হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৫০ বছর আগে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখেছি। আর এখন দেখছি বটগাছ হতে। শুনেছি পুকুর চুরির কথা। এখন শুনছি সাগরের তলদেশসহ চুরির কথা। আগে ১০ গ্রাম ঘুরে দু-চারের বেশি চোরের সন্ধান পাওয়া ছিল ভার। এখন ঘরে ঘরে চোরের নিবাস। কেউ লুকিয়ে-ছাপিয়ে চুরি করছে, আবার অনেকটা ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। চোরের রকম পাল্টেছে, ধরনও বদলেছে। আগে চুরি করত দীনহীনরা। এখন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা।
আসলে সময় পাল্টে দিয়েছে সব। আমরা আমাদের দেশপ্রেম হারিয়েছি। হারিয়েছি চরিত্র নামের মূল্যবান সম্পদটিও। অবৈধ সম্পদের চাপে সমাজের মানসম্ভ্রমসহ সবটাই বিধ্বস্ত। সমাজ যতটা বিধ্বস্ত হবে, অনৈতিক বণিকদের সুবিধাও ততোধিক। তাই অবাধ বাণিজ্য চলছে মাদকের।
আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিউ সাইকো-অ্যাক্টিভসাবসটেনসেস (এনপিএস) জাতীয় মাদক ‘খাটের’ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের মাদক কারবারিরা। গ্রিন-টি বলে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে দুই বছর ধরে এর আমদানি চলেছে। বাণিজ্য চলছে রমরমা এবং তা সব ধরনের প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়ে।
এমনিতেই ইয়াবার চাপে দেশও জাতির নাভিশ্বাস উঠেছে। তারপর নতুন করে যুক্ত হয়েছে ‘খাট’। এসব কারবারি এতই শক্তিধর, বিমানবন্দর ও কাস্টম হাউসের লোকজনকে দিয়ে তারা গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। পুলিশের কথা না-ই বা বললাম। আর এ কারণে একের পর এক চালান ধরা পড়লেও কারবারিরা থেকে যাচ্ছে অধরা।
গত তিন মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), পুলিশ ও কাস্টম হাউসের তৎপরতায় ‘খাটের’ ১৪ বড় চালান ধরা পড়ে। এসব অভিযানে সাড়ে ৫ হাজার কেজি ‘খাট’ জব্দ করা হয়।
গোয়েন্দা তথ্য মতে, ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা থেকে ‘এশা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামেই ‘খাটের’ পাঁচটি চালান এসেছে। এক মাস আগে মালিক মাহবুবুর আলম হাওলাদারকে শনাক্ত করা গেলেও আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গত সপ্তাহেও এশাসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানের নামে ১ হাজার ১০০ কেজি ‘খাট’ এসেছে। বিমানবন্দরে চালান জব্দ করা হলেও মালিকদের গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেই।
উদ্যোগ থাকার কথাও নয়। প্রচলিত প্রবচনে বলা হয়েছে, ‘মাছের মাথা পচন ধরলে সে মাছ আর খাওয়া যায় না।’ সম্ভবত আমাদের সমাজব্যবস্থার মাথায় পচন ধরেছে। তাই অনৈতিকতার জয়-জয়কার চারদিকে।
আমরা মনে করি, এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এখনো সময় আছে। তবে প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং আইনের কঠোরতম প্রয়োগের। এর বাইরে কোনো ওষুধে কাজ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। আমরা চাইব সরকার নিশ্চয়ই আমাদের পরামর্শের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেবে এবং দেশ ও জাতিকে মাদকমুক্ত করে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে।