ঢাকা ১১:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত মিলন সমর্থকরা রাজপথে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮
  • ৩১২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না নতুন প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। শুক্রবার রাতে ছাতক শহরে ঝাড়–মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ মিলন সমর্থকরা। অবশ্য, মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছেন,‘সবই ঠিক হয়ে যাবে। দেশ, দল, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্যই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে।’

জেলার ছাতক-দোয়ারাবাজারে প্রায় ১০ বছর ধরেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি। একাংশের নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। অপরাংশের নেতা ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। দলীয় বিভক্তি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। ছাতক-দোয়ারাবাজারে বিএনপির ইউনিট কমিটিগুলোও হয়েছে দুই নেতার মধ্যে ভাগাভাগি করে। এই দুই নেতা আলাদা আলাদা কর্মসূচিই পালন করে আসছিলেন। গত বছরের ২৫ মে বিএনপির জেলা কমিটিতে সভাপতি পদে মিলন-মিজান দুজনেই প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। অবশেষে সভাপতি করা হয় মিলনকে। জেলা কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয় মিজানুর রহমান চৌধুরীকে।

ভোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞ এই দুই নেতাই নির্বাচন করার আগ্রহ নিয়ে মনোনয়ন তদবির করে আসছিলেন। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন দলীয় দায়িত্বে থাকায় এলাকায় যোগাযোগ ছিল বেশি। তাঁর কর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন তাঁকে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। একইভাবে মিজানুর রহমান চৌধুরীও তাঁর মতো করে এলাকায় যোগাযোগ রাখেন। নিজের সমর্থকদেরও চাঙ্গা করে রাখেন।
কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিককে ৩০ হাজার ১৬০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। অবশ্য ২০০৯’এর জাতীয় নির্বাচনে ৮০ হাজার ৫০০ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিকের কাছে পরাজিত হন তিনি।

অন্যদিকে, মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০০৮ সালে ছাতক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। মিলন ১৫ ফেব্রুয়ারি’র জাতীয় নির্বাচনসহ ৩ বারের সংসদ সদস্য। অন্যদিকে, মিজান এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন।
এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে এই দুই নেতাই ছিলেন মরিয়া। দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক সমর্থকও গত কয়েকদিন রাজধানীতে ছিলেন। শুক্রবার মিজানুর রহমান চৌধুরীকে দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী ঘোষণা করলে মিলন সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হন। রাত ১০ টায় ছাতক শহরে ঝাড়– মিছিল বের করেন এই অংশের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

ছাতক উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সমর্থক হিফজুল বারী শিমুল বলেন,‘দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের যিনি দুঃসময়ে আগলে রাখেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এজন্য ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছে।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুল হক নমু বলেন,‘আমাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলীয় মনোনয়নের পুনঃবিবেচনা হোক। অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে যিনি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ছায়া দিয়ে রেখেছেন, তাঁকে দলীয় প্রার্থী করা হয়নি। কর্মীরা এটি মানতে পারছে না।’

ছাতক পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ তিতুমির বললেন,‘ছাতক-দোয়ারায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যাদের উপর মামলা মোকদ্দমা হয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন পাননি।’ জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ট দলীয় নেতা নিজাম উদ্দিন বললেন,‘বিএনপি বড় দল, এ ধরনের কিছু প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। আজ-কালের মধ্যে নেতা-কর্মীদের সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ শুরু করবেন।’

মিজানুর রহমান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন,‘২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী আমি। দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সকলেই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন এই প্রত্যাশা আমার।’ কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন,‘ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করতে ছাতক উপজেলা বিএনপি’র কার্যালয় চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন। আমি ওখানে উপস্থিত হয়ে বলেছি, দলীয় চেয়ারপার্সন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসনে, এই অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

গত প্রায় ১০ বছর হয় আপনাদের নিয়ে রাজপথে ছিলাম। আপনাদের আকাঙ্খা ছিল আমাকে নিয়ে নির্বাচন করার। কিন্তু আমি মনোনয়ন আনতে ব্যর্থ হয়েছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করবেন। ধানের শীষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ আপনারা করলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবো আমি। পরে তারা মিছিল করা থেকে বিরত থেকেছেন।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত মিলন সমর্থকরা রাজপথে

আপডেট টাইম : ০৪:৩৩:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না নতুন প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরীকে। শুক্রবার রাতে ছাতক শহরে ঝাড়–মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধ মিলন সমর্থকরা। অবশ্য, মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেছেন,‘সবই ঠিক হয়ে যাবে। দেশ, দল, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্যই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হবে।’

