবং বন্ধ করা, রোগীর উপস্থিতি রেজিস্টারে নাম তোলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করাসহ তাদের কর্মপরিধির আওতাধীন সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত ফসল। এই ক্লিনিকগুলোতে রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। গ্রামের দরিদ্র মানুষ যাতে এই ওষুধগুলো ঠিক মতো পায় সেজন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত মনিটরিং-এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলা সদর কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার উজ্জ্বল কুমার বলেন, এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কারণে দেশের দরিদ্র মানুষ সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিনামূল্যে ৩২ রকম ওষুধ পেয়ে থাকে। এই কারণেই ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক রেড়েছে। গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ জন রোগীকে এখান থেকে সেবা দেয়া হয়।
কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা গ্রহণকারী কেয়া সরকার জানান, এই ক্লিনিকে সব চিকিৎসা হয়। ওষুধ কিনতে হয় না। ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হয়। আগে শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হতো। সময় লাগতো বেশী, টাকাও খরচ হতো। কিন্তু এখন আর শহরে যেতে হয় না। সাধারণ রোগের চিকিৎসা তারা এখান থেকেই পাচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানার কুসম্বি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন যাবত হাঁপানি ও শ্বাস কষ্টে ভুগছি। আমার পক্ষে ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাড়ির কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে এসেছি। এখানে সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে ওষুধ-পত্র পাওয়া যায়।
কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডা. আবুল হাসেম বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। হাতের কাছে ফ্রি চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ পেয়ে সবাই খুশি। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে। বাসস