জেলার ছাতক-দোয়ারাবাজারে প্রায় ১০ বছর ধরেই দ্বিধাবিভক্ত বিএনপি। একাংশের নেতা জেলা বিএনপির সভাপতি, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। অপরাংশের নেতা ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী। দলীয় বিভক্তি গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। ছাতক-দোয়ারাবাজারে বিএনপির ইউনিট কমিটিগুলোও হয়েছে দুই নেতার মধ্যে ভাগাভাগি করে। এই দুই নেতা আলাদা আলাদা কর্মসূচিই পালন করে আসছিলেন। গত বছরের ২৫ মে বিএনপির জেলা কমিটিতে সভাপতি পদে মিলন-মিজান দুজনেই প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। অবশেষে সভাপতি করা হয় মিলনকে। জেলা কমিটি গঠনের কয়েক মাসের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা হয় মিজানুর রহমান চৌধুরীকে।

ভোটের রাজনীতিতে অভিজ্ঞ এই দুই নেতাই নির্বাচন করার আগ্রহ নিয়ে মনোনয়ন তদবির করে আসছিলেন। কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন দলীয় দায়িত্বে থাকায় এলাকায় যোগাযোগ ছিল বেশি। তাঁর কর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন তাঁকে নিয়েই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার। একইভাবে মিজানুর রহমান চৌধুরীও তাঁর মতো করে এলাকায় যোগাযোগ রাখেন। নিজের সমর্থকদেরও চাঙ্গা করে রাখেন।
কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুহিবুর রহমান মানিককে ৩০ হাজার ১৬০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। অবশ্য ২০০৯’এর জাতীয় নির্বাচনে ৮০ হাজার ৫০০ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিকের কাছে পরাজিত হন তিনি।

অন্যদিকে, মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০০৮ সালে ছাতক উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে জয়লাভ করেন। মিলন ১৫ ফেব্রুয়ারি’র জাতীয় নির্বাচনসহ ৩ বারের সংসদ সদস্য। অন্যদিকে, মিজান এবারই প্রথম দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন।
এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে এই দুই নেতাই ছিলেন মরিয়া। দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে বিপুল সংখ্যক সমর্থকও গত কয়েকদিন রাজধানীতে ছিলেন। শুক্রবার মিজানুর রহমান চৌধুরীকে দলের মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী ঘোষণা করলে মিলন সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হন। রাত ১০ টায় ছাতক শহরে ঝাড়– মিছিল বের করেন এই অংশের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

ছাতক উপজেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের সমর্থক হিফজুল বারী শিমুল বলেন,‘দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অবজ্ঞা করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের যিনি দুঃসময়ে আগলে রাখেন, তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এজন্য ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মিছিল করেছে।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামছুল হক নমু বলেন,‘আমাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলীয় মনোনয়নের পুনঃবিবেচনা হোক। অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে যিনি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ছায়া দিয়ে রেখেছেন, তাঁকে দলীয় প্রার্থী করা হয়নি। কর্মীরা এটি মানতে পারছে না।’

ছাতক পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ তিতুমির বললেন,‘ছাতক-দোয়ারায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য যাদের উপর মামলা মোকদ্দমা হয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন পাননি।’ জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ট দলীয় নেতা নিজাম উদ্দিন বললেন,‘বিএনপি বড় দল, এ ধরনের কিছু প্রতিক্রিয়া হতেই পারে। আজ-কালের মধ্যে নেতা-কর্মীদের সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে কাজ শুরু করবেন।’

মিজানুর রহমান চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন,‘২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী আমি। দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সকলেই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন এই প্রত্যাশা আমার।’ কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন,‘ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা শনিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করতে ছাতক উপজেলা বিএনপি’র কার্যালয় চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন। আমি ওখানে উপস্থিত হয়ে বলেছি, দলীয় চেয়ারপার্সন কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাসনে, এই অবস্থায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

গত প্রায় ১০ বছর হয় আপনাদের নিয়ে রাজপথে ছিলাম। আপনাদের আকাঙ্খা ছিল আমাকে নিয়ে নির্বাচন করার। কিন্তু আমি মনোনয়ন আনতে ব্যর্থ হয়েছি। আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করবেন। ধানের শীষের ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ আপনারা করলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবো আমি। পরে তারা মিছিল করা থেকে বিরত থেকেছেন।’